বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে গেম্বলিং আইটেমে পরিণত হওয়া ওরিয়ন ফার্মার (সমন্বিতভাবে) মূল ব্যবসায় আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। তবে মূল ব্যবসার বাহিরে অপরিচালন (নন-অপারেটিং) আয়ের মাধ্যমে নিট মুনাফা বেড়েছে। যে কোম্পানিটির শেয়ার দর কৃত্রিমভাবে বাড়ানো নিয়ে চলছে খেলাধুলা।
শেয়ারবাজারে বর্তমানে যে কয়টি শেয়ার নিয়ে খেলাধুলা চলছে, তারমধ্যে অন্যতম ওরিয়ন ফার্মা ও ওরিয়ন ইনফিউশন। এরমধ্যে ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার দর গত ২ মাসে বেড়েছে ৫৮.৯০ টাকা। এই শেয়ারটি গত ২৫ আগস্টে ছিল ৭৮.৪০ টাকা। যেটি বেড়ে ২৬ সেপ্টেম্বর দাঁড়িয়েছে ১৩৭.৩০ টাকায়। এই অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির পেছনে কোন যৌক্তিক কারন খুজে পায়নি ডিএসই কর্তৃপক্ষ।
দেখা গেছে, ওরিয়ন ফার্মার ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ মাসের (জুলাই ২১-মার্চ ২২) সমন্বিত হিসাবে (সাবসিডিয়ারিসহ) বিক্রি থেকে ৩০৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আয় হয়েছে। যার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ৭৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ মাসে বিক্রি কমেছে ৪৬৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার বা ৬০ শতাংশ।
এই বিক্রি ধসে কোম্পানিটির পরিচালন বা মূল ব্যবসায় মুনাফা ৬৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বা ৫৯ শতাংশ কমে এসেছে। কোম্পানিটির আগের অর্থবছরের ৯ মাসের ১০৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার পরিচালন মুনাফা ২০২১-২২ অর্থবছরের একইসময়ে নেমে এসেছে ৪৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকায়।
এই ধসের পেছনে ওরিয়ন ফার্মার সাবসিডিয়ারি ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট ও ডাচ বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড এসোসিয়েটসের সঙ্গে বিপিডিবির চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া কারন হিসেবে রয়েছে। এই দুই পাওয়ার কোম্পানির মধ্যে ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাটের সঙ্গে বিপিডিবির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের মে মাসে। আর ডাচ বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড এসোসিয়েটসের সঙ্গে শেষ হয়েছে একই বছরের জুলাই মাসে। যে কারনে সাবসিডিয়ারি থেকে আয় বন্ধ হয়ে যায়।
এই অবস্থায় পাওয়ার কোম্পানি দুটির পক্ষ থেকে চুক্তি ৫ বছর বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন করে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুত ছাড়া কোন অর্থ দেওয়া হবে না- এমন শর্তে দুই বছরের মেয়াদ বাড়িয়েছে। যাতে বহুল বিতর্কিত বিদ্যুত না দিয়েও ক্যাপাসিটি চার্জবাবদ আয় কমে আসবে।
আরও পড়ুন…..
কারসাজির আইপিডিসি ব্যবসায় পিছিয়ে থাকলেও শেয়ার দরে এগিয়ে
ওরিয়নের সাবসিডিয়ারি থেকে আয় কমে আসলেও ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ মাসে নিট মুনাফা বেড়েছে। এরপেছনে প্রধান কারন হিসেবে রয়েছে অপরিচালন আয়ে বড় উত্থান। কোম্পানিটির আগের অর্থবছরের একইসময়ের ২ কোটি ৯৯ লাখ টাকার অপরিচালন আয় ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ মাসে হয়েছে ৬১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। যার উপর ভর করে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ৭১ কোটি ৮১ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ৩.০৭ টাকা।
ওরিয়ন ফার্মা থেকে (সমন্বিতভাবে) শেয়ারবাজারে ৩টি ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে ৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া অতালিকাভুক্ত ৬টি কোম্পানিতে ৫৯২ কোটি ১৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
এই বিনিয়োগ করতে গিয়ে ওরিয়ন ফার্মা প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ঋণে জড়িয়েছে। কোম্পানিটির সমন্বিতভাবে গত ৩১ মার্চ দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাড়িয়েছে ১ হাজার ৭৬৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এছাড়া ৩৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার দীর্ঘমেয়াদি ঋণের কারেন্ট পোরশন, ২ কোটি ৮১ লাখ টাকার স্বল্পমেয়াদি লিজ ও ৫৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার স্বল্পমেয়াদি ঋণ রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওরিয়ন ফার্মার পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ২৩৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের মালিকানা ৩১.৯৮ শতাংশ। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ২৭.৮৮ শতাংশ, সাধারন বিনিয়োগকারীদের ৩৮.৯৪ শতাংশ ও বিদেশীদের ১.২০ শতাংশ মালিকানা রয়েছে।
বিজনেস আওয়ার/২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২/আরএ
মোটামুটি সব নিউজ পেপারই শেয়ার ব্যবসার সাথে জড়িত। কোন আইটেম মিস করলেই সেটার পেছনে লাগে। তার জন্যই এই নিউজ।