ঢাকা , শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দূর্বল ব্যবসার রবিকে শেয়ারবাজারে এনে কারণ খোঁজার সিদ্ধান্ত নিল বিএসইসি

  • পোস্ট হয়েছে : ০৯:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ অগাস্ট ২০২১
  • 82

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : রবি আজিয়াটা ব্যবসায় দূর্বল জেনেও কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এখন সেই কমিশনই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের দোহাই দিয়ে কোম্পানিটির উন্নয়নে দূর্বলতা খুঁজে বের করতে বিশেষ নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাহলে কাদের স্বার্থে এমন একটি দূর্বল কোম্পানিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রশ্ন উঠেছে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।

মোবাইল অপারেটর হিসেবে রবি আজিয়াটা দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি হলেও প্রথম অপারেটর গ্রামীণফোনের ধারেকাছেও নেই। কোম্পানিটির টার্নওভার হলেও মুনাফা হয় না। যে কারনে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয় নামমাত্র। যাতে কোম্পানিটির ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন হয় না। এমন একটি কোম্পানিকে শেয়ারবাজার থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ উত্তোলনের অনুমোদনের ১ বছরের কম সময়ের মধ্যেই দূর্বলতা খোঁজার সিদ্ধান্ত নিল বিএসইসি। অথচ কোম্পানিটির দূর্বলতা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগেও ছিল। তারপরেও সেটিকে তালিকাভুক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল কমিশন।

শেয়ারবাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ৪ পয়সার ইপিএস নিয়ে সর্বোচ্চ শেয়ার ইস্যুর জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদন পায় রবি আজিয়াটা। কোম্পানিটি অভিহিত মূল্যে অর্থাৎ প্রতিটি ১০ টাকায় ৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৪টি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪০ টাকা সংগ্রহ করে। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ শেয়ার ইস্যু।

অথচ কোম্পানিটির ব্যবসা ছিল খুবই নাজুক। যে কোম্পানিটিতে আর না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন।

আইপিও পূর্ব ৪ হাজার ৭১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের রবির ২০১৯ সালে টার্নওভার হয় ৭ হাজার ৪৮১ কোটি ১৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এই টার্নওভার থেকে সব ব্যয় শেষে নিট মুনাফা হয় ১৬ কোটি ৯০ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। যা শেয়ারপ্রতি হিসেবে মাত্র ৪ পয়সা।

এই কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে আসার আগে থেকেই দূর্বল সত্ত্বেও আইপিও অনুমোদন দিয়েছিল কমিশন। তা জানা সত্ত্বেও তাতে আপত্তি তোলেনি। অথচ সেই কোম্পানিটির দূর্বলতা খুজে বের করতে এখন বিশেষ নিরীক্ষা করবে কমিশন। যে কারনে একটি দূর্বল কোম্পানিকে জেনেশুনে শেয়ারবাজারে আনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, রবি আজিয়াটাকে নিয়ে যে বিশেষ ধরনের নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে, তা কোম্পানিটির উন্নয়নে করা হবে। যাতে বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে কোম্পানিটি সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে পারে। এ কোম্পানিতে যেহেতু বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ রয়েছে, সেহেতু তাদের স্বার্থ রক্ষা করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির কোথায় ঘাটতি রয়েছে তা বের করা হবে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।

এই কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ৩ মাসে (এপ্রিল’২১-জুন’২১) শেয়ারপ্রতি সমন্বিত মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.০৯ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে সমন্বিত মুনাফা (ইপিএস) হয়েছিল ০.১৩ টাকা। এ হিসেবে কোম্পানিটির মুনাফা ০.০৪ টাকা বা ৩১ শতাংশ কমেছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, শেয়ারবাজারের অন্যান্য কোম্পানি যেভাবে মুনাফা করছে, ঠিক সেভাবে মুনাফা করতে পারছে না রবি। এর পেছনে রবির কোনো জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে, যে কারণে কোম্পানিটি আর্থিকভাবে ভালো পারফরমেন্স করতে পারছে না। কেনো রবি ভালো মুনাফা করতে পারছে না, আমরা সেটা খুঁজে কোম্পানিটিকে সাহায্য করতে চাই। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন…….

রবির বিরুদ্ধে কমিশনে পাওনাদারের অভিযোগ

গ্রামীণফোনের থেকে নিট সম্পদে বেশি সত্ত্বেও ঋণে জর্জরিত রবি

আইপিওকালীন জিপির ২৪৩ কোটি টাকার মূলধনে মুনাফা ছিল ৩০৬ কোটি, রবির ৪৭১৪ কোটিতে?

ইতিহাসের সর্বনিম্ন ইপিএস নিয়ে সর্বোচ্চ শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন পেয়েছে রবি

গ্রামীণফোনের ৯ মাসে ইপিএস ১৯.৮৯ টাকা, রবির বছরে ৪ পয়সা

রবি শেয়ারপ্রতি ১ টাকা পাওয়ারও যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি

গ্রামীণফোনের থেকে ২৬৬১ কোটি টাকার বেশি সম্পদ নিয়েও ধুকছে রবি
জিপির অর্ধেকের বেশি টার্নওভার রবির, কিন্তু মুনাফা ১ শতাংশেরও কম
সবচেয়ে বড় মূলধনী ন্যাশনাল ব্যাংক আস্থার তলানিতে, এসেছে আরও দূর্বল ব্যবসার রবি

রবি জর্জরিত ৪৪৫ মামলায় : ঝুঁকি কয়েক হাজার কোটি টাকা ক্ষতির

বিজনেস আওয়ার/২৫ আগস্ট, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

দূর্বল ব্যবসার রবিকে শেয়ারবাজারে এনে কারণ খোঁজার সিদ্ধান্ত নিল বিএসইসি

পোস্ট হয়েছে : ০৯:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ অগাস্ট ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : রবি আজিয়াটা ব্যবসায় দূর্বল জেনেও কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এখন সেই কমিশনই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের দোহাই দিয়ে কোম্পানিটির উন্নয়নে দূর্বলতা খুঁজে বের করতে বিশেষ নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাহলে কাদের স্বার্থে এমন একটি দূর্বল কোম্পানিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রশ্ন উঠেছে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।

মোবাইল অপারেটর হিসেবে রবি আজিয়াটা দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি হলেও প্রথম অপারেটর গ্রামীণফোনের ধারেকাছেও নেই। কোম্পানিটির টার্নওভার হলেও মুনাফা হয় না। যে কারনে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয় নামমাত্র। যাতে কোম্পানিটির ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন হয় না। এমন একটি কোম্পানিকে শেয়ারবাজার থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ উত্তোলনের অনুমোদনের ১ বছরের কম সময়ের মধ্যেই দূর্বলতা খোঁজার সিদ্ধান্ত নিল বিএসইসি। অথচ কোম্পানিটির দূর্বলতা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগেও ছিল। তারপরেও সেটিকে তালিকাভুক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল কমিশন।

শেয়ারবাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ৪ পয়সার ইপিএস নিয়ে সর্বোচ্চ শেয়ার ইস্যুর জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদন পায় রবি আজিয়াটা। কোম্পানিটি অভিহিত মূল্যে অর্থাৎ প্রতিটি ১০ টাকায় ৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৪টি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪০ টাকা সংগ্রহ করে। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ শেয়ার ইস্যু।

অথচ কোম্পানিটির ব্যবসা ছিল খুবই নাজুক। যে কোম্পানিটিতে আর না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন।

আইপিও পূর্ব ৪ হাজার ৭১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের রবির ২০১৯ সালে টার্নওভার হয় ৭ হাজার ৪৮১ কোটি ১৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এই টার্নওভার থেকে সব ব্যয় শেষে নিট মুনাফা হয় ১৬ কোটি ৯০ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। যা শেয়ারপ্রতি হিসেবে মাত্র ৪ পয়সা।

এই কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে আসার আগে থেকেই দূর্বল সত্ত্বেও আইপিও অনুমোদন দিয়েছিল কমিশন। তা জানা সত্ত্বেও তাতে আপত্তি তোলেনি। অথচ সেই কোম্পানিটির দূর্বলতা খুজে বের করতে এখন বিশেষ নিরীক্ষা করবে কমিশন। যে কারনে একটি দূর্বল কোম্পানিকে জেনেশুনে শেয়ারবাজারে আনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, রবি আজিয়াটাকে নিয়ে যে বিশেষ ধরনের নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে, তা কোম্পানিটির উন্নয়নে করা হবে। যাতে বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে কোম্পানিটি সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে পারে। এ কোম্পানিতে যেহেতু বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ রয়েছে, সেহেতু তাদের স্বার্থ রক্ষা করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির কোথায় ঘাটতি রয়েছে তা বের করা হবে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।

এই কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ৩ মাসে (এপ্রিল’২১-জুন’২১) শেয়ারপ্রতি সমন্বিত মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.০৯ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে সমন্বিত মুনাফা (ইপিএস) হয়েছিল ০.১৩ টাকা। এ হিসেবে কোম্পানিটির মুনাফা ০.০৪ টাকা বা ৩১ শতাংশ কমেছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, শেয়ারবাজারের অন্যান্য কোম্পানি যেভাবে মুনাফা করছে, ঠিক সেভাবে মুনাফা করতে পারছে না রবি। এর পেছনে রবির কোনো জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে, যে কারণে কোম্পানিটি আর্থিকভাবে ভালো পারফরমেন্স করতে পারছে না। কেনো রবি ভালো মুনাফা করতে পারছে না, আমরা সেটা খুঁজে কোম্পানিটিকে সাহায্য করতে চাই। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন…….

রবির বিরুদ্ধে কমিশনে পাওনাদারের অভিযোগ

গ্রামীণফোনের থেকে নিট সম্পদে বেশি সত্ত্বেও ঋণে জর্জরিত রবি

আইপিওকালীন জিপির ২৪৩ কোটি টাকার মূলধনে মুনাফা ছিল ৩০৬ কোটি, রবির ৪৭১৪ কোটিতে?

ইতিহাসের সর্বনিম্ন ইপিএস নিয়ে সর্বোচ্চ শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন পেয়েছে রবি

গ্রামীণফোনের ৯ মাসে ইপিএস ১৯.৮৯ টাকা, রবির বছরে ৪ পয়সা

রবি শেয়ারপ্রতি ১ টাকা পাওয়ারও যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি

গ্রামীণফোনের থেকে ২৬৬১ কোটি টাকার বেশি সম্পদ নিয়েও ধুকছে রবি
জিপির অর্ধেকের বেশি টার্নওভার রবির, কিন্তু মুনাফা ১ শতাংশেরও কম
সবচেয়ে বড় মূলধনী ন্যাশনাল ব্যাংক আস্থার তলানিতে, এসেছে আরও দূর্বল ব্যবসার রবি

রবি জর্জরিত ৪৪৫ মামলায় : ঝুঁকি কয়েক হাজার কোটি টাকা ক্ষতির

বিজনেস আওয়ার/২৫ আগস্ট, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: