মূল ব্যবসায় উন্নতি করতে না পারলেও শেয়ারবাজারের মাধ্যমে মুনাফায় এগোচ্ছে বীমা কোম্পানিগুলো। যা সম্ভব হচ্ছে শেয়ারবাজারের চলমান ধারাবাহিক উত্থানের কারনে। তবে এই বাজারে মুনাফার পাশাপাশি লোকসানের ঝুকিঁও আছে। তাই সবসময় বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা অর্জনের বর্তমান ধারা যে ভবিষ্যতেও থাকবে, তা নিশ্চিত করা কঠিন। তাই মূল ব্যবসার বাহিরে গিয়ে শেয়ার ব্যবসা থেকে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারন করা ঠিক হবে না বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
চলতি বছরের প্রথমার্ধের ব্যবসায় বীমা কোম্পানিগুলোর মুনাফায় ব্যাপক উত্থানের কারন অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, প্রধান কারন হিসেবে রয়েছে শেয়ার ব্যবসা। প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের মুনাফায় ৩৪২ শতাংশ উত্থানের পেছনে যেমন প্রধান কারন হিসেবে রয়েছে শেয়ার ব্যবসা, একইভাবে রয়েছে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের ৯০০ শতাংশ উত্থানের ক্ষেত্রেও।
গত কয়েক মাস ধরে শেয়ারবাজার টানা উত্থানের মধ্যে রয়েছে। এরমধ্যে গত ৪ মাসের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইএক্স) মূল্যসূচক বা মানদণ্ড বেড়েছে ২৭ শতাংশ। যা দেশের শেয়ারবাজারকে সর্বোচ্চ অবস্থানে নিয়ে গেছে। সূচকের সঙ্গে সঙ্গে সিকিউরিটিজের দর বা বাজার মূলধনও ইতিহাসের সর্বোচ্চতে উঠে এসেছে। এই উত্থান বীমা কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে সক্ষম হয়েছে।
প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন ২১) নিট মুনাফা হয়েছে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যার ৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বা ৬৪ শতাংশই এসেছে শেয়ার ব্যবসা থেকে।
শেয়ারবাজার থেকে এই মুনাফা করতে গিয়ে অস্বাভাবিক লেনদেন করেছে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ। কোম্পানিটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হলেও নিয়মিত ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে ডে ট্রেডারের ভূমিকা পালন করেছে। যে কোম্পানিটি থেকে নিয়মিত ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে চলতি বছরের প্রথমার্ধে ২১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয় এবং একইসময়ে ২১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকার বিক্রি করেছে বলে নগদ প্রবাহ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে কোম্পানি সচিব ঝর্ণা পারুলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ভালো বলতে পারবেন। তাই সিএফওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে সিএফও আরিফ হোসেনের ব্যক্তিগত ফোনে চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আরও পড়ুন…..
অতিরিক্ত ট্যাক্সের শাস্তির কবলে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স
প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের মূল ব্যবসায় লোকসান হলেও শেয়ারবাজার দিয়ে বড় মুনাফা
কোম্পানিটির অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব অনুযায়ি, চলতি বছরের প্রথমার্ধে গ্রোস প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ২৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। যার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ১৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এ হিসেবে প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে ৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার বা ২২.০৮ শতাংশ।
তবে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ৯০০ শতাংশ। যা এই ২২ শতাংশ প্রিমিয়াম আয় বৃদ্ধি দিয়ে সম্ভব হয়নি। এতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে শেয়ারবাজার থেকে বড় ক্যাপিটাল গেইন অর্জন।
দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ২.৫৮ টাকা। যার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ১ কোটি ৫ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.২৬ টাকা। এ হিসাবে মুনাফা বেড়েছে ৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বা ৯০০ শতাংশ।
এর পেছনে প্রধান কারন হিসেবে রয়েছে শেয়ার ব্যবসা থেকে বড় মুনাফা। কোম্পানিটির চলতি বছরের প্রথমার্ধে শেয়ার ব্যবসায় সিকিউরিটিজ বিক্রি থেকে (রিয়ালাইজড গেইন) মুনাফা হয়েছে ৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। যার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ে লোকসান হয়েছিল ১৮ লাখ টাকা।
শেয়ারবাজার থেকে এমন মুনাফা পাওয়ায় বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স থেকে। এ কোম্পানিটির গত ৩০ জুন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ দাড়িঁয়েছে ২৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। যার পরিমাণ গত ৩১ ডিসেম্বর ছিল ১৭ কোটি টাকা।
আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের প্রথমার্ধের মুনাফায় বড় উত্থানের কারন হিসেবে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে গ্রোস প্রিমিয়াম আয়, নিট প্রিমিয়াম ইনকাম ও শেয়ার বিক্রি থেকে রিয়ালাইজড গেইনকে উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য ৪০ কোটি ৬৬ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সে ১০১ কোটি ৭ লাখ টাকার নিট সম্পদ রয়েছে। যাতে কোম্পানিটির ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাড়িঁয়েছে ২৪.৮৫ টাকায়। যে কোম্পানিটির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের দর এখন ৯৪.৫০ টাকায় উঠে এসেছে। যেটির দর গত বছরের এপ্রিলে ৩৬ টাকা ছিল।
বিজনেস আওয়ার/০৮ আগস্ট, ২০২১/আরএ
7 thoughts on “প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের নিট মুনাফার ৬৪ শতাংশ এসেছে শেয়ার ব্যবসা থেকে”