বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দেশের চিংড়ি ও মাছ রপ্তানি খাতের ব্যবসায় ধারাবাহিকভাবে পতনের পথে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে রপ্তানিকারক কোম্পানির সংখ্যা ১০৫টি থেকে কমে ৪৩-এ নেমে এসেছে। যেগুলোর অধিকাংশ চলছে ধুঁকে ধুঁকে। এরমধ্যে আছিয়া সী ফুডস রয়েছে তলানির তালিকায়। তবে শেয়ারবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করতে এসে ২০২০-২১ অর্থবছরে কোম্পানিটির ২১৩ শতাংশের মতো অস্বাভাবিক রপ্তানি বা আয় বেড়েছে। যেসময়টা আবার করোনা মহামারিতে পুরো দুনিয়া স্থবির হয়ে পড়েছিল।
শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরেই টাকা সংগ্রহ করতে আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে হঠাৎ করে বিক্রি ও মুনাফায় বড় উত্থান দেখা যায়। বিনিয়োগকারীসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আকৃষ্ট করতে কৃত্রিমভাবে এমনটি করে দেখানো হয়। যাতে তালিকাভুক্তির পরে সেসব কোম্পানির ধারাবাহিক পতন হয়। এছাড়া ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। যে কারনে শেয়ারবাজারে বর্তমানে অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে আর্থিক হিসাবে অনাস্থা।
শেয়ারবাজারে আসার আগমুহূর্তে আছিয়া সী ফুডসের ২০২০-২১ অর্থবছরে অস্বাভাবিক রপ্তানি ও মুনাফা বৃদ্ধি পেলেও চলতি অর্থবছরে বেতন সমস্যায় চাকরী ছেড়ে চলে গেছেন কর্মচারীরা। তাদের একজন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, আছিয়া সী ফুডস আর্থিক সংকটে পড়েছে। যাতে করে ঠিকমতো বেতন পরিশোধ করতে পারছে না। যে কারনে ৭ মাস আগে চাকরী ছেড়ে দিয়েছি।
কোম্পানিটি যে আর্থিক সংকটে রয়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে আর্থিক হিসাবেও। এ কোম্পানিটির ২০২০-২১ অর্থবছরে শেষে হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ২ লাখ ৫৬ হাজার ৬৬৩ টাকায়। যা দিয়ে কোম্পানি দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করা অসম্ভব। এছাড়া আকাশচুম্বি রপ্তানি বেশি দাবি করা এ কোম্পানিটি ২০২০-২১ অর্থবছরে নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। কোম্পানিটির ওই অর্থবছরে পরিচালন নগদ প্রবাহ হয়েছে ঋণাত্মক ৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি (৪.৪৩) টাকা।
আরও পড়ুন…..
ভূয়া সম্পত্তি দেখিয়ে শেয়ারবাজারে আসছে আছিয়া সী ফুডস
বিদেশে চিংড়ি ও মাছ রপ্তানিকারক কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) তথ্য অনুযায়ি, খুলনার ৬৪টি রপ্তানিকারক কোম্পানির মধ্যে ২০১৯ সালে ব্যবসা চালু ছিল ৩৮টির। এই ৩৮টি কোম্পানির মধ্যে আছিয়া সী ফুডসের অবস্থান ২৩তম। ওই বছরে কোম্পানিটির ৩২ কোটি ৭২ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করে। সেই কোম্পানিটি ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনার মধ্যে রপ্তানির পরিমাণ উল্লেখ করেছে ১৩৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকার। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের থেকে ৯৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা বা ২১৩% বেশি।
কিন্তু এই সময় সামগ্রিকভাবে দেশের চিংড়ি ও মাছ রপ্তানি খাতে তেমন কোন উন্নতি হয়নি। বাংলাদেশ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই খাতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৭০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। যা ৫.৫৭% বেড়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে হয়েছে ৪০৮৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। মন্দাবস্থায় থাকা এই খাতের সার্বিকভাবে ৫.৫৭% রপ্তানি বাড়লেও আছিয়া ফুডস কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের বেড়েছে ২১৩%।
রপ্তানিতে এমন অস্বাভাবিক উত্থান দেখালেও উৎপাদনে বিদ্যুত ব্যয় বাড়েনি এবং বেতন ব্যয় কমেছে বলে আর্থিক হিসাবে উল্লেখ করেছে আছিয়া সী ফুডস কর্তৃপক্ষ। কোম্পানিটির আগের অর্থবছরে ৪৪ কোটি ২ লাখ টাকার রপ্তানিতে নোট ১৯.০৩ অনুযায়ি, বেতনবাবদ ৮৫ লাখ ও বিদ্যুতবাবদ ৯৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছিল। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২১৩% রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়ে ১৩৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা হওয়া সত্ত্বেও বেতনবাবদ ব্যয় কমে হয়েছে ৭৬ লাখ টাকা। এছাড়া বিদ্যুতবাবদ ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
আছিয়া সী ফুডস রপ্তানিতে বড় উত্থান দাবি করলেও ব্যবসায় টিকে থাকতেই হিমশিম খাচ্ছে এই রপ্তানিকারক খাতটি। যে খাতটির বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আগামি ৫ বছরে হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরী হয়েছে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় না পেরে এই পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। এছাড়া বিশ্বে যে দরে কোম্পানিগুলো চিংড়ি রপ্তানি করে, তার চেয়ে বেশি দরে দেশের মানুষই কিনে খাওয়ায় সংকট প্রকট হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের চিংড়ি উৎপাদনকারী হ্যাচারি মালিকেরা রপ্তানিকারকদের কাছে পাইকারিতে কম দামের পরিবর্তে খোলা বাজারে চিংড়ি বিক্রিতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
এর ফলে অন্যান্য দেশ চিংড়ি রপ্তানিতে এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশের এই খাত পিছিয়ে পড়েছে। যার ধারাবাহিকতায় নিয়মিত কমতে কমতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ৫১০৬ কোটির রপ্তানির পরিমাণ ২০২০-২১ অর্থবছরে নেমে এসেছে ৪০৮৬ কোটিতে।
২১৩ শতাংশ রপ্তানির বৃদ্ধির বিষয়ে বিএল কপি, ইনভয়েস কপি, রপ্তানি ব্যুরোর তথ্য, এলসি কপি চাইলে আছিয়া সী ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরিকুল ইসলাম জহির বলেন, আপনি যা দেখতে চান, সব ইস্যু ম্যানেজারের কাছে আছে। তার তথ্য অনুযায়ি ইস্যু ম্যানেজারের কাছে গেলেও তাদের নিজেদের একটি রপ্তানির তথ্য ছাড়া কিছু পাওয়া যায়নি। পরে উনার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাত করলে, তিনি তার সিএফওকে মেইল করে দিতে বলেন। কিন্তু তা আজও পাওয়া যায়নি।
বিজনেস আওয়ার/১৩ জুন, ২০২২/আরএ
3 thoughts on “শেয়ারবাজারে আসার আগে ২১৩% আয় বৃদ্ধি”