ঢাকা , রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হেফাজতকে সামলাতে ভিন্ন কৌশলে সরকার

  • পোস্ট হয়েছে : ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ এপ্রিল ২০২১
  • 1

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরের ঘটনার পর হেফাজত ইস্যুতে কিছুটা সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছিল ক্ষমতাসীনরা। মাদ্রাসা শিক্ষার সনদের স্বীকৃতিসহ কওমি মাদ্রাসাকে নানা সুবিধাও দিয়েছিল সরকার। বলতে গেলে হেফাজতের সঙ্গে কিছুটা সখ্যতা গড়ে ওঠে সরকারের। সেই পথে হেঁটে গত সাত বছর হেফাজতকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছিল। তবে, গতবছর শেষ দিকে দেশের কয়েকটি স্থানে জাতির জনকের মুর‌্যাল স্থাপনকে কেন্দ্র করে হেফাজত ফের সক্রিয় হয়। তখনও ধৈর্য দেখিয়ে ও কৌশলী হয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখা যায় সরকারকে।

তবে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে হেফাজত তাণ্ডবের পর কঠোর অবস্থান নেয় প্রশাসন। হেফাজতে ইসলামকে মোকাবিলায় এবার কৌশলী হয়েছে সরকার। অতীতের সমঝোতার কৌশল থেকে কিছুটা সরেও এসেছে। দেখিয়েছে কঠোরতা। দলটিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে তাদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ওপর ভর করতে চায় আওয়ামী লীগ। তাণ্ডবে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনি পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি হেফাজতের জ্বালাও-পোড়াও ও ভাংচুরের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতনও করতে চায় সরকার।

আওয়ামী লীগের একাধিক সুত্র জানিয়েছে, সরকারি দল চায় অবৈধ আর্থিক সুবিধা গ্রহণ, বিলাসী জীবন, ব্যক্তিগত জীবনে অনৈতিক আচরণ ইত্যাদি ইস্যুতে হেফাজতের দায়িত্বশীলদের আসল চরিত্র উন্মোচিত হোক। নারী কেলেঙ্কারির ঘটনার জের ধরে মামুনুল হকের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা দলটির নৈতিক দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন সরকারি দলের নেতারা। এ ছাড়া হেফাজত সমর্থক রফিকুল ইসলাম মাদানীর মোবাইলে অশ্লীল ভিডিওচিত্র এবং নারীঘটিত ইস্যু বেরিয়ে আসায় হেফাজত নেতাদের সম্পর্কে ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে নতুন বার্তা যাবে বলে আওয়ামী লীগ মনে করে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হেফাজত ইসলামের আমির-মহাসচিবসহ ৫৪ নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। একইসঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি পুনর্বিবেচনার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন হেফাজতের আন্দোলন দমানোর বড় কৌশল হিসেবে এবার এ দুটো বিষয়ও কাজ করবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, স্থানীয় জনগণের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী গণ্ডগোল বাঁধিয়ে রাখার জন্য ভূমি অফিসের সব কাগজ পুড়িয়ে দিয়েছে হেফাজত। তারা আন্দোলনের নামে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা ইসলাম সমর্থন করে না। মামুনুল হকের চরিত্র আপনাতেই বেরিয়ে এসেছে। সরকারকে কিছু করতে হয়নি। তবে, আমাদের কাজ হবে হেফাজতের নাশকতা ও কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলো মানুষকে জানানো। ইসলামের নামে নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড যারা করে তারা ইসলামের ধারক-বাহক হতে পারে না। আমরা চাই দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ জানুক কাদের উস্কানিতে তাদের শিশু-সন্তানরা কথিত জেহাদের নামে রাস্তায় নেমে অন্ধকার জীবনের দিকে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য বেছে বেছে সরকারি স্থাপনার ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। তাদের কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক হলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার প্রশ্ন আসতো। তাদের তো কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। তারা যেটা করছে পুরোটাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। আইনের যথাযথ প্রয়োগ করেই তাদের মোকাবিলা করা হবে।

এর আগে গত ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ধর্মের নামে অধর্মের কাজ জনগণ কখনও মেনে নেবে না। এ ধরনের অপকর্মে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

বিজনেস আওয়ার/১১ এপ্রিল, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

হেফাজতকে সামলাতে ভিন্ন কৌশলে সরকার

পোস্ট হয়েছে : ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ এপ্রিল ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরের ঘটনার পর হেফাজত ইস্যুতে কিছুটা সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছিল ক্ষমতাসীনরা। মাদ্রাসা শিক্ষার সনদের স্বীকৃতিসহ কওমি মাদ্রাসাকে নানা সুবিধাও দিয়েছিল সরকার। বলতে গেলে হেফাজতের সঙ্গে কিছুটা সখ্যতা গড়ে ওঠে সরকারের। সেই পথে হেঁটে গত সাত বছর হেফাজতকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছিল। তবে, গতবছর শেষ দিকে দেশের কয়েকটি স্থানে জাতির জনকের মুর‌্যাল স্থাপনকে কেন্দ্র করে হেফাজত ফের সক্রিয় হয়। তখনও ধৈর্য দেখিয়ে ও কৌশলী হয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখা যায় সরকারকে।

তবে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে হেফাজত তাণ্ডবের পর কঠোর অবস্থান নেয় প্রশাসন। হেফাজতে ইসলামকে মোকাবিলায় এবার কৌশলী হয়েছে সরকার। অতীতের সমঝোতার কৌশল থেকে কিছুটা সরেও এসেছে। দেখিয়েছে কঠোরতা। দলটিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে তাদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ওপর ভর করতে চায় আওয়ামী লীগ। তাণ্ডবে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনি পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি হেফাজতের জ্বালাও-পোড়াও ও ভাংচুরের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতনও করতে চায় সরকার।

আওয়ামী লীগের একাধিক সুত্র জানিয়েছে, সরকারি দল চায় অবৈধ আর্থিক সুবিধা গ্রহণ, বিলাসী জীবন, ব্যক্তিগত জীবনে অনৈতিক আচরণ ইত্যাদি ইস্যুতে হেফাজতের দায়িত্বশীলদের আসল চরিত্র উন্মোচিত হোক। নারী কেলেঙ্কারির ঘটনার জের ধরে মামুনুল হকের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা দলটির নৈতিক দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন সরকারি দলের নেতারা। এ ছাড়া হেফাজত সমর্থক রফিকুল ইসলাম মাদানীর মোবাইলে অশ্লীল ভিডিওচিত্র এবং নারীঘটিত ইস্যু বেরিয়ে আসায় হেফাজত নেতাদের সম্পর্কে ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে নতুন বার্তা যাবে বলে আওয়ামী লীগ মনে করে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হেফাজত ইসলামের আমির-মহাসচিবসহ ৫৪ নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। একইসঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি পুনর্বিবেচনার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন হেফাজতের আন্দোলন দমানোর বড় কৌশল হিসেবে এবার এ দুটো বিষয়ও কাজ করবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, স্থানীয় জনগণের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী গণ্ডগোল বাঁধিয়ে রাখার জন্য ভূমি অফিসের সব কাগজ পুড়িয়ে দিয়েছে হেফাজত। তারা আন্দোলনের নামে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা ইসলাম সমর্থন করে না। মামুনুল হকের চরিত্র আপনাতেই বেরিয়ে এসেছে। সরকারকে কিছু করতে হয়নি। তবে, আমাদের কাজ হবে হেফাজতের নাশকতা ও কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলো মানুষকে জানানো। ইসলামের নামে নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড যারা করে তারা ইসলামের ধারক-বাহক হতে পারে না। আমরা চাই দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ জানুক কাদের উস্কানিতে তাদের শিশু-সন্তানরা কথিত জেহাদের নামে রাস্তায় নেমে অন্ধকার জীবনের দিকে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য বেছে বেছে সরকারি স্থাপনার ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। তাদের কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক হলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার প্রশ্ন আসতো। তাদের তো কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। তারা যেটা করছে পুরোটাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। আইনের যথাযথ প্রয়োগ করেই তাদের মোকাবিলা করা হবে।

এর আগে গত ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ধর্মের নামে অধর্মের কাজ জনগণ কখনও মেনে নেবে না। এ ধরনের অপকর্মে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

বিজনেস আওয়ার/১১ এপ্রিল, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: