ঢাকা , শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাসডাকের অনুষ্ঠানে মদ্যপান করে ডিএসই সিটিও’র অস্বাভাবিক আচরণ

  • পোস্ট হয়েছে : ০২:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর ২০২২
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : লেনদেন বিঘ্নের ঘটনায় বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) জিয়াউল করিম-কে নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ডিএসইর পক্ষ থেকে নাসডাকের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করেন জিয়াউল করিম এই বিতর্কের জন্ম দিয়েছন। এতে ডিএসইর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে অভিযোগ ডিএসইর কর্মকর্তাদের।

সম্প্রতি লেনদেনে বিঘ্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে জিয়াউল করিমকে ডিএসইর সিটিও পদ থেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত ৩১ অক্টোবর বিএসইসি থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়।

বিএসইসি জিয়াউল করিমকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর পর প্রকাশে এসেছে নাসডাকে গিয়ে মদ্যপান করে জিয়াউল করিমের অস্বাভাবিক আচরণের বিষয়টি। তবে ঘটনাটি ঘটেছে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর আগে। নাসডাকের দাওয়াতে গিয়ে মদ্যপান অবস্থায় জিয়াউল করিমের নাচানাচির একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

বিজনেস আওয়ারের কাছেও এসেছে এই ভিডিও। ভিডিওতে দেখা যায় মদের গ্লাস হাতে দিয়ে প্রথমে জিয়াউল করিম দু’হাত তুলে নাচানাচি করছেন। এরপর কিছু দুরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন নারীর সামনে গিয়ে নাচানাচি করছেন ডিএসইর সিটিও।

এ বিষয়ে ডিএসইর এক কর্মকর্তা বলেন, নাসডাকের অনুষ্ঠানে গিয়ে সিটিও যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা নিয়ে কয়েকদিন ধরেই অফিসে ব্যাপক আলোচনা চলছে। গুঞ্জন ছড়িয়েছে মদ্যপান করে নাচানাচির পাশাপাশি আর একজনের মদের গ্লাস নিয়ে নেন। অনুষ্ঠানে সিটিও’র আচরণ নিয়ে নাসডাক থেকে মৌখিক অভিযোগও করা হয়েছে।

ডিএসইর আরেক কর্মকর্তা বলেন, নাসডাকের অনুষ্ঠানে গিয়ে সিটিও যে কাণ্ড ঘটিয়েছে, তাতে ডিএসইর ভাতমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। বোর্ডের অনেক সদস্য বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ। কিন্তু সতন্ত্র পরিচালকদের একটি অংশ সিটিও’র পক্ষে রয়েছেন। যে কারণে সিটিও’র ভিডিও আসার পরও পরিচালনা পর্ষদ থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সিটিওকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, অফিস, আদালত কোনো জায়গায় সমস্যা থাকলে এগুলো হয়। কখনো ছুটিতে পাঠায়, কখনো শোকজ করে। সে রকমের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে আমরা এটাকে দেখছি। আমরা মনে করি অফিসিয়াল সিস্টেমের মধ্যে পদ্ধতি অনুযায়ী হচ্ছে।

নাসডাকের অনুষ্ঠানে গিয়ে মদ্যপান অবস্থায় সিটিও যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমাদের কোনো রিপোর্ট হয়নি। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। অফিসিয়ালে কোনো অভিযোগ আমরা পায়নি। তবে এ রকম (ভিডিও) একটি জিনিস পাবলিস হয়েছে আমরা দেখেছি।

নাসডাকের অনুষ্ঠানে তিনি তো ডিএসইর প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সে ক্ষেত্রে ডিএসইর ভাতমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে কি না? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হ্যা, তিনি ডিএসইর প্রতিনিধিত্ব করেন। তবে এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো রিপোর্ট হয়নি। অফিসিয়ালি রিপোর্ট হলে আমরা সেটা অফিসিয়ালি ডিল করবো।

এদিকে সম্প্রতি ডিএসইতে লেনদেনে বিঘ্ন ঘটায় গত ৩১ অক্টোবর কমিশন সভা করে ডিএসই সিটিওকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এ বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে নিরবিচ্ছিন্ন লেনদেন বাধাগ্রস্ত হয় এবং পূর্বেও বিভিন্ন কমিটি ডিএসইর আইটি কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাই শেয়ারবাজারের উন্নয়নে এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কমিশন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

বিএসইসির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, এই তদন্ত সংক্রান্ত বিষয়ে সম্পূর্ণ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ডিএসইর সিটিও-কে বাধ্যতামূলকভাবে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

পাশাপাশি ডিএসইর বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের অবিলম্বে সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য আইটি বিভাগকে দক্ষ মানবসম্পদ দিয়ে ঢেলে সাজানোসহ নতুন মানবসম্পদ নিয়োগের মাধ্যমে যুগোপযোগী আইটি ফাংশন গড়ে তুলতে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

এর আগে ২৪ অক্টোবর কারিগরি ত্রুটির কারণে ডিএসইতে লেনদেন বিঘ্নের ঘটনা ঘটলে ডিএসইর কারিগরি ত্রুটির কারণ ও সংস্থাটির প্রযুক্তিব্যবস্থার কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি।

পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় বিএসইসির পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসানকে। কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে, বিএসইসির উপপরিচালক মোহাম্মদ ওরাইসুল হাসান, সিসিবিএলের মহাব্যবস্থাপক ইমাম হোসাইন, সিডিবিএলের মহাব্যবস্থাপক মঈনুল হক ও বিএসইসির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ দস্তগীর হোসাইনকে। কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

বিজনেস আওয়ার/২২ নভেম্বর, ২০২২/পিএস

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

নাসডাকের অনুষ্ঠানে মদ্যপান করে ডিএসই সিটিও’র অস্বাভাবিক আচরণ

পোস্ট হয়েছে : ০২:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : লেনদেন বিঘ্নের ঘটনায় বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) জিয়াউল করিম-কে নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ডিএসইর পক্ষ থেকে নাসডাকের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করেন জিয়াউল করিম এই বিতর্কের জন্ম দিয়েছন। এতে ডিএসইর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে অভিযোগ ডিএসইর কর্মকর্তাদের।

সম্প্রতি লেনদেনে বিঘ্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে জিয়াউল করিমকে ডিএসইর সিটিও পদ থেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত ৩১ অক্টোবর বিএসইসি থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়।

বিএসইসি জিয়াউল করিমকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর পর প্রকাশে এসেছে নাসডাকে গিয়ে মদ্যপান করে জিয়াউল করিমের অস্বাভাবিক আচরণের বিষয়টি। তবে ঘটনাটি ঘটেছে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর আগে। নাসডাকের দাওয়াতে গিয়ে মদ্যপান অবস্থায় জিয়াউল করিমের নাচানাচির একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

বিজনেস আওয়ারের কাছেও এসেছে এই ভিডিও। ভিডিওতে দেখা যায় মদের গ্লাস হাতে দিয়ে প্রথমে জিয়াউল করিম দু’হাত তুলে নাচানাচি করছেন। এরপর কিছু দুরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন নারীর সামনে গিয়ে নাচানাচি করছেন ডিএসইর সিটিও।

এ বিষয়ে ডিএসইর এক কর্মকর্তা বলেন, নাসডাকের অনুষ্ঠানে গিয়ে সিটিও যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা নিয়ে কয়েকদিন ধরেই অফিসে ব্যাপক আলোচনা চলছে। গুঞ্জন ছড়িয়েছে মদ্যপান করে নাচানাচির পাশাপাশি আর একজনের মদের গ্লাস নিয়ে নেন। অনুষ্ঠানে সিটিও’র আচরণ নিয়ে নাসডাক থেকে মৌখিক অভিযোগও করা হয়েছে।

ডিএসইর আরেক কর্মকর্তা বলেন, নাসডাকের অনুষ্ঠানে গিয়ে সিটিও যে কাণ্ড ঘটিয়েছে, তাতে ডিএসইর ভাতমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। বোর্ডের অনেক সদস্য বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ। কিন্তু সতন্ত্র পরিচালকদের একটি অংশ সিটিও’র পক্ষে রয়েছেন। যে কারণে সিটিও’র ভিডিও আসার পরও পরিচালনা পর্ষদ থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সিটিওকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, অফিস, আদালত কোনো জায়গায় সমস্যা থাকলে এগুলো হয়। কখনো ছুটিতে পাঠায়, কখনো শোকজ করে। সে রকমের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে আমরা এটাকে দেখছি। আমরা মনে করি অফিসিয়াল সিস্টেমের মধ্যে পদ্ধতি অনুযায়ী হচ্ছে।

নাসডাকের অনুষ্ঠানে গিয়ে মদ্যপান অবস্থায় সিটিও যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমাদের কোনো রিপোর্ট হয়নি। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। অফিসিয়ালে কোনো অভিযোগ আমরা পায়নি। তবে এ রকম (ভিডিও) একটি জিনিস পাবলিস হয়েছে আমরা দেখেছি।

নাসডাকের অনুষ্ঠানে তিনি তো ডিএসইর প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সে ক্ষেত্রে ডিএসইর ভাতমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে কি না? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হ্যা, তিনি ডিএসইর প্রতিনিধিত্ব করেন। তবে এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো রিপোর্ট হয়নি। অফিসিয়ালি রিপোর্ট হলে আমরা সেটা অফিসিয়ালি ডিল করবো।

এদিকে সম্প্রতি ডিএসইতে লেনদেনে বিঘ্ন ঘটায় গত ৩১ অক্টোবর কমিশন সভা করে ডিএসই সিটিওকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এ বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে নিরবিচ্ছিন্ন লেনদেন বাধাগ্রস্ত হয় এবং পূর্বেও বিভিন্ন কমিটি ডিএসইর আইটি কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাই শেয়ারবাজারের উন্নয়নে এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কমিশন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

বিএসইসির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, এই তদন্ত সংক্রান্ত বিষয়ে সম্পূর্ণ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ডিএসইর সিটিও-কে বাধ্যতামূলকভাবে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

পাশাপাশি ডিএসইর বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের অবিলম্বে সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য আইটি বিভাগকে দক্ষ মানবসম্পদ দিয়ে ঢেলে সাজানোসহ নতুন মানবসম্পদ নিয়োগের মাধ্যমে যুগোপযোগী আইটি ফাংশন গড়ে তুলতে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

এর আগে ২৪ অক্টোবর কারিগরি ত্রুটির কারণে ডিএসইতে লেনদেন বিঘ্নের ঘটনা ঘটলে ডিএসইর কারিগরি ত্রুটির কারণ ও সংস্থাটির প্রযুক্তিব্যবস্থার কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি।

পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় বিএসইসির পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসানকে। কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে, বিএসইসির উপপরিচালক মোহাম্মদ ওরাইসুল হাসান, সিসিবিএলের মহাব্যবস্থাপক ইমাম হোসাইন, সিডিবিএলের মহাব্যবস্থাপক মঈনুল হক ও বিএসইসির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ দস্তগীর হোসাইনকে। কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

বিজনেস আওয়ার/২২ নভেম্বর, ২০২২/পিএস

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: