ঢাকা , রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেয়ারবাজারের জন্য কাল হয়ে দাড়িঁয়েছে ব্যাংক খাত

  • পোস্ট হয়েছে : ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ মার্চ ২০২০
  • 7

রেজোয়ান আহমেদ : নিজেদের দুরাবস্থার সাথে সাথে শেয়ারবাজারকে পেছনে টেনে ধরে রেখেছে ব্যাংক খাত। শেয়ারবাজারের সবচেয়ে বড় এই খাতের শেয়ারগুলোর দর গত ২ বছরের ব্যবধানে গড়ে কমেছে ৩৯ শতাংশ। যেখানে প্রত্যেকটি ব্যাংকের শেয়ার দর ২ বছর আগের অবস্থানের থেকে নিচে নেমে এসেছে। ব্যাংক খাতের শেয়ারের এই পতন শেয়ারবাজারকে এগোতে দেয়নি।

দুই বছর আগে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ছিল ৫৮০০ পয়েন্ট। যা এখন কমে এসেছে ৪৪৬০ পয়েন্টে। অর্থাৎ সূচক কমেছে ১৩৪০ পয়েন্ট বা ২৩ শতাংশ। সূচকের এই পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ব্যাংক খাতের পতন। এছাড়া গত বছরের এবং গত সপ্তাহের শেয়ারবাজারের পতনে অগ্রণী ভূমিকা ছিল ব্যাংক খাতের।

দীর্ঘদিন ধরেই দেশে ব্যাংক খাতের দুরাবস্থা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে ব্যাংকের টাকা আত্মসাত হয়ে যাওয়ায় এই খাতের মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এছাড়া স্বজনপ্রীতি ও অব্যবস্থাপনা ব্যাংকের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যা প্রত্যক্ষভাবে শেয়ারবাজারেও নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে এবং রাখছে।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবীদ এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, শেয়ারবাজারের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ব্যাংক খাত। আর সেই ব্যাংক খাত কয়েক বছর ধরে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট ও খেলাপি ঋণের মাত্রা বেড়েছে। যাতে ব্যাংক খাতের ব্যবসায় যেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, একইভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ঠ হয়েছে। এতে করে ব্যাংকের শেয়ার তলানিতে চলে এসেছে। যার প্রভাব পুরো শেয়ারবাজারে পড়েছে।

দেখা গেছে, গত ২ বছর আগে তালিকাভুক্ত ৩০ ব্যাংকের গড় শেয়ার দর ছিল ২৯.৩৪ টাকা। যা চলতি বছরের ২ মার্চে নেমে এসেছে ১৭.৯৮ টাকায়। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর গড়ে শেয়ার দর কমেছে ১১.৩৬ টাকা বা ৩৯ শতাংশ। ব্যাংক খাতের এই পতন শেয়ারবাজারের উন্নতি হতে দেয়নি।

এদিকে গত ২ মাসেও ব্যাংক খাতের শেয়ারে বড় পতন হয়েছে। যাতে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরের গড় ১৯.৭০ টাকার শেয়ার এখন ১৭.৯৮ টাকায় অবস্থান করছে। অর্থাৎ গত ২ মাসে ব্যাংক খাতের গড়ে শেয়ার দর কমেছে ১.৭২ টাকা বা ৯ শতাংশ।

ব্যাংক খাতের এতই দুরাবস্থা যে, তালিকাভুক্ত ৩০ ব্যাংকেরই শেয়ার দর গত ২ বছরের ব্যবধানে কমেছে। একটি ব্যাংকেরও শেয়ার দর ২ বছর আগের অবস্থানে নেই। এই দুরাবস্থায় ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ৮টির বা ২৭ শতাংশের শেয়ার দর এখন অভিহিত মূল্যের নিচে।

এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে স্বল্পমেয়াদী আমানত সংগ্রহ করে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়। যা ঝুকিপূর্ণ ও ঠিক না। এতে ব্যাংক খাতের ব্যবসায় ঝুকিতে পড়েছে এবং মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আর এই নেতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারের অন্তরায় ভূমিকা রাখছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ি, তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি শেষে বাজার মূলধন ছিল ৬৪ হাজার ২৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে কমে এসেছে ৪৮ হাজার ৭২৯ কোটি ৩০ লাখ টাকায়। অর্থাৎ ২ বছরের ব্যবধানে ব্যাংকের শেয়ারের দাম কমেছে ১৫ হাজার ৫২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বা ২৪ শতাংশ। অথচ ২০১৯ সালেও এই খাত থেকে বাজার দরে ৬ হাজার ২৫৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার বোনাস শেয়ার দেওয়া হয়েছে। এসত্ত্বেও ব্যাংকের বাজার মূলধনে শোচণীয় অবস্থা হয়েছে।

বর্তমানে ব্যাংকেরসহ অনেক কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগযোগ্য হলেও তাতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের আগ্রহ নেই। অথচ ২০০৯-১০ সালে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা নিয়ে আগ্রাসী হয়ে উঠে ব্যাংকগুলো। ওইসময় ব্যাংকগুলো বিনিয়োগসীমার কয়েকগুণ পর্যন্ত বিনিয়োগ করে। যা শেয়ারবাজারকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে তুলে। অথচ এখন সেই বিনিয়োগসীমা ৪ ভাগের ১ ভাগে নামিয়ে আনার পরেও এবং শেয়ার দর তলানিতে থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করে না।

নিম্নে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর ২ বছর আগের এবং চলতি বছরের ২ মার্চের শেয়ার দর তুলে ধরা হল-

বিজনেস আওয়ার/০৪ মার্চ, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

One thought on “শেয়ারবাজারের জন্য কাল হয়ে দাড়িঁয়েছে ব্যাংক খাত

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

শেয়ারবাজারের জন্য কাল হয়ে দাড়িঁয়েছে ব্যাংক খাত

পোস্ট হয়েছে : ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ মার্চ ২০২০

রেজোয়ান আহমেদ : নিজেদের দুরাবস্থার সাথে সাথে শেয়ারবাজারকে পেছনে টেনে ধরে রেখেছে ব্যাংক খাত। শেয়ারবাজারের সবচেয়ে বড় এই খাতের শেয়ারগুলোর দর গত ২ বছরের ব্যবধানে গড়ে কমেছে ৩৯ শতাংশ। যেখানে প্রত্যেকটি ব্যাংকের শেয়ার দর ২ বছর আগের অবস্থানের থেকে নিচে নেমে এসেছে। ব্যাংক খাতের শেয়ারের এই পতন শেয়ারবাজারকে এগোতে দেয়নি।

দুই বছর আগে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ছিল ৫৮০০ পয়েন্ট। যা এখন কমে এসেছে ৪৪৬০ পয়েন্টে। অর্থাৎ সূচক কমেছে ১৩৪০ পয়েন্ট বা ২৩ শতাংশ। সূচকের এই পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ব্যাংক খাতের পতন। এছাড়া গত বছরের এবং গত সপ্তাহের শেয়ারবাজারের পতনে অগ্রণী ভূমিকা ছিল ব্যাংক খাতের।

দীর্ঘদিন ধরেই দেশে ব্যাংক খাতের দুরাবস্থা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে ব্যাংকের টাকা আত্মসাত হয়ে যাওয়ায় এই খাতের মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এছাড়া স্বজনপ্রীতি ও অব্যবস্থাপনা ব্যাংকের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যা প্রত্যক্ষভাবে শেয়ারবাজারেও নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে এবং রাখছে।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবীদ এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, শেয়ারবাজারের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ব্যাংক খাত। আর সেই ব্যাংক খাত কয়েক বছর ধরে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট ও খেলাপি ঋণের মাত্রা বেড়েছে। যাতে ব্যাংক খাতের ব্যবসায় যেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, একইভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ঠ হয়েছে। এতে করে ব্যাংকের শেয়ার তলানিতে চলে এসেছে। যার প্রভাব পুরো শেয়ারবাজারে পড়েছে।

দেখা গেছে, গত ২ বছর আগে তালিকাভুক্ত ৩০ ব্যাংকের গড় শেয়ার দর ছিল ২৯.৩৪ টাকা। যা চলতি বছরের ২ মার্চে নেমে এসেছে ১৭.৯৮ টাকায়। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর গড়ে শেয়ার দর কমেছে ১১.৩৬ টাকা বা ৩৯ শতাংশ। ব্যাংক খাতের এই পতন শেয়ারবাজারের উন্নতি হতে দেয়নি।

এদিকে গত ২ মাসেও ব্যাংক খাতের শেয়ারে বড় পতন হয়েছে। যাতে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরের গড় ১৯.৭০ টাকার শেয়ার এখন ১৭.৯৮ টাকায় অবস্থান করছে। অর্থাৎ গত ২ মাসে ব্যাংক খাতের গড়ে শেয়ার দর কমেছে ১.৭২ টাকা বা ৯ শতাংশ।

ব্যাংক খাতের এতই দুরাবস্থা যে, তালিকাভুক্ত ৩০ ব্যাংকেরই শেয়ার দর গত ২ বছরের ব্যবধানে কমেছে। একটি ব্যাংকেরও শেয়ার দর ২ বছর আগের অবস্থানে নেই। এই দুরাবস্থায় ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ৮টির বা ২৭ শতাংশের শেয়ার দর এখন অভিহিত মূল্যের নিচে।

এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে স্বল্পমেয়াদী আমানত সংগ্রহ করে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়। যা ঝুকিপূর্ণ ও ঠিক না। এতে ব্যাংক খাতের ব্যবসায় ঝুকিতে পড়েছে এবং মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আর এই নেতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারের অন্তরায় ভূমিকা রাখছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ি, তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি শেষে বাজার মূলধন ছিল ৬৪ হাজার ২৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে কমে এসেছে ৪৮ হাজার ৭২৯ কোটি ৩০ লাখ টাকায়। অর্থাৎ ২ বছরের ব্যবধানে ব্যাংকের শেয়ারের দাম কমেছে ১৫ হাজার ৫২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বা ২৪ শতাংশ। অথচ ২০১৯ সালেও এই খাত থেকে বাজার দরে ৬ হাজার ২৫৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার বোনাস শেয়ার দেওয়া হয়েছে। এসত্ত্বেও ব্যাংকের বাজার মূলধনে শোচণীয় অবস্থা হয়েছে।

বর্তমানে ব্যাংকেরসহ অনেক কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগযোগ্য হলেও তাতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের আগ্রহ নেই। অথচ ২০০৯-১০ সালে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা নিয়ে আগ্রাসী হয়ে উঠে ব্যাংকগুলো। ওইসময় ব্যাংকগুলো বিনিয়োগসীমার কয়েকগুণ পর্যন্ত বিনিয়োগ করে। যা শেয়ারবাজারকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে তুলে। অথচ এখন সেই বিনিয়োগসীমা ৪ ভাগের ১ ভাগে নামিয়ে আনার পরেও এবং শেয়ার দর তলানিতে থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করে না।

নিম্নে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর ২ বছর আগের এবং চলতি বছরের ২ মার্চের শেয়ার দর তুলে ধরা হল-

বিজনেস আওয়ার/০৪ মার্চ, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: