শেয়ারবাজারে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারে অস্বাভাবিক উত্থান হয়েছে। যার পেছনে ঘুরে ফিরে বর্তমান সময়ের সমালোচিত একজনের নামই এসেছে। যে অন্যসব কোম্পানির ন্যায় ফরচুন সুজের শেয়ার নিয়েও গেম্বলিং করছেন বলে অভিযোগ আছে। আর সেই ফরচুন সুজ থেকেও তার বিভিন্ন গেম্বলিং আইটেমের শেয়ারে উচ্চ দরে বিনিয়োগ করে সহযোগিতা করা হয়েছে। যেটাকে কারসাজিতে একে অপরের সহযোগিতা বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে শেয়ারবাজারে যতগুলো গেম্বংলিং আইটেম আছে, তারমধ্যে অন্যতম ফরচুন সুজ। কোম্পানিটির গত কয়েক মাসে অস্বাভাবিক শেয়ার দর বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন বর্তমান বাজারের সবচেয়ে সমালোচিত ব্যাক্তিটি। যাকে সহযোগিতা করতে ফরচুন সুজ কর্তৃপক্ষও কোম্পানিটির ফান্ড নিয়ে এখন শেয়ার ব্যবসায়। এই কোম্পানিটির ফান্ড থেকে তারই বিভিন্ন আইটেমে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
নিম্নে ফরচুন সুজের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের গত ৩১ ডিসেম্বরের পোর্টফোলিও তুলে ধরা হল-
কোম্পানির নাম | শেয়ার সংখ্যা | শেয়ারপ্রতি ক্রয় মূল্য | ক্রয় মূল্য | বাজার দর |
এশিয়া ইন্স্যুরেন্স | ৭৭৫১০০ | ১২৩.৩৮ | ৯৫৬৩৪৪২৯ | ৮৯১৩৬৫০০ |
ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স | ৩৯১২ | ১১৭.৫৪ | ৪৫৯৮১৬ | ৪৫০৩৮৬ |
ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স | ৪৪১৫০৫ | ১৫৫.৬১ | ৬৮৭০২৫৭৮ | ৬০০০০৫৩০ |
মালেক স্পিনিং | ৫৬৬৩ | ৩৬.৮৩ | ২০৮৫৬০ | ১৪৭৮০৪ |
ডেল্টা লাইফ | ৯৫৮ | ২১২.৫৪ | ২০৩৬১৫ | ১৮৮২৪৭ |
জেনেক্স ইনফোসিস | ১৪০১৭৮১ | ১৬৮.৪৬ | ২৩৬১৪২৬৩৩ | ২৩১৮৫৪৫৭৭ |
ওয়ান ব্যাংক | ২০৩৬ | ২০.১২ | ৪০৯৬৬ | ২৮০৯৭ |
সোনালি পেপার | ৪২৬০৮ | ৯৫৭.৭৭ | ৪০৮০৮৬৯৭ | ৪০৮০৫৬৮২ |
মোট | ৪৪২২০১২৯৪ | ৪২২৬১১৮২৩ |
ফরচুন সুজের এই শেয়ার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ায় কোম্পানিটির অস্বাভাবিক শেয়ার দর বৃদ্ধিতে দুইভাবে সহযোগিতা পেয়েছে। এরমধ্যে প্রথমত ফরচুন সুজ থেকে আলোচিত গেম্বলারের আইটেমে বিনিয়োগ করে সহযোগিতার জন্য সেও ফরচুন সুজের শেয়ারে বিনিয়োগ করেছে। অন্যদিকে ফরচুন সুজের শেয়ার ব্যবসা থেকে মুনাফাও এসেছে। যা কোম্পানিটির শেয়ার দর বৃদ্ধি করতে আরও ভূমিকা রেখেছে।
আরও পড়ুন…..
সোনালি পেপারের মূল ব্যবসার তুলনায় শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা বেশি
শেয়ার ব্যবসায় ঝুঁকে পড়া ফরচুন সুজের চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর ২১) সফলতাও এসেছে। যা কোম্পানির মূল ব্যবসার থেকে বেশি।
এই কোম্পানিটির চলত বছরের প্রথমার্ধে নিজস্ব ব্যবসায় পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। একইসময়ে কোম্পানি ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারবাজার থেকে এসেছে ১৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
দেখা গেছে, ওই মুনাফা থেকে কর পরবর্তী ফরচুন সুজের নিট মুনাফা হয়েছে ৩২ কোটি ১৭ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ২.০৮ টাকা। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের প্রথমার্ধে ছিল ৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.৬৫ টাকা। এ হিসাবে মুনাফা বেড়েছে ২২২ শতাংশ।
এমন অস্থায়ী ও ঝুঁকিপূর্ণ মুনাফাকে পুঁজি করে গত কয়েক মাসে শেয়ারটির দর উঠে গেছে অন্য উচ্চতায়। নয় মাস আগে গত ১ জুনের ২১.৬০ টাকার ফরচুন সুজের শেয়ারটি ১৫ ফেব্রুয়ারি লেনদেন শেষে বেড়ে দাড়িঁয়েছে ১৩৬.৫০ টাকায়। এক্ষেত্রে দর বেড়েছে ১১৪.৯০ টাকা বা ৫৩২ শতাংশ।
এসব বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেয়ারবাজারের দীর্ঘ অভিজ্ঞ এক ট্রেকহোল্ডার বিজনেস আওয়ারকে বলেন, দেখেন শুরুতে একজন ব্যক্তি কয়েকজনের ফান্ড নিয়ে শেয়ারবাজারে কোম্পানি ধরে ধরে অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি বলেন বা কারসাজি বলেন, সেটা শুরু করে দিল। পরে বিভিন্ন কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকদেরকে তিনি সেই দলে নিয়ে গেলেন। এখন কোম্পানিগুলোও তাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য তারই নির্দেশিত বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে দর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এক্ষেত্রে অনেকটা ‘এ’ কোম্পানি থেকে ‘বি’ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধি এবং ‘বি’ কোম্পানি থেকে আবার ‘এ’ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধির মতো কারসাজির ঘটনা ঘটছে। অনেকটা পরস্পর যোগসাজোশে এক কোম্পানি আরেক কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধিতে দায়িত্ব পালন করছে। যা দীর্ঘমেয়াদি শেয়ারবাজারের উন্নয়নের পথে বাধাঁ।
ফরচুন সুজ মূলত চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে শেয়ারবাজারে ঝুঁকে পড়েছে। ওই সময় ফরচুন থেকে ৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে। যাতে করে গত ৩১ ডিসেম্বর বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়ে দাড়িঁয়েছে (বাজার মূল্য) ৪২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের একইসময়ে ছিল ১০ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে ফরচুন সুজের সচিব রিয়াজ উদ্দিন ভূইয়া বিজনেস আওয়ারকে বলেন, কোম্পানি ভালো ব্যবসা করছে। এর পাশাপাশি ম্যানেজমেন্ট আরও মুনাফা করার জন্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে। এখন সেখান থেকে যদি কিছু মুনাফা আসে, তাহলে শেয়ারহোল্ডাররা উপকৃত হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শেয়ার ব্যবসায় ঝুঁকি যেমন বেশি, মুনাফাও বেশি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখেন গেম্বলিং আইটেম কি, তা আমি বুঝি না। এখন ম্যানেজমেন্ট যদি ওইসব শেয়ার থেকে মুনাফা করতে পারে, তাহলেতো সমস্যা নেই। লোকসান করলে প্রশ্ন উঠতে পারে।
২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত ফরচুন সুজের মূল ব্যবসা হচ্ছে চামড়ার জুতা তৈরী ও রপ্তানি করা। তবে কিছু কোম্পানির ন্যায় এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষও শেয়ারবাজারের উত্থানে নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারেননি। তাই মূল ব্যবসা থেকে বেশি ঝুঁকে পড়েছেন শেয়ার ব্যবসায়।
বিজনেস আওয়ার/১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২/আরএ
8 thoughts on “ফরচুন সুজও কোটি কোটি টাকার ফান্ড নিয়ে গেম্বলিং আইটেমে ছুটছে”