ঢাকা , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বপদেই থাকছেন খালেদা, নেতৃত্ব তারেকের হাতে

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জুলাই ২০২০
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দলের বর্তমান কমান্ডিং প্রক্রিয়া যেভাবে চলছে সেটাই বহাল থাকবে। চেয়ারপার্সন হিসেবে খালেদা জিয়া আমৃত্যু একই পদে থাকবেন। তবে কমান্ডিং ক্ষমতা পুরোটাই থাকবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে। তার নেতৃত্বে পর্যায়ক্রমে দলকে আরও শক্ত অবস্থানে নিতে নানামুখী উদ্যোগ নেবেন দলের চেয়ারপার্সন। এমন তথ্যই জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য।

বিএনপির একজন প্রভাবশালী ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আপাতত যেভাবে দল পরিচালিত হচ্ছে, সেটাই থাকবে বলে দৃশ্যমান। ম্যাডাম এখন পেছন থেকে দলকে পরামর্শ দেবেন। নিজের বয়স ও শারীরিক সক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে তার ছেলে তারেক রহমানের হাতেই থাকবে দল পরিচালনার ভার। তবে ভবিষ্যতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদটিকে আরও সুসমন্বয় করে নির্বাহী চেয়ারম্যান বা এ ধরনের অন্য কোনও পদ সৃষ্টি হতে পারে।

তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, বেগম জিয়া যতদিন বেঁচে আছেন, একই পদে থাকবেন। আর দলের সক্রিয় নেতৃত্ব থাকবে তারেক রহমানের কাছে। এখানে অন্য কেউ গুরুত্বপূর্ণ নয়। এর আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনীতিতে এসেছিলেন, কিন্তু বাস্তবতার কাছে গুরুত্ব পাননি। বেগম জিয়ার বয়স এখন পঁচাত্তর পার হচ্ছে, বিশ্বনেতৃত্বে এই বয়স কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি, ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার আগের দিন রাতে তারেক রহমানকে সহযোগিতা করতে গুলশানের অফিসে দলের স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যকে অনুরোধ করেন খালেদা জিয়া। এছাড়া দেশের বাইরে থেকে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক শিক্ষক ও সাংবাদিক নিয়মিত তাকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

দলের আরেকটি সূত্রের তথ্যমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর নির্বাচনের মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরুর আগে সব ঠিক থাকলেও জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতার আসনকেন্দ্রিক চাহিদা ও নির্বাচনি প্রচারণায় ফ্রন্টনেতাদের অনাগ্রহের বিষয়টি বিচলিত করেছে বিএনপির শীর্ষনেতৃত্বকে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিয়া পরিবারের কেউ অংশগ্রহণ না করলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সিদ্ধান্তে অনঢ় ছিলেন দলের হাইকমান্ড। আগামী দিনে বিদ্যমান কাঠামোর বাইরে নতুন ধরনের উদ্যোগ নেবে বিএনপি, এমন আলোচনা এখন দলের ভেতরে-বাইরে পরিষ্কার।

রাজনৈতিকভাবে শীর্ষনেতৃত্বকে নিয়ে ‘শক্ত অবস্থান’ তৈরিতে জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতার ব্যর্থতা রয়েছে বলে মনে করেন স্থায়ী কমিটির একজন প্রবীণ সদস্য। তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটির প্রথম তিন-চারজন জ্যেষ্ঠ সদস্যের নেতৃত্ব নিয়ে আর চিন্তা নেই। দলের পুরো হাল এখন তারেক রহমানের হাতে। গত আড়াই বছরে দলের সর্বস্তরে তার সরাসরি নির্দেশনা কাজে লেগেছে।

তারেক রহমান সুযোগ পেলেই পুরো সংগঠনকে যূথবদ্ধ করে ফেলবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, তারেক রহমান দল পরিচালনা করছেন। তিনি দেশে-বিদেশে এখন নতুনভাবে কাজ করছেন। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে তার সাংগঠনিক নেতৃত্ব প্রদান শুরু হয়েছিল। আপদকালীন তিনি দেশের বাইরে থাকলেও দলীয় নেতৃত্বের সর্বস্তরে তার সরাসরি নির্দেশনা কাজ করছে এখন।

এদিকে আগামী ১৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে জন্মদিন পালন করবেন না খালেদা জিয়া, এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র। ২০১৬ সাল থেকে ১৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে জন্মদিন উদযাপন বন্ধ রেখেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

বিএনপির উচ্চপর্যায় ও দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আগামী দিনে দলের নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক রূপরেখায় নতুনত্ব আনতে যাবতীয় বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি নিভৃতে বিএনপির নেতৃত্বে তার রাজনৈতিক উত্তরসূরির জন্য ‘মাঠ’ প্রস্তুতের কাজ করছেন। এ বিষয়ে ঘনিষ্ঠনেতাদের কানে প্রাথমিক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন কৌশলে।

বিজনেস আওয়ার/১২ জুলাই, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

স্বপদেই থাকছেন খালেদা, নেতৃত্ব তারেকের হাতে

পোস্ট হয়েছে : ১০:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জুলাই ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দলের বর্তমান কমান্ডিং প্রক্রিয়া যেভাবে চলছে সেটাই বহাল থাকবে। চেয়ারপার্সন হিসেবে খালেদা জিয়া আমৃত্যু একই পদে থাকবেন। তবে কমান্ডিং ক্ষমতা পুরোটাই থাকবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে। তার নেতৃত্বে পর্যায়ক্রমে দলকে আরও শক্ত অবস্থানে নিতে নানামুখী উদ্যোগ নেবেন দলের চেয়ারপার্সন। এমন তথ্যই জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য।

বিএনপির একজন প্রভাবশালী ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আপাতত যেভাবে দল পরিচালিত হচ্ছে, সেটাই থাকবে বলে দৃশ্যমান। ম্যাডাম এখন পেছন থেকে দলকে পরামর্শ দেবেন। নিজের বয়স ও শারীরিক সক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে তার ছেলে তারেক রহমানের হাতেই থাকবে দল পরিচালনার ভার। তবে ভবিষ্যতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদটিকে আরও সুসমন্বয় করে নির্বাহী চেয়ারম্যান বা এ ধরনের অন্য কোনও পদ সৃষ্টি হতে পারে।

তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, বেগম জিয়া যতদিন বেঁচে আছেন, একই পদে থাকবেন। আর দলের সক্রিয় নেতৃত্ব থাকবে তারেক রহমানের কাছে। এখানে অন্য কেউ গুরুত্বপূর্ণ নয়। এর আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনীতিতে এসেছিলেন, কিন্তু বাস্তবতার কাছে গুরুত্ব পাননি। বেগম জিয়ার বয়স এখন পঁচাত্তর পার হচ্ছে, বিশ্বনেতৃত্বে এই বয়স কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি, ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার আগের দিন রাতে তারেক রহমানকে সহযোগিতা করতে গুলশানের অফিসে দলের স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যকে অনুরোধ করেন খালেদা জিয়া। এছাড়া দেশের বাইরে থেকে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক শিক্ষক ও সাংবাদিক নিয়মিত তাকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

দলের আরেকটি সূত্রের তথ্যমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর নির্বাচনের মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরুর আগে সব ঠিক থাকলেও জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতার আসনকেন্দ্রিক চাহিদা ও নির্বাচনি প্রচারণায় ফ্রন্টনেতাদের অনাগ্রহের বিষয়টি বিচলিত করেছে বিএনপির শীর্ষনেতৃত্বকে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিয়া পরিবারের কেউ অংশগ্রহণ না করলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সিদ্ধান্তে অনঢ় ছিলেন দলের হাইকমান্ড। আগামী দিনে বিদ্যমান কাঠামোর বাইরে নতুন ধরনের উদ্যোগ নেবে বিএনপি, এমন আলোচনা এখন দলের ভেতরে-বাইরে পরিষ্কার।

রাজনৈতিকভাবে শীর্ষনেতৃত্বকে নিয়ে ‘শক্ত অবস্থান’ তৈরিতে জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতার ব্যর্থতা রয়েছে বলে মনে করেন স্থায়ী কমিটির একজন প্রবীণ সদস্য। তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটির প্রথম তিন-চারজন জ্যেষ্ঠ সদস্যের নেতৃত্ব নিয়ে আর চিন্তা নেই। দলের পুরো হাল এখন তারেক রহমানের হাতে। গত আড়াই বছরে দলের সর্বস্তরে তার সরাসরি নির্দেশনা কাজে লেগেছে।

তারেক রহমান সুযোগ পেলেই পুরো সংগঠনকে যূথবদ্ধ করে ফেলবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, তারেক রহমান দল পরিচালনা করছেন। তিনি দেশে-বিদেশে এখন নতুনভাবে কাজ করছেন। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে তার সাংগঠনিক নেতৃত্ব প্রদান শুরু হয়েছিল। আপদকালীন তিনি দেশের বাইরে থাকলেও দলীয় নেতৃত্বের সর্বস্তরে তার সরাসরি নির্দেশনা কাজ করছে এখন।

এদিকে আগামী ১৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে জন্মদিন পালন করবেন না খালেদা জিয়া, এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র। ২০১৬ সাল থেকে ১৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে জন্মদিন উদযাপন বন্ধ রেখেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

বিএনপির উচ্চপর্যায় ও দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আগামী দিনে দলের নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক রূপরেখায় নতুনত্ব আনতে যাবতীয় বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি নিভৃতে বিএনপির নেতৃত্বে তার রাজনৈতিক উত্তরসূরির জন্য ‘মাঠ’ প্রস্তুতের কাজ করছেন। এ বিষয়ে ঘনিষ্ঠনেতাদের কানে প্রাথমিক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন কৌশলে।

বিজনেস আওয়ার/১২ জুলাই, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: