ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টাকা উত্তোলনের আগে ব্যবসা বাড়ে, পরে কমে

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ অক্টোবর ২০২২
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজার থেকে প্রতিবারই টাকা উত্তোলনের আগে গোল্ডেন হার্ভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের মুনাফা বাড়ে। কিন্তু টাকা উত্তোলন শেষ হতেই ব্যবসা নিম্নমুখী হয়ে যায়। তবে এবার রাইট শেয়ার ইস্যুর পরে কোম্পানিটি আরেক ধাপ এগিয়ে লোকসানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যাতে শেয়ারহোল্ডারদের প্রাপ্তি তলানিতে নেমে এসেছে। দফায় দফায় কোম্পানিটির অর্থ উত্তোলনের আগে ও পরের ব্যবসায়িক এমন চিত্রে বিনিয়োগকারীদের মনে সন্দেহের দাঁনা বেধেঁছে। যা সমাধানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে কোম্পানিটির আর্থিক হিসাব বিশেষ নিরীক্ষার দাবি তাদের।

গোল্ডেন হার্ভেষ্ট শেয়ারবাজার থেকে প্রথম দফায় ২০১৩ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অর্থ সংগ্রহ করে। আর দ্বিতীয় দফায় ২০১৯ সালে রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে।

কোম্পানিটি ১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে শেয়ারবাজার থেকে রাইট ইস্যুর জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। ৪টি সাধারন শেয়ারের বিপরীতে ৩টি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৮৯ কোটি ৯৩ লাখ ২৩ হাজার ৪২০ টাকা সংগ্রহ করে। প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা মূল্যে ইস্যুর মাধ্যমে এই টাকা সংগ্রহ করে। এরমধ্যে ২৯ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৩ সালে কোম্পানিটি ব্যবসা সম্প্রসারন ও ঋণ পরিশোধের কথা বলে শেয়ারবাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। প্রতিটি শেয়ার ২৫ টাকা করে ইস্যুর মাধ্যমে এই টাকা সংগ্রহ করে। ওইসময় ৩৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭৮ হাজার ৭০৩ টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করার কথা বলেছিল।

এই কোম্পানিটির পর্ষদ রাইটে অর্থ সংগ্রহের পরে ৬ মাসের ব্যবধানের ব্যবসায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরের অর্থবছর ৫% দিলেও ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ শতাংশে নেমে এসেছে।

লভ্যাংশে দূর্বল এই কোম্পানিটির আইপিওর ন্যায় রাইট ইস্যুর মাধ্যমে টাকা সংগ্রহের পরেও ব্যবসা নিম্নমুখী। যে কোম্পানিটির টাকা উত্তোলনের সময় আসলে মুনাফা উর্ধ্বমূখী হয়ে যায়।

কোম্পানিটির আইপিওকালীন ৬ মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর ২০১২) ২.৩২ টাকার ইপিএস কমতে কমতে ২০১৬-১৭ এর পুরো অর্থবছরে ১.৮৯ টাকায় নেমে আসে। এরপরে যখন রাইট ইস্যু করতে চায়, তখন আবার ইপিএস বাড়তে শুরু করে।

রাইট ইস্যুর জন্য গোল্ডেন হার্ভেষ্ট কর্তৃপক্ষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এক বা প্রথম প্রান্তিকেই (জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৮) ইপিএস দেখায় ১.৪৬ টাকা। সেই কোম্পানির রাইটে অর্থ সংগ্রহের বছরেই (২০১৯-২০) ০.০৪ টাকা বা ৪ পয়সায় নেমে আসে। যা সর্বশেষ ২ অর্থবছরে লোকসানে গিয়ে ঠেকেছে। এরমধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৭২ পয়সা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৭ পয়সা করে লোকসান হয়েছে।

গোল্ডেন হার্ভেস্ট বিভিন্ন ড্রাই ফুড, আইসক্রীম, দুধ ইত্যাদি পণ্য তৈরী ও বাজারজাতকরন করে। এসব পণ্যের চাহিদা সবসময় রয়েছে। এমনকি অস্বাভাবিক চাহিদার কারনে দুধের দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া করোনার মধ্যে ঠান্ডা জাতীয় পণ্যে বিশেষ সতর্ক থাকতে বললেও লাভেলো আইসক্রীম মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু গোল্ডেন হার্ভেস্ট ব্যবসায় পতন দেখিয়েছে। তবে ব্যবসায় এমন পতনের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বিএসইসির নির্দেশনা থাকলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সেটাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে।

এসব কারনে গোল্ডেন হার্ভেস্টের আইপিও এবং রাইট শেয়ার ইস্যুর আগের ও পরের আর্থিক হিসাব নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সন্দেহের দাঁনা বেধেছে। কোম্পানিটি অর্থ সংগ্রহের পূর্বে অতিরঞ্জিত মুনাফা দেখায়, অন্যথায় এখন শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারনার জন্য ব্যবসায় ধস দেখাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। যে কারনে বিভিন্ন কোম্পানির ন্যায় গোল্ডেন হার্ভেস্টের আর্থিক হিসাব পূণ:নিরীক্ষার দাবি তুলেছেন বিনিয়োগকারীরা।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া গোল্ডেন হার্ভেস্টের বর্তমানে ২১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬৭.১১ শতাংশ। রবিবার (৩০ অক্টোবর) এ কোম্পানিটির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১৭.৫০ টাকায়।

বিজনেস আওয়ার/৩১ অক্টোবর, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

টাকা উত্তোলনের আগে ব্যবসা বাড়ে, পরে কমে

পোস্ট হয়েছে : ১০:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ অক্টোবর ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজার থেকে প্রতিবারই টাকা উত্তোলনের আগে গোল্ডেন হার্ভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের মুনাফা বাড়ে। কিন্তু টাকা উত্তোলন শেষ হতেই ব্যবসা নিম্নমুখী হয়ে যায়। তবে এবার রাইট শেয়ার ইস্যুর পরে কোম্পানিটি আরেক ধাপ এগিয়ে লোকসানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যাতে শেয়ারহোল্ডারদের প্রাপ্তি তলানিতে নেমে এসেছে। দফায় দফায় কোম্পানিটির অর্থ উত্তোলনের আগে ও পরের ব্যবসায়িক এমন চিত্রে বিনিয়োগকারীদের মনে সন্দেহের দাঁনা বেধেঁছে। যা সমাধানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে কোম্পানিটির আর্থিক হিসাব বিশেষ নিরীক্ষার দাবি তাদের।

গোল্ডেন হার্ভেষ্ট শেয়ারবাজার থেকে প্রথম দফায় ২০১৩ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অর্থ সংগ্রহ করে। আর দ্বিতীয় দফায় ২০১৯ সালে রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে।

কোম্পানিটি ১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে শেয়ারবাজার থেকে রাইট ইস্যুর জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। ৪টি সাধারন শেয়ারের বিপরীতে ৩টি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৮৯ কোটি ৯৩ লাখ ২৩ হাজার ৪২০ টাকা সংগ্রহ করে। প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা মূল্যে ইস্যুর মাধ্যমে এই টাকা সংগ্রহ করে। এরমধ্যে ২৯ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৩ সালে কোম্পানিটি ব্যবসা সম্প্রসারন ও ঋণ পরিশোধের কথা বলে শেয়ারবাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। প্রতিটি শেয়ার ২৫ টাকা করে ইস্যুর মাধ্যমে এই টাকা সংগ্রহ করে। ওইসময় ৩৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭৮ হাজার ৭০৩ টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করার কথা বলেছিল।

এই কোম্পানিটির পর্ষদ রাইটে অর্থ সংগ্রহের পরে ৬ মাসের ব্যবধানের ব্যবসায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরের অর্থবছর ৫% দিলেও ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ শতাংশে নেমে এসেছে।

লভ্যাংশে দূর্বল এই কোম্পানিটির আইপিওর ন্যায় রাইট ইস্যুর মাধ্যমে টাকা সংগ্রহের পরেও ব্যবসা নিম্নমুখী। যে কোম্পানিটির টাকা উত্তোলনের সময় আসলে মুনাফা উর্ধ্বমূখী হয়ে যায়।

কোম্পানিটির আইপিওকালীন ৬ মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর ২০১২) ২.৩২ টাকার ইপিএস কমতে কমতে ২০১৬-১৭ এর পুরো অর্থবছরে ১.৮৯ টাকায় নেমে আসে। এরপরে যখন রাইট ইস্যু করতে চায়, তখন আবার ইপিএস বাড়তে শুরু করে।

রাইট ইস্যুর জন্য গোল্ডেন হার্ভেষ্ট কর্তৃপক্ষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এক বা প্রথম প্রান্তিকেই (জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৮) ইপিএস দেখায় ১.৪৬ টাকা। সেই কোম্পানির রাইটে অর্থ সংগ্রহের বছরেই (২০১৯-২০) ০.০৪ টাকা বা ৪ পয়সায় নেমে আসে। যা সর্বশেষ ২ অর্থবছরে লোকসানে গিয়ে ঠেকেছে। এরমধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৭২ পয়সা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৭ পয়সা করে লোকসান হয়েছে।

গোল্ডেন হার্ভেস্ট বিভিন্ন ড্রাই ফুড, আইসক্রীম, দুধ ইত্যাদি পণ্য তৈরী ও বাজারজাতকরন করে। এসব পণ্যের চাহিদা সবসময় রয়েছে। এমনকি অস্বাভাবিক চাহিদার কারনে দুধের দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া করোনার মধ্যে ঠান্ডা জাতীয় পণ্যে বিশেষ সতর্ক থাকতে বললেও লাভেলো আইসক্রীম মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু গোল্ডেন হার্ভেস্ট ব্যবসায় পতন দেখিয়েছে। তবে ব্যবসায় এমন পতনের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বিএসইসির নির্দেশনা থাকলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সেটাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে।

এসব কারনে গোল্ডেন হার্ভেস্টের আইপিও এবং রাইট শেয়ার ইস্যুর আগের ও পরের আর্থিক হিসাব নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সন্দেহের দাঁনা বেধেছে। কোম্পানিটি অর্থ সংগ্রহের পূর্বে অতিরঞ্জিত মুনাফা দেখায়, অন্যথায় এখন শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারনার জন্য ব্যবসায় ধস দেখাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। যে কারনে বিভিন্ন কোম্পানির ন্যায় গোল্ডেন হার্ভেস্টের আর্থিক হিসাব পূণ:নিরীক্ষার দাবি তুলেছেন বিনিয়োগকারীরা।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া গোল্ডেন হার্ভেস্টের বর্তমানে ২১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬৭.১১ শতাংশ। রবিবার (৩০ অক্টোবর) এ কোম্পানিটির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১৭.৫০ টাকায়।

বিজনেস আওয়ার/৩১ অক্টোবর, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: