ঢাকা , শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

না ফেরার দেশে মুহিত

  • পোস্ট হয়েছে : ০৯:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২২
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : না ফেরার দেশে চলে গেলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন) । তার বয়স হয়েছিল (৮৮) বছর।

মরহুমের পারিবারিক সূত্রে এতথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দীর্ঘ ১০ বছর তিনি বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এসময় আর্থিকখাতে অসামান্য উন্নতি সাধন হয়। মূত্যৃপূর্ব পর্যন্ত তিনি অবসর জীবন যাপন করলেও বই লেখার পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম নেতা, তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের কর্ণধার অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আব্দুল হাফিজের দ্বিতীয় পুত্র আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমএ পাশ করেন।

তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদের নির্বাচিত সহসভাপতি ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে জেল খেটেছেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নসহ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (সিএসপি) এ যোগদানের পর আবুল মাল আবদুল মুহিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, কেন্দ্রীয় পাকিস্তান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে তিনি পরিকল্পনা সচিব এবং ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগে সচিব পদে নিযুক্ত হন।

তিনি পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনের চিফ ও উপ-সচিব থাকাকালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের ওপর ১৯৬৬ সালে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে এটিই ছিল এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন।

ওয়াশিংটন দূতাবাসের তিনি প্রথম কূটনীতিবিদ, যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১-এর জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রদর্শন করেন।

অর্থনৈতিক কূটনীতিতে আবুল মাল আবদুল মুহিত বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় তিনি একজন পরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

১৯৭২ সালে ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে ফেরেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। দেশে আসার আগেই তার নিয়োগ হয়েছিল পরিকল্পনা সচিব হিসেবে। তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সচিব ডেজিগনেট হিসেবে কাজ করেন তিন মাস। এই সময় বঙ্গবন্ধু তাকে দু’টি কাজ দেন। একটি ছিল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করার পরিকল্পনা, অন্যটি ছিল জেলা প্রশাসনের গণতন্ত্রায়ন।

১৯৭২ সালের এপ্রিলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ মিশনে চলে যান। আমেরিকা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে বাংলাদেশ মিশন হয়ে গেল বাংলাদেশ দূতাবাস। মুহিত সেখানে অর্থনৈতিক মিনিস্টার থাকেন দুই বছরের মত। এই সময়ে ১৯৭২ সালে বেশ কিছুদিন তিনি ছিলেন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার।

১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সদস্য হলে সেপ্টেম্বরে মুহিত হলেন বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের পক্ষে ভারত বাংলাদেশ শ্রীলংকা গ্রুপের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক, যেখানে ভারতের প্রতিনিধি ছিলেন নির্বাহী পরিচালক।

১৯৭৩ সালে সেপ্টেম্বরে সপরিবারে ঢাকায় ফিরে আসেন। পরিবারের জন্য এই ছিল স্বাধীন বালাদেশে প্রথম পদার্পণ। ঢাকায় থাকেন জুন পর্যন্ত।

১৯৭৪ সালে মে মাসে ওয়াশিংটনে ফিরে গিয়েই হুকুম পেলেন যে, তাকে ইসলামী মন্ত্রী সম্মেলনে যেতে হবে কুয়ালালামপুর এবং তারপর ঢাকায় যেতে হবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর ঢাকা ভ্রমণকালে। ভুট্টোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় তাকে বাংলাদেশ ডেলিগেশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ সময় তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পদ ভাগাভাগির বিষয়ে প্রতিবেদন ও সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৪-এর ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৭ সালের মে পর্যন্ত মুহিত ছিলেন ম্যানিলায় অবস্থিত এডিবিতে বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষে এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর।

১৯৭৭-১৯৮১ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১-১৯৮২ মার্চ পর্যন্ত তিনি স্বাধীনভাবে নানা কনসালটেনসি করেন।

১৯৮২ সালের মার্চ মাসে জেনারেল এরশাদের স্বল্পমেয়াদী নির্দলীয় সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৩ মে থেকে হলেন সবেতন মন্ত্রী। ১৯৮৪ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মন্ত্রীত্বে ছিলেন ২০ মাস। এর মধ্যে দু’টি বাজেট পেশ করেছিলেন। মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করার সময় অনেক দ্বিধাবোধ ছিল তার। সামরিক সরকারের একজন হতে খুব আপত্তি ছিল। তাই অনেক রিজার্ভেশনসহ তখন মন্ত্রী হন।

১৯৮২-১৯৮৩ সালে অর্থমন্ত্রী মুহিতের প্রথম বাজেট পেশ করেন। তখন রাজস্ব আয় ছিল মোট ২৭১০ কোটি টাকা আর মোট সরকারি ব্যয় ছিল ৪৪১১ কোটি টাকা।

১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে তিনি অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও ইফাদে কাজ শুরু করেন। ১৯৮২-১৯৮৩ সালে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর তিনি বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন।

লেখক হিসেবেও আবুল মাল আবদুল মুহিত সমান পারদর্শী ছিলেন। প্রশাসনিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ’ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে তার ৩৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনে (বাপা) তিনি একজন পথিকৃত এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালে তিনি ‘স্বাধীনতা পদক’ পান। স্ত্রী সৈয়দ সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে প্রথম কন্যা সামিনা মুহিত ব্যাংকার ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ। বড় ছেলে সাহেদ মুহিত বা¯‘কলাবিদ এবং ছোট ছেলে সামির মুহিত শিক্ষকতা করেন।

বিজনেস আওয়ার/৩০ এপ্রিল, ২০২২/কমা

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

না ফেরার দেশে মুহিত

পোস্ট হয়েছে : ০৯:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : না ফেরার দেশে চলে গেলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন) । তার বয়স হয়েছিল (৮৮) বছর।

মরহুমের পারিবারিক সূত্রে এতথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দীর্ঘ ১০ বছর তিনি বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এসময় আর্থিকখাতে অসামান্য উন্নতি সাধন হয়। মূত্যৃপূর্ব পর্যন্ত তিনি অবসর জীবন যাপন করলেও বই লেখার পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম নেতা, তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের কর্ণধার অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আব্দুল হাফিজের দ্বিতীয় পুত্র আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমএ পাশ করেন।

তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদের নির্বাচিত সহসভাপতি ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে জেল খেটেছেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নসহ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (সিএসপি) এ যোগদানের পর আবুল মাল আবদুল মুহিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, কেন্দ্রীয় পাকিস্তান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে তিনি পরিকল্পনা সচিব এবং ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগে সচিব পদে নিযুক্ত হন।

তিনি পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনের চিফ ও উপ-সচিব থাকাকালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের ওপর ১৯৬৬ সালে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে এটিই ছিল এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন।

ওয়াশিংটন দূতাবাসের তিনি প্রথম কূটনীতিবিদ, যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১-এর জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রদর্শন করেন।

অর্থনৈতিক কূটনীতিতে আবুল মাল আবদুল মুহিত বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় তিনি একজন পরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

১৯৭২ সালে ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে ফেরেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। দেশে আসার আগেই তার নিয়োগ হয়েছিল পরিকল্পনা সচিব হিসেবে। তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সচিব ডেজিগনেট হিসেবে কাজ করেন তিন মাস। এই সময় বঙ্গবন্ধু তাকে দু’টি কাজ দেন। একটি ছিল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করার পরিকল্পনা, অন্যটি ছিল জেলা প্রশাসনের গণতন্ত্রায়ন।

১৯৭২ সালের এপ্রিলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ মিশনে চলে যান। আমেরিকা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে বাংলাদেশ মিশন হয়ে গেল বাংলাদেশ দূতাবাস। মুহিত সেখানে অর্থনৈতিক মিনিস্টার থাকেন দুই বছরের মত। এই সময়ে ১৯৭২ সালে বেশ কিছুদিন তিনি ছিলেন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার।

১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সদস্য হলে সেপ্টেম্বরে মুহিত হলেন বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের পক্ষে ভারত বাংলাদেশ শ্রীলংকা গ্রুপের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক, যেখানে ভারতের প্রতিনিধি ছিলেন নির্বাহী পরিচালক।

১৯৭৩ সালে সেপ্টেম্বরে সপরিবারে ঢাকায় ফিরে আসেন। পরিবারের জন্য এই ছিল স্বাধীন বালাদেশে প্রথম পদার্পণ। ঢাকায় থাকেন জুন পর্যন্ত।

১৯৭৪ সালে মে মাসে ওয়াশিংটনে ফিরে গিয়েই হুকুম পেলেন যে, তাকে ইসলামী মন্ত্রী সম্মেলনে যেতে হবে কুয়ালালামপুর এবং তারপর ঢাকায় যেতে হবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর ঢাকা ভ্রমণকালে। ভুট্টোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় তাকে বাংলাদেশ ডেলিগেশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ সময় তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পদ ভাগাভাগির বিষয়ে প্রতিবেদন ও সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৪-এর ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৭ সালের মে পর্যন্ত মুহিত ছিলেন ম্যানিলায় অবস্থিত এডিবিতে বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষে এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর।

১৯৭৭-১৯৮১ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১-১৯৮২ মার্চ পর্যন্ত তিনি স্বাধীনভাবে নানা কনসালটেনসি করেন।

১৯৮২ সালের মার্চ মাসে জেনারেল এরশাদের স্বল্পমেয়াদী নির্দলীয় সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৩ মে থেকে হলেন সবেতন মন্ত্রী। ১৯৮৪ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মন্ত্রীত্বে ছিলেন ২০ মাস। এর মধ্যে দু’টি বাজেট পেশ করেছিলেন। মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করার সময় অনেক দ্বিধাবোধ ছিল তার। সামরিক সরকারের একজন হতে খুব আপত্তি ছিল। তাই অনেক রিজার্ভেশনসহ তখন মন্ত্রী হন।

১৯৮২-১৯৮৩ সালে অর্থমন্ত্রী মুহিতের প্রথম বাজেট পেশ করেন। তখন রাজস্ব আয় ছিল মোট ২৭১০ কোটি টাকা আর মোট সরকারি ব্যয় ছিল ৪৪১১ কোটি টাকা।

১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে তিনি অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও ইফাদে কাজ শুরু করেন। ১৯৮২-১৯৮৩ সালে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর তিনি বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন।

লেখক হিসেবেও আবুল মাল আবদুল মুহিত সমান পারদর্শী ছিলেন। প্রশাসনিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ’ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে তার ৩৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনে (বাপা) তিনি একজন পথিকৃত এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালে তিনি ‘স্বাধীনতা পদক’ পান। স্ত্রী সৈয়দ সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে প্রথম কন্যা সামিনা মুহিত ব্যাংকার ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ। বড় ছেলে সাহেদ মুহিত বা¯‘কলাবিদ এবং ছোট ছেলে সামির মুহিত শিক্ষকতা করেন।

বিজনেস আওয়ার/৩০ এপ্রিল, ২০২২/কমা

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: