ঢাকা , সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন যেভাবে কাজ করবে

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুলাই ২০২০
  • 14

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : টানা তিন মাস ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর পর অবষেষে মানবদেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম প্রমাণিত হয়েছে অক্সফোর্ডের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন। এর ফলে অনেকটা অবসান ঘটলো প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের জন্য বিশ্বের প্রতিটি মানুষের প্রতিক্ষার।

সোমবার বিখ্যাত আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যারা এই ভ্যাকসিনটির দু’টি ডোজ গ্রহণ করেছিলেন তাদের শরীরে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঠিক কিভাবে এই ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে কাজ করবে?

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি ভ্যাকসিনটির নাম চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯। অভুতপূর্ব গতিতে এটার উন্নতি সাধিত হয়েছে। এটি তৈরি করা হয়েছে শিম্পাঞ্জির ঠাণ্ডা লাগার জন্য যে মৌলিক বিষয়টি দায়ী সেটার জীন নিয়ে গবেষণা করে।

গবেষণার মাধ্যমে প্রচুর পরিমার্জন ও পরিবর্ধন শেষে মানুষের শরীরে প্রয়োগযোগ্য করে তৈরি করা হয়েছে টিকাটি। সে কারণে একটি মানুষের শরীরে কোনো সংক্রমণ ঘটতে দিবে না এবং একই প্রক্রিয়ায় এটি করোনাভাইরাকেও রুখে দিতে পারবে।

করোনাভাইরাসের যে স্পাইক প্রোটিন মানবদেহের কোষকে আক্রমণ করে সেটা নিয়ে গবেষণা করে সেটার ভিত্তিতে জেনেটিক নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। সুতরং এটি করোনাভাইরাস রুখে দিতে পারবে এবং করোনাভাইরাসকে রুখে দেয়ার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারবে।

আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমের মাধ্যমে যে প্রোটিন উৎপাদিত হয় (এন্টিবডি) এবং যে প্রোটিনটি করোনাভাইরাসের উপরিভাগে থাকে সেটাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে সক্ষম এই ভ্যাকসিন। এন্টিবডিকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়ার মাধ্যমে ভাইরাসটিকেও অক্ষম করে দেয়া সম্ভব।

পাশাপাশি আমাদের শরীরের যে টি-সেল রয়েছে (এক ধরনের লোহিত রক্ত কণিকা) যেটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সহায়তা করে এবং ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ ও ধ্বংস করে সেটার সক্ষমতা বাড়াবে এই টিকা। মূলত সব ধরনের টিকাই এন্টিবডি ও টি-সেলকে প্রভাবিত করে কাজ করে।

করোনাভাইরাসের প্রতিরোধে এখনো বেশিরভাগ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে অ্যান্টিবডিতে। তবে এটি মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি অংশ মাত্র। অ্যান্টিবডি হচ্ছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার তৈরি করা ছোট আকারের প্রোটিন; যা ভাইরাসের সঙ্গে সেটে যায়। এই অ্যান্টিবডি করোনাভাইরাসকে অকার্যকর করে দিতে পারে।

টি-সেল, রক্তের সাদা একটি অংশ আক্রান্ত কোষগুলোকে শনাক্ত এবং ধ্বংস করতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সাহায্য করে। প্রায় সব কার্যকর ভ্যাকসিন অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার মাধ্যমে কাজ করে।

অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিন মানবদেহের জন্য নিরাপদ। তবে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যদিও সেগুলো খুব বিপজ্জনক কিছু নয়। পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৭০ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবী বলেছেন, এই ভ্যাকসিন নেয়ার পর জ্বর কিংবা মাথাব্যাথা হয়েছিল।

কিন্তু গবেষকরা বলছেন, প্যারাসিটামল সেবনের মাধ্যমে তা কমানো যেতে পারে। ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের ফলে তীব্র কোনো কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয়নি।

বিজনেস আওয়ার/২১ জুলাই, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন যেভাবে কাজ করবে

পোস্ট হয়েছে : ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুলাই ২০২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : টানা তিন মাস ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর পর অবষেষে মানবদেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম প্রমাণিত হয়েছে অক্সফোর্ডের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন। এর ফলে অনেকটা অবসান ঘটলো প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের জন্য বিশ্বের প্রতিটি মানুষের প্রতিক্ষার।

সোমবার বিখ্যাত আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যারা এই ভ্যাকসিনটির দু’টি ডোজ গ্রহণ করেছিলেন তাদের শরীরে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঠিক কিভাবে এই ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে কাজ করবে?

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি ভ্যাকসিনটির নাম চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯। অভুতপূর্ব গতিতে এটার উন্নতি সাধিত হয়েছে। এটি তৈরি করা হয়েছে শিম্পাঞ্জির ঠাণ্ডা লাগার জন্য যে মৌলিক বিষয়টি দায়ী সেটার জীন নিয়ে গবেষণা করে।

গবেষণার মাধ্যমে প্রচুর পরিমার্জন ও পরিবর্ধন শেষে মানুষের শরীরে প্রয়োগযোগ্য করে তৈরি করা হয়েছে টিকাটি। সে কারণে একটি মানুষের শরীরে কোনো সংক্রমণ ঘটতে দিবে না এবং একই প্রক্রিয়ায় এটি করোনাভাইরাকেও রুখে দিতে পারবে।

করোনাভাইরাসের যে স্পাইক প্রোটিন মানবদেহের কোষকে আক্রমণ করে সেটা নিয়ে গবেষণা করে সেটার ভিত্তিতে জেনেটিক নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। সুতরং এটি করোনাভাইরাস রুখে দিতে পারবে এবং করোনাভাইরাসকে রুখে দেয়ার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারবে।

আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমের মাধ্যমে যে প্রোটিন উৎপাদিত হয় (এন্টিবডি) এবং যে প্রোটিনটি করোনাভাইরাসের উপরিভাগে থাকে সেটাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে সক্ষম এই ভ্যাকসিন। এন্টিবডিকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়ার মাধ্যমে ভাইরাসটিকেও অক্ষম করে দেয়া সম্ভব।

পাশাপাশি আমাদের শরীরের যে টি-সেল রয়েছে (এক ধরনের লোহিত রক্ত কণিকা) যেটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সহায়তা করে এবং ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ ও ধ্বংস করে সেটার সক্ষমতা বাড়াবে এই টিকা। মূলত সব ধরনের টিকাই এন্টিবডি ও টি-সেলকে প্রভাবিত করে কাজ করে।

করোনাভাইরাসের প্রতিরোধে এখনো বেশিরভাগ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে অ্যান্টিবডিতে। তবে এটি মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি অংশ মাত্র। অ্যান্টিবডি হচ্ছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার তৈরি করা ছোট আকারের প্রোটিন; যা ভাইরাসের সঙ্গে সেটে যায়। এই অ্যান্টিবডি করোনাভাইরাসকে অকার্যকর করে দিতে পারে।

টি-সেল, রক্তের সাদা একটি অংশ আক্রান্ত কোষগুলোকে শনাক্ত এবং ধ্বংস করতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সাহায্য করে। প্রায় সব কার্যকর ভ্যাকসিন অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার মাধ্যমে কাজ করে।

অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিন মানবদেহের জন্য নিরাপদ। তবে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যদিও সেগুলো খুব বিপজ্জনক কিছু নয়। পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৭০ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবী বলেছেন, এই ভ্যাকসিন নেয়ার পর জ্বর কিংবা মাথাব্যাথা হয়েছিল।

কিন্তু গবেষকরা বলছেন, প্যারাসিটামল সেবনের মাধ্যমে তা কমানো যেতে পারে। ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের ফলে তীব্র কোনো কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয়নি।

বিজনেস আওয়ার/২১ জুলাই, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: