ঢাকা , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পবিত্র হজ আজ

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০
  • 0

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক : প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারনে নজিরবিহীন স্বাস্থ্যবিধি সুরক্ষা ও সৃশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বুধবার (২৯ জুলাই) সকাল থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। এদিন সকালে মক্কা থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে হাজিরা ‘কারনুল মানাযেল’ নামক মিকাত থেকে ইহরাম পরিধান করে মক্কায় এসে তাওয়াফে কুদুম শেষে মিনাযাত্রা করেছেন। মিনাযাত্রার মধ্য দিয়ে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।

তাওয়াফে কুদুমের আনুষ্ঠানিকতায় এবার দেখা গেছে অচেনা দৃশ্য। চিরচেনা ভিড় নেই। নেই মক্কার অলি-গলিতে ইহরাম পরিহিত হাজিদের ব্যস্ততা। করোনাকালে অনেকটা বিষাদের আবহেই শুরু হয়েছে ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজের আনুষ্ঠানিকতা।

১০ হাজার হাজি বুধবার জোহরের নামাজ আদায় করেছেন মিনায়। মিনায় এবার হাজিরা চির পরিচিত খিমায় (তাঁবু) থাকেননি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের রাখা হয় মিনায় অবস্থিত উন্নতমানের টাওয়ারে। সেখানে রাতভর কোরআন তেলাওয়াত, নফল ইবাদত ও জিকির-আজকারে মশগুল ছিলেন।

মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় শেষে বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) ফজরের পর মিনা থেকে যান আরাফাতের ময়দানে। আরাফার ময়দানই হলো- হজের মূল কার্যক্রম। অন্য বছর আরাফাতের বিস্তীর্ণ ময়দানজুড়ে হাজিরা অবস্থান নিলেও এবার নির্দিষ্ট তাঁবুতে থাকতে হবে। সৌদি আরবের স্থানীয় সময় ১২টা ২৫ মিনিটে আরাফাতের ময়দান সংলগ্ন মসজিদে নামিরা থেকে হাজিদের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদান করা হবে।

এবার হজের খুতবা দেবেন শায়খ আবদুল্লাহ বিন সোলায়মান আল মানিয়া। তিনি সবচেয়ে বেশি বয়স্ক হজের খতিব। এ বছর হজের আরবি খুতবা বাংলাসহ আরও নয়টি ভাষায় অনুবাদ করে সম্প্রচার করা হবে। এ লক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ওই নয় ভাষা হলো- ইংরেজি, মালয়, উর্দু, ফার্সি, ফ্রেঞ্চ, মান্দারিন, তুর্কি, রুশ ও হাবশি। ২০১৯ সালে ৫ ভাষায় হজের খুতবার অনুবাদ প্রচার করা হয়েছিল।

আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়ে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। লাখো মানুষের উদ্দেশে প্রদত্ত এই ভাষণের পর আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছিল দ্বীনের পরিপূর্ণতা লাভের। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এখনও ভাষণ দেওয়া হয়। ভাষণে বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়।

উপস্থিত হাজিরা আবেগঘন পরিবেশে মহান আল্লাহর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেওয়ার মন-মানসিকতা নিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকেন। তারা নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, নিজের পরিবার-পরিজন, সমাজ ও রাষ্ট্রের সুখ শান্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।

হাজিরা আরাফাতের ময়দানে সারাদিন থেকে সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ না পড়ে চলে যাবেন মুজদালিফায়। সেখানে গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ এক আজানে আলাদা আলাদা ইকামতে একসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আদায় করবেন। মুজদালিফায় সারারাত খোলা আকাশের নিচে সারারাত অবস্থান করবেন এবং সেখানেই ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্য ওঠার আগে কিছুক্ষণ অবস্থান করে জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করার জন্য ফের চলে যাবেন মিনায়।

১০ জিলহজ মুজদালিফা থেকে মিনায় এসে বড় জামরাতে ৭টি পাথর নিক্ষেপ করবেন এবং এ কাজ জোহরের আগেই সম্পন্ন করবেন। বড় জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করে কোরবানির কাজও সম্পন্ন করবেন হজিরা। সেই সঙ্গে নিজেদের মাথা মুণ্ডন করে ইহরামের কাপড় থেকে হালাল হবেন।

১১ ও ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে তাওয়াফে জিয়ারতের কাজ সম্পন্ন করবেন এবং এ দু’দিন মিনায় অবস্থান করে ছোট, মধ্যম ও বড় জামারায় সাতটি করে মোট ২১টি পাথর নিক্ষেপ করে ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে মিনা ত্যাগ করবেন। এরপর বিদায়ী তাওয়াফের মাধ্যমে হজের কাজ সম্পন্ন করবেন হাজিরা।

বিজনেস আওয়ার/৩০ জুলাই, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

পবিত্র হজ আজ

পোস্ট হয়েছে : ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক : প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারনে নজিরবিহীন স্বাস্থ্যবিধি সুরক্ষা ও সৃশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বুধবার (২৯ জুলাই) সকাল থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। এদিন সকালে মক্কা থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে হাজিরা ‘কারনুল মানাযেল’ নামক মিকাত থেকে ইহরাম পরিধান করে মক্কায় এসে তাওয়াফে কুদুম শেষে মিনাযাত্রা করেছেন। মিনাযাত্রার মধ্য দিয়ে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।

তাওয়াফে কুদুমের আনুষ্ঠানিকতায় এবার দেখা গেছে অচেনা দৃশ্য। চিরচেনা ভিড় নেই। নেই মক্কার অলি-গলিতে ইহরাম পরিহিত হাজিদের ব্যস্ততা। করোনাকালে অনেকটা বিষাদের আবহেই শুরু হয়েছে ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজের আনুষ্ঠানিকতা।

১০ হাজার হাজি বুধবার জোহরের নামাজ আদায় করেছেন মিনায়। মিনায় এবার হাজিরা চির পরিচিত খিমায় (তাঁবু) থাকেননি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের রাখা হয় মিনায় অবস্থিত উন্নতমানের টাওয়ারে। সেখানে রাতভর কোরআন তেলাওয়াত, নফল ইবাদত ও জিকির-আজকারে মশগুল ছিলেন।

মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় শেষে বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) ফজরের পর মিনা থেকে যান আরাফাতের ময়দানে। আরাফার ময়দানই হলো- হজের মূল কার্যক্রম। অন্য বছর আরাফাতের বিস্তীর্ণ ময়দানজুড়ে হাজিরা অবস্থান নিলেও এবার নির্দিষ্ট তাঁবুতে থাকতে হবে। সৌদি আরবের স্থানীয় সময় ১২টা ২৫ মিনিটে আরাফাতের ময়দান সংলগ্ন মসজিদে নামিরা থেকে হাজিদের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদান করা হবে।

এবার হজের খুতবা দেবেন শায়খ আবদুল্লাহ বিন সোলায়মান আল মানিয়া। তিনি সবচেয়ে বেশি বয়স্ক হজের খতিব। এ বছর হজের আরবি খুতবা বাংলাসহ আরও নয়টি ভাষায় অনুবাদ করে সম্প্রচার করা হবে। এ লক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ওই নয় ভাষা হলো- ইংরেজি, মালয়, উর্দু, ফার্সি, ফ্রেঞ্চ, মান্দারিন, তুর্কি, রুশ ও হাবশি। ২০১৯ সালে ৫ ভাষায় হজের খুতবার অনুবাদ প্রচার করা হয়েছিল।

আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়ে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। লাখো মানুষের উদ্দেশে প্রদত্ত এই ভাষণের পর আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছিল দ্বীনের পরিপূর্ণতা লাভের। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এখনও ভাষণ দেওয়া হয়। ভাষণে বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়।

উপস্থিত হাজিরা আবেগঘন পরিবেশে মহান আল্লাহর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেওয়ার মন-মানসিকতা নিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকেন। তারা নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, নিজের পরিবার-পরিজন, সমাজ ও রাষ্ট্রের সুখ শান্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।

হাজিরা আরাফাতের ময়দানে সারাদিন থেকে সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ না পড়ে চলে যাবেন মুজদালিফায়। সেখানে গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ এক আজানে আলাদা আলাদা ইকামতে একসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আদায় করবেন। মুজদালিফায় সারারাত খোলা আকাশের নিচে সারারাত অবস্থান করবেন এবং সেখানেই ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্য ওঠার আগে কিছুক্ষণ অবস্থান করে জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করার জন্য ফের চলে যাবেন মিনায়।

১০ জিলহজ মুজদালিফা থেকে মিনায় এসে বড় জামরাতে ৭টি পাথর নিক্ষেপ করবেন এবং এ কাজ জোহরের আগেই সম্পন্ন করবেন। বড় জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করে কোরবানির কাজও সম্পন্ন করবেন হজিরা। সেই সঙ্গে নিজেদের মাথা মুণ্ডন করে ইহরামের কাপড় থেকে হালাল হবেন।

১১ ও ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে তাওয়াফে জিয়ারতের কাজ সম্পন্ন করবেন এবং এ দু’দিন মিনায় অবস্থান করে ছোট, মধ্যম ও বড় জামারায় সাতটি করে মোট ২১টি পাথর নিক্ষেপ করে ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে মিনা ত্যাগ করবেন। এরপর বিদায়ী তাওয়াফের মাধ্যমে হজের কাজ সম্পন্ন করবেন হাজিরা।

বিজনেস আওয়ার/৩০ জুলাই, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: