ঢাকা , রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইয়াকিন পলিমারে ইনসাইডার ট্রেডিং!

  • পোস্ট হয়েছে : ১২:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • 7

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইয়াকিন পলিমারের ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে ভালো যাচ্ছে না। যাতে কোম্পানিটির শেয়ার দরও ছিল তলানিতে। তবে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর ২১) ব্যবসায় উন্নতির খবর সবার উদ্দেশ্যে প্রকাশ করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। যে খবর প্রকাশের আগেই কয়েকদিনের ব্যবধানে শেয়ারটি দ্বিগুণ হয়ে যায়। যা ইনসাইডার ট্রেডিং (কোম্পানির সম্পৃক্ততা) ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব না বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ব্যবসায় উন্নতির খবর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের আগেই নিজেরাসহ অন্যদেরকে জানানোতে শেয়ার দর এমন বেড়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বড় সমস্যা ইনসাইডার ট্রেডিং বা কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততা। তারা যেহেতু কোম্পানির ব্যবসার উত্থান-পতের খবর সবার আগে জানেন, তাই অনেক কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সেই আলোকে আগেই শেয়ার কেনা-বেচা করেন। এমনকি কারসাজিকর গ্রুপের সঙ্গেও মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) আগেই প্রকাশ করেন। যাতে করে আনুষ্ঠানিকভাবে পিএসআই প্রকাশের আগেই শেয়ার দরে প্রভাব পড়ে।

দেখা গেছে, গত ১৬ জানুয়ারি ইয়াকিন পলিমারের শেয়ার দর ছিল ১২.৯০ টাকা। যে শেয়ারটি টানা বেড়ে ৮ ফেব্রুয়ারি উঠে যায় ২৫.৫০ টাকায়। অর্থাৎ ১ মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে শেয়ারটির দর বাড়ে ১২.৬০ টাকা বা ৯৮ শতাংশ।

এমন উত্থানে সন্দেহ হলে ডিএসই কর্তৃপক্ষ কারন অনুসন্ধানের চেষ্টা করে। যার আলোকে এ বিষয়ে ইয়াকিন পলিমার কর্তৃপক্ষ জানায়, সাম্প্রতিক অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির পেছনে অপ্রকাশিত কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

তবে গত ১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভা ও ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে ইয়াকিন পলিমারের ব্যবসায় বড় উত্থানের খবর প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ি, কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই’২১-ডিসেম্বর’২১) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.৫০ টাকা। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল লোকসান ০.৫৬ টাকা। এ হিসাবে কোম্পানির ব্যবসায় ১৮৯ শতাংশ উন্নতি হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, কোম্পানির ব্যবসায় উত্থানের খবর প্রকাশ ও তার আগে অস্বাভাবিক উত্থানে ইনসাইডার ট্রেডিং সম্ভাবনা থেকে যায়। এমন ঘটনা শুধু যে ইয়াকিন পলিমার করছে, তা কিন্তু না। এটা হরহামেশাই ঘটছে। কারন উদ্যোক্তা/পরিচালকেরাও কোম্পানির ব্যবসা থেকে অর্জিত মুনাফার পরিবর্তে ক্যাপিটাল গেইনে মনোযোগী। যে কারনে তারা ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের মতো অসৎ পথের রাস্তা নেমে পড়ে।

একই বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি যেহেতু শুরুর তুলনায় এখন ভালো, সেহেতু ব্যবসায় উন্নতি হতে পারে। তারপরেও কোম্পানির মুনাফায় অতিরঞ্জিত করা হয়েছে কিনা, সেটা বিএসইসি খতিয়ে দেখবে। আর কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ব্যবসার এই উন্নতির খবর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের আগেই শেয়ারের উল্লেখযোগ্য দর বৃদ্ধিতে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের সম্পৃক্ততা আছে কিনা, তা কমিশন খতিয়ে দেখছে। এরকম কিছু পাওয়া গেলে, আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে এ বিষয়ে জানতে ইয়াকিন পলিমারের চেয়ারম্যান কাজী আনোয়ারুল হকের ব্যক্তিগত ফোনে চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি। আর কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আক্তার কবিরের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

বিজনেস আওয়ার/১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

2 thoughts on “ইয়াকিন পলিমারে ইনসাইডার ট্রেডিং!

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ইয়াকিন পলিমারে ইনসাইডার ট্রেডিং!

পোস্ট হয়েছে : ১২:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইয়াকিন পলিমারের ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে ভালো যাচ্ছে না। যাতে কোম্পানিটির শেয়ার দরও ছিল তলানিতে। তবে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর ২১) ব্যবসায় উন্নতির খবর সবার উদ্দেশ্যে প্রকাশ করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। যে খবর প্রকাশের আগেই কয়েকদিনের ব্যবধানে শেয়ারটি দ্বিগুণ হয়ে যায়। যা ইনসাইডার ট্রেডিং (কোম্পানির সম্পৃক্ততা) ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব না বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ব্যবসায় উন্নতির খবর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের আগেই নিজেরাসহ অন্যদেরকে জানানোতে শেয়ার দর এমন বেড়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বড় সমস্যা ইনসাইডার ট্রেডিং বা কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততা। তারা যেহেতু কোম্পানির ব্যবসার উত্থান-পতের খবর সবার আগে জানেন, তাই অনেক কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সেই আলোকে আগেই শেয়ার কেনা-বেচা করেন। এমনকি কারসাজিকর গ্রুপের সঙ্গেও মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) আগেই প্রকাশ করেন। যাতে করে আনুষ্ঠানিকভাবে পিএসআই প্রকাশের আগেই শেয়ার দরে প্রভাব পড়ে।

দেখা গেছে, গত ১৬ জানুয়ারি ইয়াকিন পলিমারের শেয়ার দর ছিল ১২.৯০ টাকা। যে শেয়ারটি টানা বেড়ে ৮ ফেব্রুয়ারি উঠে যায় ২৫.৫০ টাকায়। অর্থাৎ ১ মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে শেয়ারটির দর বাড়ে ১২.৬০ টাকা বা ৯৮ শতাংশ।

এমন উত্থানে সন্দেহ হলে ডিএসই কর্তৃপক্ষ কারন অনুসন্ধানের চেষ্টা করে। যার আলোকে এ বিষয়ে ইয়াকিন পলিমার কর্তৃপক্ষ জানায়, সাম্প্রতিক অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির পেছনে অপ্রকাশিত কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

তবে গত ১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভা ও ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে ইয়াকিন পলিমারের ব্যবসায় বড় উত্থানের খবর প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ি, কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই’২১-ডিসেম্বর’২১) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.৫০ টাকা। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল লোকসান ০.৫৬ টাকা। এ হিসাবে কোম্পানির ব্যবসায় ১৮৯ শতাংশ উন্নতি হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, কোম্পানির ব্যবসায় উত্থানের খবর প্রকাশ ও তার আগে অস্বাভাবিক উত্থানে ইনসাইডার ট্রেডিং সম্ভাবনা থেকে যায়। এমন ঘটনা শুধু যে ইয়াকিন পলিমার করছে, তা কিন্তু না। এটা হরহামেশাই ঘটছে। কারন উদ্যোক্তা/পরিচালকেরাও কোম্পানির ব্যবসা থেকে অর্জিত মুনাফার পরিবর্তে ক্যাপিটাল গেইনে মনোযোগী। যে কারনে তারা ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের মতো অসৎ পথের রাস্তা নেমে পড়ে।

একই বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি যেহেতু শুরুর তুলনায় এখন ভালো, সেহেতু ব্যবসায় উন্নতি হতে পারে। তারপরেও কোম্পানির মুনাফায় অতিরঞ্জিত করা হয়েছে কিনা, সেটা বিএসইসি খতিয়ে দেখবে। আর কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ব্যবসার এই উন্নতির খবর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের আগেই শেয়ারের উল্লেখযোগ্য দর বৃদ্ধিতে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের সম্পৃক্ততা আছে কিনা, তা কমিশন খতিয়ে দেখছে। এরকম কিছু পাওয়া গেলে, আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে এ বিষয়ে জানতে ইয়াকিন পলিমারের চেয়ারম্যান কাজী আনোয়ারুল হকের ব্যক্তিগত ফোনে চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি। আর কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আক্তার কবিরের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

বিজনেস আওয়ার/১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: