ঢাকা , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আনতে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকি রোধ জরুরী-আইসিএমএবি প্রেসিডেন্ট

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) এর প্রেসিডেন্ট মো: মামুনুর রশীদ (এফসিএমএ) বলেন, গত ১০ বছর দেশের অর্থনীতি ৬% এর বেশি হারে বেড়েছে ও নিয়মিত মাথাপিছু আয় বেড়েছে। যাতে করে আমাদের জিডিপি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। এই উন্নতির মধ্যেও আমরা শেয়ারবাজারে পিছিয়ে রয়েছি। এর পেছনে শেয়ারবাজারে আসার থেকে না আসা কোম্পানির প্রকৃত অর্থে রাজস্ব সুবিধা বেশি হওয়া অন্যতম কারন হিসাবে রয়েছে। এই সমস্যা কাটিয়ে তুলতে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকির রাস্তা বন্ধ করতে হবে।

রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিজনেস আওয়ার টোয়েন্টিফোর ডটকম’র উদ্যোগে “শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তির প্রতিবন্ধকতা ও সমাধানের উপায়” শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় তিনি এ কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমান উপস্থিত রয়েছেন।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করছেন বিজনেস আওয়ার টোয়েন্টিফোর ডটকমের উপদেষ্টা আকতার হোসেন সান্নামাত (এফসিএ) ও অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করছেন প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক ও প্রকাশক আমিরুল ইসলাম নয়ন।

মামুনুর রশীদ বলেন, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস শেয়ারবাজার হলেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। যা ২০২০ সালে বাংলাদেশে মোট অর্থায়নের মাত্র ০.০৭% শেয়ারবাজার থেকে অর্থায়নের তথ্যে খুব ভালো করেই উপলব্ধি করা যায়। যেখানে ৯৯.৯৩ অর্থায়ন করা হয়েছে ব্যাংক থেকে। ওই বছরে মোট অর্থায়নের মধ্যে ব্যাংক থেকে ১০ লাখ ৯৪ হাজার ৭ কোটি টাকা ও শেয়ারবাজার থেকে ৭৬৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল।

অথচ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে নতুন ইস্যুর অবস্থা ভালো। ওইসব দেশে ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে আসা কোম্পানির হার বেশি।

দেখা গেছে, ভারতে ২০২১ সালে ৫১টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ২৩টি বা ২৫ শতাংশ ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে এসেছে। তবে লেনদেনের প্রথমদিনেই ২৫টি বা ২৭ শতাংশ ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে গিয়েছিল। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে প্রথমদিন এবং ১ বছরের মধ্যে ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে যাওয়ার ইতিহাস খুবই কম। শেষ কবে এ জাতীয় ঘটনা ঘটেছে, তা মনে করতে পারাটা দূরহ।

এছাড়া বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে সিকিউরিটিজের বাজার দরের তুলনায় লভ্যাংশের (ডিভিডেন্ড ইল্ড) হারও বেশি। এছাড়া মুনাফার তুলনায় সিকিউরিটিজের দর (পিই রেশিও) কম। এ বিবেচনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

দেখা গেছে, বাংলাদেশে ডিভিডেন্ড ইল্ড ৩.০৬%। যা ভারত, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্স থেকে বেশি। যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে বাংলাদেশের থেকে কিছুটা এগিয়ে। এছাড়া ওইসব দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মুনাফার তুলনায় সিকিউরিটিজের দর কম। যেখানে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে পিই ১৫.৮৪।

এসবের পরেও বাংলাদেশের শেয়ারবাজার অনেক পিছিয়ে। এখনো বাংলাদেশের ভালো কোম্পানির উদ্যোক্তারা শেয়ারবাজারে আসতে চায় না। এক্ষেত্রে অবশ্য বেশ কিছু বিষয় অন্তরায় কাজ করে। যেসব কারনে অনেক ভালো কোম্পানির উদ্যোক্তারা এদিকে আসতে চায় না। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের তুলনায় ব্যাংক থেকে ঋণের ব্যয় কম একটি অন্যতম কারন।

আইসিএমএবি প্রেসিডেন্ট বলেন, শেয়ারবাজারে ‘এ’ ক্যাটাগরির জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হয়। কিন্তু ঋণের সুদ হার সর্বোচ্চ ৯%। অর্থাৎ শেয়ারবাজারের থেকে ঋণে খরচ কম। এছাড়া বড় কোম্পানিগুলো আরও কম সুদের হারে এবং খুব সহজেই ও দ্রুত ব্যাংক থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। অথচ শেয়ারবাজার থেকে অর্থায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। যাতে একটি কোম্পানির উদ্যোক্তা যে উদ্দেশ্যে টাকা সংগ্রহ করতে চায়, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যহ্যত হয়।

এদিকে শেয়ারবাজারে আসলে একটি কোম্পানির সকল মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে জানান তিনি। ফলে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায় শেয়ারবাজারে অতালিকাভুক্ত প্রতিযোগিদের দ্ধারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার শঙ্কা থাকে। এছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে যে ৭.৫০% কর সুবিধা দেওয়া হয়, প্রকৃতপক্ষে একটি অতালিকাভুক্ত কোম্পানি তারচেয়ে অনেক বেশি সুবিধা ভোগ করে থাকে। কারন অতালিকাভুক্ত কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মুনাফা অনেক কম দেখিয়ে আয়কর কম দেওয়ার সুযোগ নিতে পারে।

আয়করের ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির ব্যবধান থাকলেও ভ্যাটের ক্ষেত্রে সমান। এক্ষেত্রে একটি অতালিকাভুক্ত কোম্পানি ভ্যাট প্রদান ফাঁকি দিতে পারে। যেহেতু তালিকাভুক্ত কোম্পানির ন্যায় ওইসব কোম্পানিতে বিএসইসির মতো রেগুলেটর না থাকায় তদারকি কম হয়।

এরফলে প্রকৃতপক্ষে একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির থেকে অতালিকাভুক্ত কোম্পানি কর সুবিধা বেশি ভোগ করে করে বলে জানান তিনি। তারপরে আবার তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিভিন্ন নিয়ম-কানুন পরিপালন করতে অনেক ব্যয় হয়। এছাড়া উদ্যোক্তাদের গণমাধ্যমের অসহযোগিতা পেতে হয়। যার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ না।

তিনি বলেন, বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা/পরিচালকদেরকে ব্যক্তিগতভাবে ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারন করতে হয়। এক্ষেত্রে ৩০ শতাংশের বাধ্যবাধকতাও উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করে। কারন শেয়ারবাজারে এসেও যদি প্রয়োজনে শেয়ার বিক্রির সুযোগ না থাকে, তাহলে কেনো আসতে চাইবে। একজন উদ্যোক্তার টাকার প্রয়োজন পড়তেই পারে। এই সমস্যাটি বড় হয়ে দেখা দেয় ছোট পরিচালনা পর্ষদের কোম্পানিতে। যেমন ৫ জনের পর্ষদের পরিচালকদের সবাইকে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারনের নির্দেশনা পরিপালন করতে গিয়ে গড়ে ৬ শতাংশ করে সবসময় রাখতে হয়। এটা সহজ ব্যাপার না।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কম হওয়ার আরেকটি কারন অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংক নিস্ক্রিয়। দেশে ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক থাকলেও ৫-১০টি শেয়ারবাজরে ইসু আনে বলে জানান তিনি।

এই সমস্যা কাটিয়ে তুলতে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব যাচাই করতে হবে বলে জানান এই আইসিএমএবি প্রেসিডেন্ট। এই যাচাইয়ের মাধ্যমে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে স্বচ্ছতা আনতে হবে। এতে করে অনেক কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত হবে। কারন তখন তালিকাভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রকৃত কর সুবিধা পাওয়া যাবে।

বিজনেস আওয়ার/১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

One thought on “শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আনতে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকি রোধ জরুরী-আইসিএমএবি প্রেসিডেন্ট

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আনতে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকি রোধ জরুরী-আইসিএমএবি প্রেসিডেন্ট

পোস্ট হয়েছে : ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) এর প্রেসিডেন্ট মো: মামুনুর রশীদ (এফসিএমএ) বলেন, গত ১০ বছর দেশের অর্থনীতি ৬% এর বেশি হারে বেড়েছে ও নিয়মিত মাথাপিছু আয় বেড়েছে। যাতে করে আমাদের জিডিপি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। এই উন্নতির মধ্যেও আমরা শেয়ারবাজারে পিছিয়ে রয়েছি। এর পেছনে শেয়ারবাজারে আসার থেকে না আসা কোম্পানির প্রকৃত অর্থে রাজস্ব সুবিধা বেশি হওয়া অন্যতম কারন হিসাবে রয়েছে। এই সমস্যা কাটিয়ে তুলতে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকির রাস্তা বন্ধ করতে হবে।

রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিজনেস আওয়ার টোয়েন্টিফোর ডটকম’র উদ্যোগে “শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তির প্রতিবন্ধকতা ও সমাধানের উপায়” শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় তিনি এ কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমান উপস্থিত রয়েছেন।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করছেন বিজনেস আওয়ার টোয়েন্টিফোর ডটকমের উপদেষ্টা আকতার হোসেন সান্নামাত (এফসিএ) ও অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করছেন প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক ও প্রকাশক আমিরুল ইসলাম নয়ন।

মামুনুর রশীদ বলেন, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস শেয়ারবাজার হলেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। যা ২০২০ সালে বাংলাদেশে মোট অর্থায়নের মাত্র ০.০৭% শেয়ারবাজার থেকে অর্থায়নের তথ্যে খুব ভালো করেই উপলব্ধি করা যায়। যেখানে ৯৯.৯৩ অর্থায়ন করা হয়েছে ব্যাংক থেকে। ওই বছরে মোট অর্থায়নের মধ্যে ব্যাংক থেকে ১০ লাখ ৯৪ হাজার ৭ কোটি টাকা ও শেয়ারবাজার থেকে ৭৬৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল।

অথচ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে নতুন ইস্যুর অবস্থা ভালো। ওইসব দেশে ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে আসা কোম্পানির হার বেশি।

দেখা গেছে, ভারতে ২০২১ সালে ৫১টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ২৩টি বা ২৫ শতাংশ ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে এসেছে। তবে লেনদেনের প্রথমদিনেই ২৫টি বা ২৭ শতাংশ ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে গিয়েছিল। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে প্রথমদিন এবং ১ বছরের মধ্যে ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে যাওয়ার ইতিহাস খুবই কম। শেষ কবে এ জাতীয় ঘটনা ঘটেছে, তা মনে করতে পারাটা দূরহ।

এছাড়া বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে সিকিউরিটিজের বাজার দরের তুলনায় লভ্যাংশের (ডিভিডেন্ড ইল্ড) হারও বেশি। এছাড়া মুনাফার তুলনায় সিকিউরিটিজের দর (পিই রেশিও) কম। এ বিবেচনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

দেখা গেছে, বাংলাদেশে ডিভিডেন্ড ইল্ড ৩.০৬%। যা ভারত, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্স থেকে বেশি। যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে বাংলাদেশের থেকে কিছুটা এগিয়ে। এছাড়া ওইসব দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মুনাফার তুলনায় সিকিউরিটিজের দর কম। যেখানে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে পিই ১৫.৮৪।

এসবের পরেও বাংলাদেশের শেয়ারবাজার অনেক পিছিয়ে। এখনো বাংলাদেশের ভালো কোম্পানির উদ্যোক্তারা শেয়ারবাজারে আসতে চায় না। এক্ষেত্রে অবশ্য বেশ কিছু বিষয় অন্তরায় কাজ করে। যেসব কারনে অনেক ভালো কোম্পানির উদ্যোক্তারা এদিকে আসতে চায় না। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের তুলনায় ব্যাংক থেকে ঋণের ব্যয় কম একটি অন্যতম কারন।

আইসিএমএবি প্রেসিডেন্ট বলেন, শেয়ারবাজারে ‘এ’ ক্যাটাগরির জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হয়। কিন্তু ঋণের সুদ হার সর্বোচ্চ ৯%। অর্থাৎ শেয়ারবাজারের থেকে ঋণে খরচ কম। এছাড়া বড় কোম্পানিগুলো আরও কম সুদের হারে এবং খুব সহজেই ও দ্রুত ব্যাংক থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। অথচ শেয়ারবাজার থেকে অর্থায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। যাতে একটি কোম্পানির উদ্যোক্তা যে উদ্দেশ্যে টাকা সংগ্রহ করতে চায়, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যহ্যত হয়।

এদিকে শেয়ারবাজারে আসলে একটি কোম্পানির সকল মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে জানান তিনি। ফলে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায় শেয়ারবাজারে অতালিকাভুক্ত প্রতিযোগিদের দ্ধারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার শঙ্কা থাকে। এছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে যে ৭.৫০% কর সুবিধা দেওয়া হয়, প্রকৃতপক্ষে একটি অতালিকাভুক্ত কোম্পানি তারচেয়ে অনেক বেশি সুবিধা ভোগ করে থাকে। কারন অতালিকাভুক্ত কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মুনাফা অনেক কম দেখিয়ে আয়কর কম দেওয়ার সুযোগ নিতে পারে।

আয়করের ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির ব্যবধান থাকলেও ভ্যাটের ক্ষেত্রে সমান। এক্ষেত্রে একটি অতালিকাভুক্ত কোম্পানি ভ্যাট প্রদান ফাঁকি দিতে পারে। যেহেতু তালিকাভুক্ত কোম্পানির ন্যায় ওইসব কোম্পানিতে বিএসইসির মতো রেগুলেটর না থাকায় তদারকি কম হয়।

এরফলে প্রকৃতপক্ষে একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির থেকে অতালিকাভুক্ত কোম্পানি কর সুবিধা বেশি ভোগ করে করে বলে জানান তিনি। তারপরে আবার তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিভিন্ন নিয়ম-কানুন পরিপালন করতে অনেক ব্যয় হয়। এছাড়া উদ্যোক্তাদের গণমাধ্যমের অসহযোগিতা পেতে হয়। যার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ না।

তিনি বলেন, বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা/পরিচালকদেরকে ব্যক্তিগতভাবে ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারন করতে হয়। এক্ষেত্রে ৩০ শতাংশের বাধ্যবাধকতাও উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করে। কারন শেয়ারবাজারে এসেও যদি প্রয়োজনে শেয়ার বিক্রির সুযোগ না থাকে, তাহলে কেনো আসতে চাইবে। একজন উদ্যোক্তার টাকার প্রয়োজন পড়তেই পারে। এই সমস্যাটি বড় হয়ে দেখা দেয় ছোট পরিচালনা পর্ষদের কোম্পানিতে। যেমন ৫ জনের পর্ষদের পরিচালকদের সবাইকে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারনের নির্দেশনা পরিপালন করতে গিয়ে গড়ে ৬ শতাংশ করে সবসময় রাখতে হয়। এটা সহজ ব্যাপার না।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কম হওয়ার আরেকটি কারন অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংক নিস্ক্রিয়। দেশে ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক থাকলেও ৫-১০টি শেয়ারবাজরে ইসু আনে বলে জানান তিনি।

এই সমস্যা কাটিয়ে তুলতে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব যাচাই করতে হবে বলে জানান এই আইসিএমএবি প্রেসিডেন্ট। এই যাচাইয়ের মাধ্যমে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে স্বচ্ছতা আনতে হবে। এতে করে অনেক কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত হবে। কারন তখন তালিকাভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রকৃত কর সুবিধা পাওয়া যাবে।

বিজনেস আওয়ার/১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: