ঢাকা , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিজের পাপ প্রকাশ করাও পাপ

  • পোস্ট হয়েছে : ০৩:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • 8

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : আল্লাহর একান্ত প্রিয় বান্দা নবী-রাসুলরা ছাড়া সাধারণত মানুষ মাত্রই ভুল করে। গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায়। এটি মানব জাতির স্বভাবগত বিষয়। ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক মানুষের থেকে কোনো না কোনো অপরাধ হয়েই যায়।
তবে মুমিনের দায়িত্ব হলো, গুনাহ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে তাওবা করে নেওয়া। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ মাত্রই গুনাহগার (অপরাধী)। আর গুনাহগারদের মধ্যে তাওবাহকারীরাই উত্তম। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৯৯)
গুনাহ বা পাপ হয়ে যাওয়ার পর মুমিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আছে। তা হলো, গুনাহ করে তা প্রচার করে বেড়ানো থেকে বিরত থাকা। গুনাহে লিপ্ত হওয়া যেমন অপরাধ, গুনাহ গোপন না রাখা আরো বড় অপরাধ। গুনাহ হয়ে যাওয়ার পর তাওবা করলে তা থেকে মাফ পাওয়ার আশা করা যায়। কিন্তু গুনাহ করে তা প্রচার করে বেড়ালে তা অমার্জনীয় অপরাধে পরিণত হয়।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার সব উম্মতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী এর ব্যতিক্রম। আর নিশ্চয়ই এটা বড়ই অন্যায় যে কোনো লোক রাতের বেলা অপরাধ করল, যা আল্লাহ গোপন রেখেছেন। কিন্তু সে সকালে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক, আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার ওপর আল্লাহর দেওয়া আবরণ খুলে ফেলল। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৯)

নাউজুবিল্লাহ, অথচ বর্তমানে আমরা আমাদের কোনো কার্যক্রম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাইরে রাখতে পছন্দ করি না। আমরা প্রতিদিন এমন অনেক কাজ করি, যেগুলো গুনাহের কাজ। কিন্তু সেগুলোকে স্মরণীয় করে রাখতে আমরা অহেতুক ছবি তোলার মতো আরেকটি গুনাহ করে বসি। তারপর তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সেই পাপের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিই। অথচ পাপে অনুতপ্ত হয়ে পাপ গোপন রাখার সুবাদেও মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মাফ করে দিতে পারেন।

সফওয়ান ইবনে মুহরিজ (রহ.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি ইবনে উমার (রা.)-কে জিজ্ঞেস করল, আপনি নাজওয়ার (কিয়ামতের দিন আল্লাহ ও তাঁর মুমিন বান্দার মধ্যে গোপন আলোচনা) ব্যাপারে রাসুল (সা.)-কে কী বলতে শুনেছেন? (বর্ণনাকারী বলেন) তিনি বলেছেন, তোমাদের এক ব্যক্তি তার প্রতিপালকের এত কাছাকাছি হবে যে তিনি তার ওপর তাঁর নিজস্ব আবরণ টেনে দিয়ে দুবার জিজ্ঞেস করবেন, তুমি এই এই কাজ করেছিলে? সে বলবে, হ্যাঁ। আবার তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তুমি এই এই কাজ করেছিলে? সে বলবে, হ্যাঁ। এভাবে তিনি তার স্বীকারোক্তি গ্রহণ করবেন। এরপর বলবেন, আমি দুনিয়াতে তোমার এগুলো লুকিয়ে রেখেছিলাম। আজ আমি তোমার এসব গুনাহ ক্ষমা করে দিলাম। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৭০)

সুবহানাল্লাহ, মহান আল্লাহ কতটা দয়ালু হলে তাঁর বান্দার পাপগুলোকে তিনি গোপনই রাখেন। এবং কিয়ামতের দিন মাফ করে দেন। কিন্তু বান্দা যদি তা নিজেই প্রচার করে দেয়, তাহলে তার আর সেই সুযোগ থাকে না।

তাই আমাদের দায়িত্ব হলো, প্রথমত সব ধরনের গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা। নিজের অনিচ্ছায় গুনাহ হয়ে গেলেও তার ওপর অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করা। গুনাহের কাজকে হালকা মনে না করা। কারণ আমরা অনেক গুনাহকে হালকা মনে করার কারণেই গুনাহ করে তা আবার বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করে বেড়াই।

বিজনেস আওয়ার/ ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২/ জে ভি

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

নিজের পাপ প্রকাশ করাও পাপ

পোস্ট হয়েছে : ০৩:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : আল্লাহর একান্ত প্রিয় বান্দা নবী-রাসুলরা ছাড়া সাধারণত মানুষ মাত্রই ভুল করে। গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায়। এটি মানব জাতির স্বভাবগত বিষয়। ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক মানুষের থেকে কোনো না কোনো অপরাধ হয়েই যায়।
তবে মুমিনের দায়িত্ব হলো, গুনাহ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে তাওবা করে নেওয়া। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ মাত্রই গুনাহগার (অপরাধী)। আর গুনাহগারদের মধ্যে তাওবাহকারীরাই উত্তম। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৯৯)
গুনাহ বা পাপ হয়ে যাওয়ার পর মুমিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আছে। তা হলো, গুনাহ করে তা প্রচার করে বেড়ানো থেকে বিরত থাকা। গুনাহে লিপ্ত হওয়া যেমন অপরাধ, গুনাহ গোপন না রাখা আরো বড় অপরাধ। গুনাহ হয়ে যাওয়ার পর তাওবা করলে তা থেকে মাফ পাওয়ার আশা করা যায়। কিন্তু গুনাহ করে তা প্রচার করে বেড়ালে তা অমার্জনীয় অপরাধে পরিণত হয়।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার সব উম্মতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী এর ব্যতিক্রম। আর নিশ্চয়ই এটা বড়ই অন্যায় যে কোনো লোক রাতের বেলা অপরাধ করল, যা আল্লাহ গোপন রেখেছেন। কিন্তু সে সকালে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক, আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার ওপর আল্লাহর দেওয়া আবরণ খুলে ফেলল। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৯)

নাউজুবিল্লাহ, অথচ বর্তমানে আমরা আমাদের কোনো কার্যক্রম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাইরে রাখতে পছন্দ করি না। আমরা প্রতিদিন এমন অনেক কাজ করি, যেগুলো গুনাহের কাজ। কিন্তু সেগুলোকে স্মরণীয় করে রাখতে আমরা অহেতুক ছবি তোলার মতো আরেকটি গুনাহ করে বসি। তারপর তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সেই পাপের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিই। অথচ পাপে অনুতপ্ত হয়ে পাপ গোপন রাখার সুবাদেও মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মাফ করে দিতে পারেন।

সফওয়ান ইবনে মুহরিজ (রহ.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি ইবনে উমার (রা.)-কে জিজ্ঞেস করল, আপনি নাজওয়ার (কিয়ামতের দিন আল্লাহ ও তাঁর মুমিন বান্দার মধ্যে গোপন আলোচনা) ব্যাপারে রাসুল (সা.)-কে কী বলতে শুনেছেন? (বর্ণনাকারী বলেন) তিনি বলেছেন, তোমাদের এক ব্যক্তি তার প্রতিপালকের এত কাছাকাছি হবে যে তিনি তার ওপর তাঁর নিজস্ব আবরণ টেনে দিয়ে দুবার জিজ্ঞেস করবেন, তুমি এই এই কাজ করেছিলে? সে বলবে, হ্যাঁ। আবার তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তুমি এই এই কাজ করেছিলে? সে বলবে, হ্যাঁ। এভাবে তিনি তার স্বীকারোক্তি গ্রহণ করবেন। এরপর বলবেন, আমি দুনিয়াতে তোমার এগুলো লুকিয়ে রেখেছিলাম। আজ আমি তোমার এসব গুনাহ ক্ষমা করে দিলাম। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৭০)

সুবহানাল্লাহ, মহান আল্লাহ কতটা দয়ালু হলে তাঁর বান্দার পাপগুলোকে তিনি গোপনই রাখেন। এবং কিয়ামতের দিন মাফ করে দেন। কিন্তু বান্দা যদি তা নিজেই প্রচার করে দেয়, তাহলে তার আর সেই সুযোগ থাকে না।

তাই আমাদের দায়িত্ব হলো, প্রথমত সব ধরনের গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা। নিজের অনিচ্ছায় গুনাহ হয়ে গেলেও তার ওপর অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করা। গুনাহের কাজকে হালকা মনে না করা। কারণ আমরা অনেক গুনাহকে হালকা মনে করার কারণেই গুনাহ করে তা আবার বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করে বেড়াই।

বিজনেস আওয়ার/ ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২/ জে ভি

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: