ঢাকা , মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসলামের চতুর্থ পবিত্র শহর ‘হারার’

  • পোস্ট হয়েছে : ০৪:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০২২
  • 17

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: পূর্ব আফ্রিকার ইথিওপিয়ায় বর্ণিল ও প্রশান্তিময় এক শহর ‘হারার’। ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই শহরটি খ্রিস্টান অধ্যুষিত ইথিওপিয়ার বুকে মুসলমানদের এক আপন বসতি। ‘প্রশান্তির শহর’ হিসেবে খ্যাত এই শহরটির সাথে জড়িয়ে আছে আফ্রিকায় ইসলাম আগমনের ইতিহাস।

ইথিওপিয়ার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই শহরটিকে অনেকেই মক্কা, মদীনা ও জেরুসালেমের পর ইসলামের চতুর্থ পবিত্রতম শহর হিসেবে উল্লেখ করেন। মাত্র এক বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই শহরে ৮২টি মসজিদ ও ১০২টি মাজার আছে।

বর্ণিল সংস্কৃতি
২০০৬ সালে এই শহরটিকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের নির্দশনের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে। আফ্রিকান ও ইসলামী সংস্কৃতির সমন্বয় শহরটিকে নিজস্ব এক অনন্যতা দান করেছে। বিশেষ করে, ইথিওপিয়ার অন্যান্য শহরের সাথে এই শহরের সাংস্কৃতিক ভিন্নতা শহরটির বিভিন্ন স্থাপনার মাধ্যমে লক্ষ্য করা যায়।

সাধারণত বিচিত্র রঙে বর্ণিল করে এই শহরের বসতবাড়ী ও অন্যান্য স্থাপনাসমূহ নির্মাণ করা হয়। বসতবাড়ীর অভ্যন্তরে এই রঙের সাজ থাকে এবং বিভিন্ন প্রকার পাত্র, হাড়ী ও ঝুড়ি দিয়ে দেওয়ালগুলো সজ্জিত করা হয়।

ইতিহাস
মক্কায় কুরাইশ প্রভাবশালীদের অত্যাচারে রাসূল (সা.)-এর নওমুসলিম সাহাবীরা যখন জর্জরিত, রাসূল (সা.) তখন তাদেরকে আফ্রিকার তৎকালীন হাবশা রাজ্যে হিজরতের পরামর্শ দান করেন যাতে করে তারা এই অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে পারেন। ইতিহাসে আকসুম রাজ্য নামে পরিচিত এই রাজ্যটি আজকের ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়া নিয়ে গঠিত ছিল। নাজ্জাসী উপাধির একজন ন্যায়বিচারক শাসক তখন এই রাজ্যটি পরিচালনা করতেন। ইসলামের ইতিহাসে এটিই ছিল প্রথম হিজরত।

মক্কা থেকে কিছু সাহাবীর হিজরতের পর মক্কার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য হাবশায় গমন করে। তারা বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দিয়ে নাজ্জাসীকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে এবং তাদের সাথে নওমুসলিমদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করে। কিন্তু নাজ্জাসী এই নওমুসলিমদের সাথে কথা বলা ছাড়া তাদের ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করেন।

হাবশায় আশ্রয় নেওয়া সাহাবীদের সাথে কথা বলার পর মূল বিষয়টি জানতে পেরে নাজ্জাসী তাদেরকে হাবশায় বসবাস করার অনুমতি দান করেন। পাশাপাশি তিনি তাকে প্রদান করা উপহার সামগ্রী ফিরিয়ে দিয়ে কুরাইশ প্রতিনিধি দলের সাথে আশ্রিত নওমুসলিমদের পাঠাতে অস্বীকার করেন।

রাসূল (সা.)-এর হিজরত করা সাহাবীদের মধ্যে অনেকেই বর্তমান ইথিওপিয়ার এই হারার শহরেই বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাদের প্রচারণার মাধ্যমে এই শহরের সকল অধিবাসী ইসলাম গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে আফ্রিকার বুকে ইসলামের প্রথম আবাসভূমি হিসেবে এই শহরটি ইতিহাসের বুকে জায়গা করে নিয়েছে। ফলে অনেকেই এই শহরটিকে ইসলামের চতুর্থ পবিত্রতম শহর হিসেবে উল্লেখ করেন।

স্থানীয় হারারি মুসলমানরা ছাড়াও বর্তমানে এই শহরে ওরমো, সোমালী, আমহারাসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে।

বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের পাশাপাশি এই শান্তিপূর্ণ অবস্থান শহরটিকে এক অনন্য মাত্রার সৌন্দর্য দান করেছে। এমনকি এর ফলে শহরটির একটি নাম দাঁড়িয়েছে “প্রশান্তির শহর” (The city of peace)।

২০০৩ সালে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর এই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কারণে শহরটি ইউনেস্কো পিস প্রাইজ অর্জন করে।

সমগ্র শহরটিই পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় এক দর্শনীয় স্থান। প্রশান্তির এই শহরে ভ্রমণ পর্যটকদের মনেও প্রশান্তির সৃষ্টি করবে।

বিজনেস আওয়ার/১১ অক্টোবর, ২০২২/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ইসলামের চতুর্থ পবিত্র শহর ‘হারার’

পোস্ট হয়েছে : ০৪:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০২২

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: পূর্ব আফ্রিকার ইথিওপিয়ায় বর্ণিল ও প্রশান্তিময় এক শহর ‘হারার’। ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই শহরটি খ্রিস্টান অধ্যুষিত ইথিওপিয়ার বুকে মুসলমানদের এক আপন বসতি। ‘প্রশান্তির শহর’ হিসেবে খ্যাত এই শহরটির সাথে জড়িয়ে আছে আফ্রিকায় ইসলাম আগমনের ইতিহাস।

ইথিওপিয়ার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই শহরটিকে অনেকেই মক্কা, মদীনা ও জেরুসালেমের পর ইসলামের চতুর্থ পবিত্রতম শহর হিসেবে উল্লেখ করেন। মাত্র এক বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই শহরে ৮২টি মসজিদ ও ১০২টি মাজার আছে।

বর্ণিল সংস্কৃতি
২০০৬ সালে এই শহরটিকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের নির্দশনের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে। আফ্রিকান ও ইসলামী সংস্কৃতির সমন্বয় শহরটিকে নিজস্ব এক অনন্যতা দান করেছে। বিশেষ করে, ইথিওপিয়ার অন্যান্য শহরের সাথে এই শহরের সাংস্কৃতিক ভিন্নতা শহরটির বিভিন্ন স্থাপনার মাধ্যমে লক্ষ্য করা যায়।

সাধারণত বিচিত্র রঙে বর্ণিল করে এই শহরের বসতবাড়ী ও অন্যান্য স্থাপনাসমূহ নির্মাণ করা হয়। বসতবাড়ীর অভ্যন্তরে এই রঙের সাজ থাকে এবং বিভিন্ন প্রকার পাত্র, হাড়ী ও ঝুড়ি দিয়ে দেওয়ালগুলো সজ্জিত করা হয়।

ইতিহাস
মক্কায় কুরাইশ প্রভাবশালীদের অত্যাচারে রাসূল (সা.)-এর নওমুসলিম সাহাবীরা যখন জর্জরিত, রাসূল (সা.) তখন তাদেরকে আফ্রিকার তৎকালীন হাবশা রাজ্যে হিজরতের পরামর্শ দান করেন যাতে করে তারা এই অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে পারেন। ইতিহাসে আকসুম রাজ্য নামে পরিচিত এই রাজ্যটি আজকের ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়া নিয়ে গঠিত ছিল। নাজ্জাসী উপাধির একজন ন্যায়বিচারক শাসক তখন এই রাজ্যটি পরিচালনা করতেন। ইসলামের ইতিহাসে এটিই ছিল প্রথম হিজরত।

মক্কা থেকে কিছু সাহাবীর হিজরতের পর মক্কার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য হাবশায় গমন করে। তারা বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দিয়ে নাজ্জাসীকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে এবং তাদের সাথে নওমুসলিমদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করে। কিন্তু নাজ্জাসী এই নওমুসলিমদের সাথে কথা বলা ছাড়া তাদের ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করেন।

হাবশায় আশ্রয় নেওয়া সাহাবীদের সাথে কথা বলার পর মূল বিষয়টি জানতে পেরে নাজ্জাসী তাদেরকে হাবশায় বসবাস করার অনুমতি দান করেন। পাশাপাশি তিনি তাকে প্রদান করা উপহার সামগ্রী ফিরিয়ে দিয়ে কুরাইশ প্রতিনিধি দলের সাথে আশ্রিত নওমুসলিমদের পাঠাতে অস্বীকার করেন।

রাসূল (সা.)-এর হিজরত করা সাহাবীদের মধ্যে অনেকেই বর্তমান ইথিওপিয়ার এই হারার শহরেই বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাদের প্রচারণার মাধ্যমে এই শহরের সকল অধিবাসী ইসলাম গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে আফ্রিকার বুকে ইসলামের প্রথম আবাসভূমি হিসেবে এই শহরটি ইতিহাসের বুকে জায়গা করে নিয়েছে। ফলে অনেকেই এই শহরটিকে ইসলামের চতুর্থ পবিত্রতম শহর হিসেবে উল্লেখ করেন।

স্থানীয় হারারি মুসলমানরা ছাড়াও বর্তমানে এই শহরে ওরমো, সোমালী, আমহারাসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে।

বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের পাশাপাশি এই শান্তিপূর্ণ অবস্থান শহরটিকে এক অনন্য মাত্রার সৌন্দর্য দান করেছে। এমনকি এর ফলে শহরটির একটি নাম দাঁড়িয়েছে “প্রশান্তির শহর” (The city of peace)।

২০০৩ সালে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর এই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কারণে শহরটি ইউনেস্কো পিস প্রাইজ অর্জন করে।

সমগ্র শহরটিই পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় এক দর্শনীয় স্থান। প্রশান্তির এই শহরে ভ্রমণ পর্যটকদের মনেও প্রশান্তির সৃষ্টি করবে।

বিজনেস আওয়ার/১১ অক্টোবর, ২০২২/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: