সেনবাগ থানার রাত্রি কালিন মোবাইল ডিউটি। সারা দিন রোজা, বিভিন্ন কর্ম ব্যাস্থতায় শরিরটা খুব ক্লান্ত। রাত আড়াইটা বাজে ৯৯৯ ফোন মাধ্যমে জানতে পারি কারো মুরগী চুরি করে নিয়ে গেছে। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আলামত হিসাবে একটা পায়জামা ও ওড়নার অংশ তারকাঁটাতারে আটকানো দেখতে পাই।
আশপাশে খোজাখুজিরে একটি ঘরের সামনে রক্তের সন্ধান পাই। তারপর ঘরে প্রবেশ দুইজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে খুঁজে পেয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করি। তখন একজনের শরিরের মুরগির পালক থাকায় সন্দেহ হয়। তাদের কঠিনভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে ফ্রিজের ভিতর হতে দুটি মুরগী ও কিছু ডিম উদ্ধার করি।
উৎসুক জনতা দুজনকে মারার জন্য তেড়ে আসলেও আমি তাদেরকে শান্ত করি। মেয়ে দুটিকে দেখে আমার খুব মায়া হয়। তারা পেশাদার চোর নয়, বয়স অল্প, অভাবের তাড়নায় হয়তো এই কাজটি করেছে। আমি তাদেরকে খুব করে বুঝালে তারা নিজের ভুল স্বীকার করে। আর কোনদিন এই কাজ করবে না বলে আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করে।
তাদের নিষ্পাপ চাহনী দেখে আমার খুব মায়া হয়। বারবার মনে হচ্ছিল, তাদেরকে কিভাবে এসব থেকে ফেরানো যায়। যার প্রাথমিক ফল স্বরুপ দুজনকে দুটি ঈদ জামা ও দু’টি মুরগি কিনে দিই। অনুশোচনা ও শোধরানোর আবেগ মাখা সেই চোখগুলোতে তখন নতুন আশার আলো দেখতে পাই।
নিজেকে শুধরে নেবার প্রত্যয় মাখানো সেই আবেগে নিজেকে জড়াতে পেরে আজ নিজেকে কিছুটা হলেও ধন্য মনে হচ্ছে। সত্যি বলতে এই আবেগ স্বর্গীয়। আর সর্গীয় ও তৃপ্তিহীন এমন আবাগে নিজেকে বারবার জড়াতে ও মাখাতে চাই।
লেখক- তারিকুর রহমান, উপপরিদর্শক বাংলাদেশ পুলিশ।
বিজনেস আওয়ার/২০ মে, ২০২১/এ