আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে বাধা দিলে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার (২৪ মে) এক টুইট বার্তায় প্রথমে এমন হুঁশিয়ারি দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এরপর দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি নিশ্চিত করে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনে ‘অনিয়ম’ করার দায়ে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিল যেসব দেশ—
নাইজেরিয়া
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বোলা আহমেদ তিনিবু। তবে এ নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে গত ১৬ মে কয়েকজন নাইজেরিয়ানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন প্রশাসন।
ওইদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তারা ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন। ভোটের ফলাফলে কারচুপি করেছেন এবং নাইজেরিয়ার গণতান্ত্রিক ধারাকে বাধাগ্রস্ত করেছেন।’
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ব্যাপারে হুমকি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তবে কাদের ওপর নিষেধাজ্ঞ আরোপ করা হয়েছে। তাদের নাম বা পরিচয় কিছুই প্রকাশ করা হয়নি।
উগান্ডা
২০২১ সালে আফ্রিকারই আরেক দেশ উগান্ডায় নির্বাচনের কারচুপির দায়ে কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ওই বছরের জানুয়ারিতে উগান্ডায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এতে জয় পান ১৯৮৬ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা ইউয়েরি মুসেভেনি।
উগান্ডায়ও কাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেটি প্রকাশ্যে জানানো হয়নি। তবে ওই সময় নির্বাচনে কারচুপির বিষয়টি অস্বীকার করেছিল উগান্ডার সরকার।
বেলারুশ
২০২০ সালে ইউরোপের দেশ বেলারুশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো জয় পান।
ওই নির্বাচনে কারচুপি ও নির্বাচন পরবর্তী বিক্ষোভে দমন-নিপীড়নের অভিযোগে ৮ বেলারুশিয়ানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এছাড়া ওই সময় বেলারুশের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়নও।
নিকারুগুয়া
২০২১ সালে মধ্য আমেরিকার দেশ নিকারুগুয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এতে পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ড্যানিয়েল ওরতেগা।
নির্বাচনে কারচুপি এবং এতে সহায়তা করার অভিযোগে বিচারক, সরকারি কৌঁসুলি, সংসদ সদস্য এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
গেরিলা যোদ্ধা থেকে রাজনীতিতে আসা ড্যানিয়েল ওরতেগা ওই বছর চতুর্থবারের মতো প্রেসিডেন্ট হন। কিন্তু নির্বাচনে ব্যাপক অসংগতি ধরা পড়ে এবং যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের ফলাফলকে ‘অবৈধ’ হিসেবে আখ্যা করে।
সোমালিয়া
২০২২ সালে আফ্রিকার দেশ সোমালিয়ার সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছিলেন, যাদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তারা সোমালিয়ার গণতান্ত্রিক ধারাকে বাধাগ্রস্ত করছেন, বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন করছেন।
অন্যান্য কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞা
নির্বাচনে কারচুপি করা ছাড়াও অন্যান্য কারণেও ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানে নারীদের কাজ করার অধিকার খর্ব করার কারণে, মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ওপর জান্তা সরকারের দমন-নিপীড়নের কারণে এবং অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় পাকিস্তানের কয়েকজনের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল দেশটি।
এছাড়া প্রতিবছর মানবাধিকার দিবসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগেও ব্যক্তি পর্যায়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় তাদের পরিবারের নিকটতম সদস্যরাও এর আওতায় পড়েন। এ নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য ভিসা পান না। এমনকি ভিসা দেওয়া থাকলেও সেটি বাতিল করে দেওয়া হয়।
সূত্র: রয়টার্স, সিএনএন, সোমালি গার্ডিয়ান
বিজনেস আওয়ার/২৫ মে, ২০২৩/এএইচএ