বিশেষ প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় এবি ব্যাংকের ঋণ জটিলতা নিরসনের পথে অনেকটাই এগিয়েছে আমান ফিড কোম্পানি লিমিটেড। এবি ব্যাংককে ঋণের প্রথম কিস্তি দেয়ার পরও বিশেষ মহলের ইন্ধনে নিলাম তোলার কারণে আমান ফিড কর্তৃপক্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আমান গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মো: রবিউল হক বলেন, আমরা এবি ব্যাংকের ঋনের কিস্তি দেয়ার পরও নিলাম তোলা হয়। এরপর আদালতের কাছে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছে মাননীয় আদালত। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন দুই পক্ষকে ডেকে সমাধান দিবে। আদালত কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়িত্ব দেয়ার কারণে নিলামের সকল প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে এবি বাংকের ঋণ জটিলতা অনেকটাই সমাধানের দিকে এগোচ্ছে। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে কোম্পানি পূর্বের স্থগিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করবে বলে ও তিনি জানান।
জানা যায়, এর আগে গত জানুয়ারি মাসে আমান ফিড কোম্পানি ব্যাংকের মোট পাওনার প্রথম কিস্তি ২০ কোটি টাকা পরিশোধ করে । তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আমান ফিড একটি মৌলভিত্তি সম্পন্ন ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানি। কোভিড -১৯ মন্দা সময়েও কোম্পানিটি ভালো মুনাফা করেছে। পাশাপাশি শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে কোম্পানির পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি বেড়েছে। কোম্পানিটি একই খাতের অন্য কোম্পানির তুলানায় বেশি মুনাফাও করছে।
আমান ফিডের চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’২০) শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.৮৯ টাকা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ০.৮৫ টাকা।
কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’২০) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.৭৭ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে মুনাফা হয়েছিল ০.৭৫ টাকা।
এদিকে কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর’২০) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১.৬৬ টাকা। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল ১.৬০ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির সর্বশেষ ৩ প্রান্তিকে আগের চেয়ে মুনাফা বেশি হয়েছে।
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) হয়েছে ৩৫.১৪ টাকা। আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩৩.৩৯ টাকা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৬.৪৬ টাকায়।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পরে নিয়মিত মুনাফা বেড়েছে আমান ফিডের। কোম্পানিটির ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যেখানে ৩০ কোটি ৫৬ লাখ টাকার নিট মুনাফা করেছিল, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকায়। এরমধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে কোম্পানিটি।
২০১৫ সালে তালিকাভুক্তির সময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছিল ৫ টাকা ৭ পয়সা। যা পরবর্তীতে ২০১৫-১৬ করোনা মহামারির কারণে ৩ টাকা ৭৫ পয়সা ইপিএস হয়েছে। যা একই খাতের অন্য কোম্পানিগুলোর মুনাফার তুলনামুলুক বিচারে অনেক ভালো।
এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর ১৯) কোম্পানিটির ২০ কোটি ৩৯ লাখ টাকার নিট মুনাফা হয়েছে। এ হিসেবে ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৬০ পয়সা।
ভালো মুনাফার পাশাপাশি আমান ফিড নিয়মিত শেয়ারহোল্ডারদের ভালো লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। ২০১৫ সালে তালিকাভুক্তির প্রথম বছরে কোম্পানিটি ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়। এরপরে ২০১৬ সালে নগদ ৩০ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৩০ শতাংশ এবং ২০১৮ সালেও ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়। তবে দেশের সার্বিক ব্যবসার মন্দাবস্থার কারণে ২০১৯ সালে ১২.৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে। একই খাতের ন্যাশনাল ফিড কোম্পানি ২০১৯ সালে মাত্র ১ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। লভ্যাংশ বিবেচনায়ও আমান ফিড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অন্যান্য খাতের অন্য কোম্পানির চেয়ে তুলনামূলক বিচারে এগিয়ে রয়েছে।
উল্লেখ্য, করোনা মহামারির সময়েও আমান ফিড সরকারী কোন প্রনোদনা ব্যতিরেকেই নিয়মিত ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। সকল পর্যায়ের কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের পূর্ণ বেতন প্রদান ও কোন কর্মকর্তা ছাটাই না করেই চলমান রেখেছে কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম। এর ফলে কোম্পানি করোনা মহামারিতেও ভলো উদ্দীপনা নিয়ে ব্যবসা করছে বলে কোম্পনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ ব্যাপারে আমান ফিডের চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার শংকর কুমার বলেন, আমাদের পরিচালনা পর্ষদ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ভবিষৎ পরিকল্পনায় অগ্রগামী আগামীতে খুব অল্প সময়েই এই খাতে “মার্কেট লিডার ” হিসাবে আবির্ভূত হবে। এমতাবস্থায় সকলকে সজাগ দৃষ্টি রেখে নেতিবাচক কোনো সংবাদে প্ররোচিত না হয়ে সরাসরি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার বিশেষ অনুরোধ জানায়।
এন/বিজনেস আওয়ার/২৭/০২/২০২১