ঢাকা , রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৫ বলে ৫ ছক্কা মেরে কলকাতার নায়ক হলেন রিংকু

  • পোস্ট হয়েছে : ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩
  • 4

স্পোর্টস ডেস্ক: ৫ বলে কলকাতার জয়ের জন্য দরকার ২৮ রান-এমন সমীকরণ নিয়ে কেইবা বাজি ধরতো! তবে স্বীকৃত টি–টোয়েন্টিতে এতদিন যা কেউ দেখেনি, সেটিই করে দেখালেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের রিংকু সিং। গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ম্যাচের শেষ ৫ বলে ৫ ছক্কা মেরে কলকাতাকে ৩ উইকেটের অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিলেন। কমেন্ট্রিবক্সে ক্যারিবীয় ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ থাকলে নিশ্চিত বলতেন, রিংকু সিং-রিমেম্বার দ্য নেইম। তবে কলকাতার সমর্থক তো বটেই ক্রিকেট ফ্যানদের হৃদয়েই যে গেঁথে গেল নামটা।

অবশ্য প্রায় অসাধ্য সমীকরণ মেলানোর আগে জীবনের অংকেও অনেক কঠিন সমীকরণ মেলাতে হয়েছে রিংকু সিংকে। আলীগড়ের এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’দশা। রিংকুর বাবা খানচাঁদ সিংহ গ্যাসের সিলিন্ডার বিলির কাজ করতেন। ছোট দুটি কামরায় চার ভাই-বোন এবং মা-বাবাকে নিয়ে ঠাসাঠাসি করে থাকতেন। দু’বেলা ঠিকমতো খাবারও জুটত না।

ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু অভাবের সংসারে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখাও বিলাসিতা। রিংকু সিংহ তবুও স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্ন সত্যি করার যাবতীয় চেষ্টাও করেছেন। দিল্লির একটা টুর্নামেন্টে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হন রিংকু, পুরস্কার হিসেবে পান একটা মোটরবাইক। বাবার হাতে তুলে দেন বাইকের চাবি। এরপর সিলিন্ডার সরবরাহের কাজটা আরও সহজ হয় তার।

শোনা যায়, অভাব অনটনের সংসারে কিছুটা খরচ চালাতে কিছুদিন ঝাড়ুদারের কাজও করতে হয় রিংকু সিংকে। এমন পরিস্থিতির পর অনেকেই হয়তো ক্রিকেটটা ছেড়ে দিতো। তবে দমে যাননি রিংকু। ক্রিকেট চালিয়ে যান। মাত্র ১৭ বছর বয়সে সুযোগ পেয়ে যান উত্তরপ্রদেশের রাজ্য দলে। লিস্ট এ ম্যাচ খেলেন তার রাজ্যের হয়ে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আবির্ভাব ২০১৬ সালে।

২০১৮ সালের আইপিএল নিলামে নাম লিখিয়েছিলেন, কেউ কিনবেন বলে আশাই করেননি। আর কিনলেও ভিত্তিমূল্য ২০ লাখ রুপি জুটবে বলেই ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গেল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স আর কলকাতা নাইট রাইডার্সের মধ্যে। দাম ওঠে ৮০ লাখ রুপি। ওই অর্থযোগেই রাতারাতি বদলে যায় সবকিছু। ভালো একটা বিয়ে দেওয়া গেল বড় ভাইকে, বড় বোনের বিয়ের জন্যও ব্যাংকে জমা পড়ল কিছু পরিমাণ অর্থ।

অবশ্য অখ্যাত এক ক্রিকেটারের জন্য এত টাকা ঢালা কি কেকেআরের উচিত হয়েছে কি না এমন প্রশ্নও শোনা যাচ্ছিল। প্রথম দিকে খুব একটা সুযোগ পেতেন না। প্রথম চার বছরে বলতে গেলে বদলি ফিল্ডার হিসেবে সুযোগ পেতে। কত কম ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন সেটি দেখা যাবে এক পরিসংখ্যানে। চার বছরে ম্যাচ খেলেছেন মোটে ১১টি। তবে গেল ২০২২ আইপিএলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেন নাইটদের হয়ে। সাতটি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। করেন ১৭৪ রান।

দলে নিয়মিত সুযোগ না পাওয়া রিংকু কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে বদলেছেন প্রতিনিয়ত। চেষ্টা করেন রিংকু। লড়াই করার চেষ্টা। নিজের জীবন থেকেই সেই রসদ পেয়েছেন। যে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে ওঠে এসেছেন, ক্রিকেট মাঠে সেটারই প্রতিফলন দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যান দলকে জেতানোর। সর্বশেষ পারলেনও।

বিজনেস আওয়ার/১০ এপ্রিল, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

৫ বলে ৫ ছক্কা মেরে কলকাতার নায়ক হলেন রিংকু

পোস্ট হয়েছে : ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩

স্পোর্টস ডেস্ক: ৫ বলে কলকাতার জয়ের জন্য দরকার ২৮ রান-এমন সমীকরণ নিয়ে কেইবা বাজি ধরতো! তবে স্বীকৃত টি–টোয়েন্টিতে এতদিন যা কেউ দেখেনি, সেটিই করে দেখালেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের রিংকু সিং। গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ম্যাচের শেষ ৫ বলে ৫ ছক্কা মেরে কলকাতাকে ৩ উইকেটের অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিলেন। কমেন্ট্রিবক্সে ক্যারিবীয় ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ থাকলে নিশ্চিত বলতেন, রিংকু সিং-রিমেম্বার দ্য নেইম। তবে কলকাতার সমর্থক তো বটেই ক্রিকেট ফ্যানদের হৃদয়েই যে গেঁথে গেল নামটা।

অবশ্য প্রায় অসাধ্য সমীকরণ মেলানোর আগে জীবনের অংকেও অনেক কঠিন সমীকরণ মেলাতে হয়েছে রিংকু সিংকে। আলীগড়ের এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’দশা। রিংকুর বাবা খানচাঁদ সিংহ গ্যাসের সিলিন্ডার বিলির কাজ করতেন। ছোট দুটি কামরায় চার ভাই-বোন এবং মা-বাবাকে নিয়ে ঠাসাঠাসি করে থাকতেন। দু’বেলা ঠিকমতো খাবারও জুটত না।

ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু অভাবের সংসারে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখাও বিলাসিতা। রিংকু সিংহ তবুও স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্ন সত্যি করার যাবতীয় চেষ্টাও করেছেন। দিল্লির একটা টুর্নামেন্টে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হন রিংকু, পুরস্কার হিসেবে পান একটা মোটরবাইক। বাবার হাতে তুলে দেন বাইকের চাবি। এরপর সিলিন্ডার সরবরাহের কাজটা আরও সহজ হয় তার।

শোনা যায়, অভাব অনটনের সংসারে কিছুটা খরচ চালাতে কিছুদিন ঝাড়ুদারের কাজও করতে হয় রিংকু সিংকে। এমন পরিস্থিতির পর অনেকেই হয়তো ক্রিকেটটা ছেড়ে দিতো। তবে দমে যাননি রিংকু। ক্রিকেট চালিয়ে যান। মাত্র ১৭ বছর বয়সে সুযোগ পেয়ে যান উত্তরপ্রদেশের রাজ্য দলে। লিস্ট এ ম্যাচ খেলেন তার রাজ্যের হয়ে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আবির্ভাব ২০১৬ সালে।

২০১৮ সালের আইপিএল নিলামে নাম লিখিয়েছিলেন, কেউ কিনবেন বলে আশাই করেননি। আর কিনলেও ভিত্তিমূল্য ২০ লাখ রুপি জুটবে বলেই ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গেল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স আর কলকাতা নাইট রাইডার্সের মধ্যে। দাম ওঠে ৮০ লাখ রুপি। ওই অর্থযোগেই রাতারাতি বদলে যায় সবকিছু। ভালো একটা বিয়ে দেওয়া গেল বড় ভাইকে, বড় বোনের বিয়ের জন্যও ব্যাংকে জমা পড়ল কিছু পরিমাণ অর্থ।

অবশ্য অখ্যাত এক ক্রিকেটারের জন্য এত টাকা ঢালা কি কেকেআরের উচিত হয়েছে কি না এমন প্রশ্নও শোনা যাচ্ছিল। প্রথম দিকে খুব একটা সুযোগ পেতেন না। প্রথম চার বছরে বলতে গেলে বদলি ফিল্ডার হিসেবে সুযোগ পেতে। কত কম ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন সেটি দেখা যাবে এক পরিসংখ্যানে। চার বছরে ম্যাচ খেলেছেন মোটে ১১টি। তবে গেল ২০২২ আইপিএলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেন নাইটদের হয়ে। সাতটি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। করেন ১৭৪ রান।

দলে নিয়মিত সুযোগ না পাওয়া রিংকু কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে বদলেছেন প্রতিনিয়ত। চেষ্টা করেন রিংকু। লড়াই করার চেষ্টা। নিজের জীবন থেকেই সেই রসদ পেয়েছেন। যে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে ওঠে এসেছেন, ক্রিকেট মাঠে সেটারই প্রতিফলন দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যান দলকে জেতানোর। সর্বশেষ পারলেনও।

বিজনেস আওয়ার/১০ এপ্রিল, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: