ঢাকা , শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিতর্কিত আমজাদ হোসেনের সাউথ বাংলায় আমানত সুরক্ষিত নয়, বিনিয়োগকারীদের অর্থ?

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং কোম্পানির কেলেঙ্কারীর হোতা এসএম আমজাদ হোসেন নামে-বেনামে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের দুই শাখা থেকে অর্থ সরিয়েছেন। ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে টাকা তোলার পাশাপাশি কর্মচারীদের নামে তিনি ঋণ নিয়েছেন। যার মতো ব্যক্তি এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালক পদে থাকলে আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষিত নয় বলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কিন্তু সেই ব্যাংকটিকে শেয়ারবাজারের সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা তোলার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আমানত যেখানে সুরক্ষিত নয়, সেখানে বিনিয়োগকারীদের অর্থ কিভাবে নিরাপদে থাকবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

গত ৯ মে বিএসইসির ৭৭৩তম কমিশন সভায় ব্যাংকটির আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এর আগে এসএম আমজাদ হোসেনের মালিকানাধীন খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তবে এর আগেই নানা বিতর্কের সৃষ্টি করে। অতিরঞ্জিত মুনাফা দেখিয়ে তালিকাভুক্ত সেই কোম্পানিটি সর্বশেষ অর্থবছরে হাস্যকর ০.২৫% লভ্যাংশ দিয়ে এখন শেয়ারবাজারের ‘বি’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। কয়েক বছর ধরে লোকসানে কোম্পানিটি এর আগে ছিল সর্বনিম্ন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে। এবার তারই মালিকানাধীন সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক শেয়ারবাজার থেকে টাকা নিচ্ছে।

২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় খুলনা প্রিন্টিং। যে কোম্পানিটি কৃত্রিম বিক্রয় ও মুনাফা দেখিয়ে শেয়ারবাজার থেকে ৪০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। কোম্পানিটি ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে লোকসানে রয়েছে।

সাউথ বাংলা ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এতে আমজাদ হোসেনের একচ্ছত্র আধিপত্য চলছে। ফলে জনগণের আমানতে চলা ব্যাংকটি এখন ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

আরও পড়ুন….
বিতর্কিত খুলনা প্রিন্টিংয়ের পর সাউথ বাংলা ব্যাংক

সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের ব্যাংক হিসাব জব্দ, লেনদেন স্থগিত

এস এম আমজাদ হোসেন রাজধানীর কোনো শাখায় ঋণ অনিয়ম না করে বেছে নিয়েছেন এসবিএসি ব্যাংকের খুলনা ও কাটাখালী শাখাকে। তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলনা ও কাটাখালীকেন্দ্রিক। বিএফআইইউ এর এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে খুলনায় অবস্থিত এ দুই শাখা পরিদর্শন শেষে বিএফআইইউর কর্মকর্তারা প্রতিবেদনটি তৈরি করেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিবেদনটি ইতিমধ্যে দুদকে পাঠানো হয়েছে।

এস এম আমজাদ হোসেন খুলনা বিল্ডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক। প্রতিষ্ঠানটির বাকি ৪৯ শতাংশ শেয়ার তাঁর স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের নামে। ২০১৬ সালের ১ জুন এসবিএসি ব্যাংকের খুলনা শাখায় প্রতিষ্ঠানটির নামে ঋণ আবেদন করা হয়। পরদিনই ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন হয়। পরে ঋণসীমা বাড়িয়ে ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা করা হয়।

নথিপত্রে খুলনা বিল্ডার্সের ব্যবসার ধরন হিসেবে নির্মাণ ও আমদানি-রপ্তানির কথা বলা হয়েছে। তবে খুলনার যে ঠিকানা ব্যবহার করে ঋণ নেওয়া হয়েছে, সেখানে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। আর ব্যাংকের নথিতে খুলনা বিল্ডার্সের ঢাকার গোডাউনে ৫০ কোটি টাকার মালামাল রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকটির খুলনা শাখার কর্মকর্তারা বিএফআইইউর পরিদর্শক দলকে জানিয়েছেন, শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশে গোডাউনে রাখা মালামাল সম্পর্কে ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

বিএফআইইউর প্রতিবেদন বলছে, এটি নামসর্বস্ব কাগুজে প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে আমানতকারীদের ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন আমজাদ হোসেন।

এদিকে এসবিএসি ব্যাংকের খুলনা শাখা থেকে ২০১৮ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি ৯ ব্যক্তির নামে ২২ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এর বিপরীতে ৫ কোটি টাকা আমানত দেখানো হয়। অর্থাৎ স্থায়ী আমানতের ৪৫০ শতাংশের বেশি টাকা তুলে নেওয়া হয়। এই ৫ কোটি টাকা আমানতের জোগান দেওয়া হয় সাউদার্ন ফুড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে, যেটির চেয়ারম্যান হলেন আমজাদের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন, আর ভাই এস এম আবুল হোসেন প্রতিনিধি হিসেবে আছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মচারীদের ব্যবহার করে নানাভাবে লেনদেন করে সুবিধা নেন এস এম আমজাদ হোসেন।

এসব নিয়ে জানতে চাইলে এস এম আমজাদ হোসেন বলেন, ‘খুলনা বিল্ডার্স দুটি ভবন নির্মাণ করেছে, যার ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে। ব্যাংকের টাকা পরিশোধ হয়ে যাচ্ছে। আমার শেয়ারের বিপরীতে এ ঋণ নেওয়া হয়েছে। আর যাঁদের ঋণ নেওয়ার কথা বলছেন, তাঁরা আমার প্রতিষ্ঠানে ৩৫ থেকে ৪০ বছর ধরে চাকরি করছেন। তাঁরা কেন ঋণ নিলেন, আমি জানি না।’ এসব ঋণ পরিশোধ হয়ে গেছে বলে তিনি দাবি করেন।

বিজনেস আওয়ার/১৫ জুলাই, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বিতর্কিত আমজাদ হোসেনের সাউথ বাংলায় আমানত সুরক্ষিত নয়, বিনিয়োগকারীদের অর্থ?

পোস্ট হয়েছে : ০৫:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং কোম্পানির কেলেঙ্কারীর হোতা এসএম আমজাদ হোসেন নামে-বেনামে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের দুই শাখা থেকে অর্থ সরিয়েছেন। ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে টাকা তোলার পাশাপাশি কর্মচারীদের নামে তিনি ঋণ নিয়েছেন। যার মতো ব্যক্তি এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালক পদে থাকলে আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষিত নয় বলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কিন্তু সেই ব্যাংকটিকে শেয়ারবাজারের সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা তোলার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আমানত যেখানে সুরক্ষিত নয়, সেখানে বিনিয়োগকারীদের অর্থ কিভাবে নিরাপদে থাকবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

গত ৯ মে বিএসইসির ৭৭৩তম কমিশন সভায় ব্যাংকটির আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এর আগে এসএম আমজাদ হোসেনের মালিকানাধীন খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তবে এর আগেই নানা বিতর্কের সৃষ্টি করে। অতিরঞ্জিত মুনাফা দেখিয়ে তালিকাভুক্ত সেই কোম্পানিটি সর্বশেষ অর্থবছরে হাস্যকর ০.২৫% লভ্যাংশ দিয়ে এখন শেয়ারবাজারের ‘বি’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। কয়েক বছর ধরে লোকসানে কোম্পানিটি এর আগে ছিল সর্বনিম্ন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে। এবার তারই মালিকানাধীন সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক শেয়ারবাজার থেকে টাকা নিচ্ছে।

২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় খুলনা প্রিন্টিং। যে কোম্পানিটি কৃত্রিম বিক্রয় ও মুনাফা দেখিয়ে শেয়ারবাজার থেকে ৪০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। কোম্পানিটি ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে লোকসানে রয়েছে।

সাউথ বাংলা ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এতে আমজাদ হোসেনের একচ্ছত্র আধিপত্য চলছে। ফলে জনগণের আমানতে চলা ব্যাংকটি এখন ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

আরও পড়ুন….
বিতর্কিত খুলনা প্রিন্টিংয়ের পর সাউথ বাংলা ব্যাংক

সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের ব্যাংক হিসাব জব্দ, লেনদেন স্থগিত

এস এম আমজাদ হোসেন রাজধানীর কোনো শাখায় ঋণ অনিয়ম না করে বেছে নিয়েছেন এসবিএসি ব্যাংকের খুলনা ও কাটাখালী শাখাকে। তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলনা ও কাটাখালীকেন্দ্রিক। বিএফআইইউ এর এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে খুলনায় অবস্থিত এ দুই শাখা পরিদর্শন শেষে বিএফআইইউর কর্মকর্তারা প্রতিবেদনটি তৈরি করেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিবেদনটি ইতিমধ্যে দুদকে পাঠানো হয়েছে।

এস এম আমজাদ হোসেন খুলনা বিল্ডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক। প্রতিষ্ঠানটির বাকি ৪৯ শতাংশ শেয়ার তাঁর স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের নামে। ২০১৬ সালের ১ জুন এসবিএসি ব্যাংকের খুলনা শাখায় প্রতিষ্ঠানটির নামে ঋণ আবেদন করা হয়। পরদিনই ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন হয়। পরে ঋণসীমা বাড়িয়ে ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা করা হয়।

নথিপত্রে খুলনা বিল্ডার্সের ব্যবসার ধরন হিসেবে নির্মাণ ও আমদানি-রপ্তানির কথা বলা হয়েছে। তবে খুলনার যে ঠিকানা ব্যবহার করে ঋণ নেওয়া হয়েছে, সেখানে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। আর ব্যাংকের নথিতে খুলনা বিল্ডার্সের ঢাকার গোডাউনে ৫০ কোটি টাকার মালামাল রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকটির খুলনা শাখার কর্মকর্তারা বিএফআইইউর পরিদর্শক দলকে জানিয়েছেন, শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশে গোডাউনে রাখা মালামাল সম্পর্কে ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

বিএফআইইউর প্রতিবেদন বলছে, এটি নামসর্বস্ব কাগুজে প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে আমানতকারীদের ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন আমজাদ হোসেন।

এদিকে এসবিএসি ব্যাংকের খুলনা শাখা থেকে ২০১৮ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি ৯ ব্যক্তির নামে ২২ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এর বিপরীতে ৫ কোটি টাকা আমানত দেখানো হয়। অর্থাৎ স্থায়ী আমানতের ৪৫০ শতাংশের বেশি টাকা তুলে নেওয়া হয়। এই ৫ কোটি টাকা আমানতের জোগান দেওয়া হয় সাউদার্ন ফুড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে, যেটির চেয়ারম্যান হলেন আমজাদের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন, আর ভাই এস এম আবুল হোসেন প্রতিনিধি হিসেবে আছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মচারীদের ব্যবহার করে নানাভাবে লেনদেন করে সুবিধা নেন এস এম আমজাদ হোসেন।

এসব নিয়ে জানতে চাইলে এস এম আমজাদ হোসেন বলেন, ‘খুলনা বিল্ডার্স দুটি ভবন নির্মাণ করেছে, যার ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে। ব্যাংকের টাকা পরিশোধ হয়ে যাচ্ছে। আমার শেয়ারের বিপরীতে এ ঋণ নেওয়া হয়েছে। আর যাঁদের ঋণ নেওয়ার কথা বলছেন, তাঁরা আমার প্রতিষ্ঠানে ৩৫ থেকে ৪০ বছর ধরে চাকরি করছেন। তাঁরা কেন ঋণ নিলেন, আমি জানি না।’ এসব ঋণ পরিশোধ হয়ে গেছে বলে তিনি দাবি করেন।

বিজনেস আওয়ার/১৫ জুলাই, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: