ঢাকা , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক অর্থায়নের সুদহার নির্ধারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

  • পোস্ট হয়েছে : ০৪:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুন ২০২১
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থা থেকে লাইবর (লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফারড রেট) হার প্রত্যাহারের পর স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক অর্থায়নের সুদহার নির্ধারণ বিষয়ে নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার (২১ জুন) কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী বা অনুমোদিত (অথরাইজড) ডিলার ব্যাংকগুলোর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এ বিষয়ে ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর একটি খসড়া নীতিমালা জারি করা হয়েছিল। সে সময় অংশীজনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করে বিভিন্ন পরামর্শ ও মতামত নেওয়া হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে লাইবর ব্যবস্থা প্রত্যাহারের পূর্বে এ বিষয়ক নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করেছে।

যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে বেঞ্চমার্ক হার হিসেবে লাইবরের প্রয়োগ ২০২১ সাল থেকে প্রত্যাহার করা হবে। লাইবর এ সূচক ঘোষণা সম্পূর্ণরূপে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে প্রত্যাহার করা হবে। তবে ২০২২ সালের পরবর্তীতে অর্থায়নের সুদহার নির্ধারণে লাইবরের পরিবর্তে নতুন বেঞ্চমার্ক হারের প্রয়োগ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। একইসঙ্গে লাইবর প্রত্যাহারের পূর্বে লাইবরভিত্তিতে গৃহীত সব ধরনের অর্থায়নের সুদ নতুন বেঞ্চমার্ক রেটে স্থানান্তর করতে হবে।

বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী, স্বল্পমেয়াদি অর্থায়নে ৬ মাসভিত্তিক লাইবরের সঙ্গে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ মার্কআপ যুক্ত করে বার্ষিক সুদহার নির্ধারিত হয়। সার্কুলারে লাইবরের পাশাপাশি যে মুদ্রায় অর্থায়ন করা হবে সে মুদ্রায় প্রযোজ্য বেঞ্চমার্ক হারের সঙ্গে নির্দেশিত মার্কআপ যুক্ত করে রফতানি বিল ডিসকাউন্টিং কিংবা মেয়াদপূর্তির আগেই রফতানি মূল্য প্রত্যাবাসনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিমুক্ত বেঞ্চমার্ক রেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে মার্কআপ ৩ দশমিক ৫০ শতাংশের ওপর বার্ষিক ২ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে ঝুঁকি প্রিমিয়াম যোগ করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

নতুন নীতিমালায় ৬ মাসের নির্ধারিত মেয়াদের পরিবর্তে অর্থায়নের সময়কালের ভিত্তিতে বেঞ্চমার্ক হার প্রয়োগের সুবিধা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি মেয়াদভিত্তিক (যেমন- ৩ মাস/৬ মাস মেয়াদি) বেঞ্চমার্ক হারের অনুপস্থিতিতে রফতানি বিলের বিপরীতে অগ্রিমমূল্য পরিশোধের তারিখের পূর্বের সংশ্লিষ্ট সময়কালের কম্পাউন্ডিং পদ্ধতিতে আগাম সুদহার হিসাবায়ন করা যাবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি শরীয়াহভিত্তিক অর্থায়নে প্রচলিত ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক হার প্রয়োগ করা যাবে।

খসড়া নীতিমালায় বায়ার্স/সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় গৃহীত স্বল্পমেয়াদি আমদানি অর্থায়নের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। আমদানি বাণিজ্যেও অর্থায়নের ক্ষেত্রে মেয়াদভিত্তিক (যেমন- ৩ মাস/৬ মাস মেয়াদি) বেঞ্চমার্ক হারের অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সময়কালের জন্য কম্পাউন্ডিং পদ্ধতিতে বকেয়াভিত্তিক সুদহার হিসাবায়ন করা যাবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে।

একইসঙ্গে লাইবর প্রত্যাহারকালীন সময়ের পূর্বের ভিত্তিতে গৃহীত ঋণ বিদেশি ঋণদাতার সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে মুদ্রাভিত্তিক বেঞ্চমার্ক রেটে উক্ত ঋণ রূপান্তর করা যাবে। নীতিমালায় লাইবর রহিতকরণের সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হওয়ার পরবর্তীতে লাইবরভিত্তিক অর্থায়ন ব্যবস্থা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীতিমালাটি জারির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এতে লিবর ব্যবস্থা প্রত্যাহার পরবর্তী ভবিষ্যৎ অনুসৃত পন্থা নির্ধারণ সহজ হবে।

বিজনেস আওয়ার/২১ জুন, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক অর্থায়নের সুদহার নির্ধারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

পোস্ট হয়েছে : ০৪:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুন ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থা থেকে লাইবর (লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফারড রেট) হার প্রত্যাহারের পর স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক অর্থায়নের সুদহার নির্ধারণ বিষয়ে নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার (২১ জুন) কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী বা অনুমোদিত (অথরাইজড) ডিলার ব্যাংকগুলোর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এ বিষয়ে ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর একটি খসড়া নীতিমালা জারি করা হয়েছিল। সে সময় অংশীজনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করে বিভিন্ন পরামর্শ ও মতামত নেওয়া হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে লাইবর ব্যবস্থা প্রত্যাহারের পূর্বে এ বিষয়ক নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করেছে।

যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে বেঞ্চমার্ক হার হিসেবে লাইবরের প্রয়োগ ২০২১ সাল থেকে প্রত্যাহার করা হবে। লাইবর এ সূচক ঘোষণা সম্পূর্ণরূপে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে প্রত্যাহার করা হবে। তবে ২০২২ সালের পরবর্তীতে অর্থায়নের সুদহার নির্ধারণে লাইবরের পরিবর্তে নতুন বেঞ্চমার্ক হারের প্রয়োগ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। একইসঙ্গে লাইবর প্রত্যাহারের পূর্বে লাইবরভিত্তিতে গৃহীত সব ধরনের অর্থায়নের সুদ নতুন বেঞ্চমার্ক রেটে স্থানান্তর করতে হবে।

বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী, স্বল্পমেয়াদি অর্থায়নে ৬ মাসভিত্তিক লাইবরের সঙ্গে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ মার্কআপ যুক্ত করে বার্ষিক সুদহার নির্ধারিত হয়। সার্কুলারে লাইবরের পাশাপাশি যে মুদ্রায় অর্থায়ন করা হবে সে মুদ্রায় প্রযোজ্য বেঞ্চমার্ক হারের সঙ্গে নির্দেশিত মার্কআপ যুক্ত করে রফতানি বিল ডিসকাউন্টিং কিংবা মেয়াদপূর্তির আগেই রফতানি মূল্য প্রত্যাবাসনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিমুক্ত বেঞ্চমার্ক রেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে মার্কআপ ৩ দশমিক ৫০ শতাংশের ওপর বার্ষিক ২ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে ঝুঁকি প্রিমিয়াম যোগ করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

নতুন নীতিমালায় ৬ মাসের নির্ধারিত মেয়াদের পরিবর্তে অর্থায়নের সময়কালের ভিত্তিতে বেঞ্চমার্ক হার প্রয়োগের সুবিধা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি মেয়াদভিত্তিক (যেমন- ৩ মাস/৬ মাস মেয়াদি) বেঞ্চমার্ক হারের অনুপস্থিতিতে রফতানি বিলের বিপরীতে অগ্রিমমূল্য পরিশোধের তারিখের পূর্বের সংশ্লিষ্ট সময়কালের কম্পাউন্ডিং পদ্ধতিতে আগাম সুদহার হিসাবায়ন করা যাবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি শরীয়াহভিত্তিক অর্থায়নে প্রচলিত ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক হার প্রয়োগ করা যাবে।

খসড়া নীতিমালায় বায়ার্স/সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় গৃহীত স্বল্পমেয়াদি আমদানি অর্থায়নের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। আমদানি বাণিজ্যেও অর্থায়নের ক্ষেত্রে মেয়াদভিত্তিক (যেমন- ৩ মাস/৬ মাস মেয়াদি) বেঞ্চমার্ক হারের অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সময়কালের জন্য কম্পাউন্ডিং পদ্ধতিতে বকেয়াভিত্তিক সুদহার হিসাবায়ন করা যাবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে।

একইসঙ্গে লাইবর প্রত্যাহারকালীন সময়ের পূর্বের ভিত্তিতে গৃহীত ঋণ বিদেশি ঋণদাতার সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে মুদ্রাভিত্তিক বেঞ্চমার্ক রেটে উক্ত ঋণ রূপান্তর করা যাবে। নীতিমালায় লাইবর রহিতকরণের সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হওয়ার পরবর্তীতে লাইবরভিত্তিক অর্থায়ন ব্যবস্থা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীতিমালাটি জারির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এতে লিবর ব্যবস্থা প্রত্যাহার পরবর্তী ভবিষ্যৎ অনুসৃত পন্থা নির্ধারণ সহজ হবে।

বিজনেস আওয়ার/২১ জুন, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: