ঢাকা , মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খেলাপি ঋণ আদায়ে নিলামে উঠছে এস আলমের সম্পদ

  • পোস্ট হয়েছে : ১২:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪
  • 28

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: রাষ্ট্রায়াত্ব জনতা ব্যাংক এস আলম গ্রুপের কাছ থেকে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য গ্রুপটির অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের জামানত সম্পত্তি নিলাম করার ঘোষণা দিয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের মেয়াদে এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তবে এ প্রথমবারের মতো একটি ব্যাংক গ্রুপটির একটি কোম্পানির বন্ধক রাখা সম্পদ নিলামে ওঠানোর পদক্ষেপ নিল।

জনতা ব্যাংক জানিয়েছে, গত ০১ নভেম্বর পত্রিকায় নিলাম সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আগামী ২০ নভেম্বরকে নিলামের তারিখ ঘোষণা করেছে ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষ।

জনতা ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে এস আলম গ্রুপের ১৮৬০ শতাংশ জমি, যার বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ৩৫৮ কোটি টাকা। এ দাম পাওনা টাকার চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ কম।

ব্যাংকটি জানিয়েছে, এ সম্পত্তি বিক্রি করে খেলাপি ঋণ পুরোপুরি আদায় করা সম্ভব নয়। বকেয়া বাকি টাকা আদায়ে আরও আইনি পদক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে। অর্থঋণ আদালত আইনের ১২(৩) ধারা অনুযায়ী ব্যাংক মামলা করার আগেই জামানতের সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা আদায় সম্ভব। এস আলম গ্রুপের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন শিল্প কাঁচামাল, বাণিজ্যিক পণ্য এবং নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসায় জড়িত ছিল।

২০১২ সালে সাধারণ বীমা ভবনে অবস্থিত জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রাম কর্পোরেট শাখা থেকে গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন প্রাথমিকভাবে ৬৫০ কোটি টাকা ঋণ নেয়। এ ঋণ ২০২১ সাল পর্যন্ত সুদে আসলে মোট এক হাজার ৭০ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৬১৭.৪৭ কোটি টাকা পিএডি (পেমেন্ট এগেইনস্ট ডকুমেন্ট), ২২৩.১৮ কোটি টাকা এলটিআর (ট্রাস্ট রিসিপ্ট) ঋণ এবং ২২৯.৯৯ কোটি টাকা সিসি হাইপো ঋণ।

সুদাসল মিলিয়ে ঋণের পরিমাণ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)-এর কার্যালয় জানিয়েছিল, গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিকা না মেনে ঋণসীমা অতিক্রম করে অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছে।

তৎকালীন সিএজি মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঋণ প্রদানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত ঋণ ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা লঙ্ঘন করা হয়েছে। নিরীক্ষা চলাকালে এ ঋণ সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে অর্থ বিভাগের তৎকালীন সিনিয়র সচিব (পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর) আব্দুর রউফ তালুকদার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীরের কাছে চিঠি পাঠায় সিএজি অফিস।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘উপরোক্ত বিষয়ে তাগিদপত্র প্রেরণ করা হলেও অদ্যাবধি জবাব পাওয়া যায়নি।’ আর নিরীক্ষা সুপারিশে বলা হয়, ‘অনিয়মের সাথে জড়িতদের দায় নির্ধারণসহ ঋণের টাকা জরুরি ভিত্তিতে আদায় করা আবশ্যক।’কিন্তু শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসাবে এস আলমের দাপট ছিল অপ্রতিরোধ্য। যে কারণে সিএজি’র প্রতিবেদনের কোন গুরুত্বই দেয়নি সংশ্লিষ্টরা।

বিজনেস আওয়ার/ ০৪ নভেম্বর/ এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

খেলাপি ঋণ আদায়ে নিলামে উঠছে এস আলমের সম্পদ

পোস্ট হয়েছে : ১২:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: রাষ্ট্রায়াত্ব জনতা ব্যাংক এস আলম গ্রুপের কাছ থেকে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য গ্রুপটির অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের জামানত সম্পত্তি নিলাম করার ঘোষণা দিয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের মেয়াদে এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তবে এ প্রথমবারের মতো একটি ব্যাংক গ্রুপটির একটি কোম্পানির বন্ধক রাখা সম্পদ নিলামে ওঠানোর পদক্ষেপ নিল।

জনতা ব্যাংক জানিয়েছে, গত ০১ নভেম্বর পত্রিকায় নিলাম সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আগামী ২০ নভেম্বরকে নিলামের তারিখ ঘোষণা করেছে ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষ।

জনতা ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে এস আলম গ্রুপের ১৮৬০ শতাংশ জমি, যার বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ৩৫৮ কোটি টাকা। এ দাম পাওনা টাকার চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ কম।

ব্যাংকটি জানিয়েছে, এ সম্পত্তি বিক্রি করে খেলাপি ঋণ পুরোপুরি আদায় করা সম্ভব নয়। বকেয়া বাকি টাকা আদায়ে আরও আইনি পদক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে। অর্থঋণ আদালত আইনের ১২(৩) ধারা অনুযায়ী ব্যাংক মামলা করার আগেই জামানতের সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা আদায় সম্ভব। এস আলম গ্রুপের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন শিল্প কাঁচামাল, বাণিজ্যিক পণ্য এবং নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসায় জড়িত ছিল।

২০১২ সালে সাধারণ বীমা ভবনে অবস্থিত জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রাম কর্পোরেট শাখা থেকে গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন প্রাথমিকভাবে ৬৫০ কোটি টাকা ঋণ নেয়। এ ঋণ ২০২১ সাল পর্যন্ত সুদে আসলে মোট এক হাজার ৭০ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৬১৭.৪৭ কোটি টাকা পিএডি (পেমেন্ট এগেইনস্ট ডকুমেন্ট), ২২৩.১৮ কোটি টাকা এলটিআর (ট্রাস্ট রিসিপ্ট) ঋণ এবং ২২৯.৯৯ কোটি টাকা সিসি হাইপো ঋণ।

সুদাসল মিলিয়ে ঋণের পরিমাণ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)-এর কার্যালয় জানিয়েছিল, গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিকা না মেনে ঋণসীমা অতিক্রম করে অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছে।

তৎকালীন সিএজি মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঋণ প্রদানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত ঋণ ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা লঙ্ঘন করা হয়েছে। নিরীক্ষা চলাকালে এ ঋণ সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে অর্থ বিভাগের তৎকালীন সিনিয়র সচিব (পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর) আব্দুর রউফ তালুকদার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীরের কাছে চিঠি পাঠায় সিএজি অফিস।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘উপরোক্ত বিষয়ে তাগিদপত্র প্রেরণ করা হলেও অদ্যাবধি জবাব পাওয়া যায়নি।’ আর নিরীক্ষা সুপারিশে বলা হয়, ‘অনিয়মের সাথে জড়িতদের দায় নির্ধারণসহ ঋণের টাকা জরুরি ভিত্তিতে আদায় করা আবশ্যক।’কিন্তু শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসাবে এস আলমের দাপট ছিল অপ্রতিরোধ্য। যে কারণে সিএজি’র প্রতিবেদনের কোন গুরুত্বই দেয়নি সংশ্লিষ্টরা।

বিজনেস আওয়ার/ ০৪ নভেম্বর/ এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: