ঢাকা , বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য নেই দুঃসংবাদ

  • পোস্ট হয়েছে : ০৪:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩
  • 0

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য কোন সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ নেই। শেয়ারবাজারের চলমান সুবিধা বহাল রেখেই আসন্ন বাজেট ঘোষনা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী। সেই প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজার বান্ধব হবে, এমনটাই মনে করেছিলেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের সেই প্রত্যাশা মরিচিকায় রুপান্তর নিলো। মানে চলমান সুযোগ সুবিধা বহাল রেখেই অর্থমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট। ফলে আসন্ন বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য কোন সুসংবাদ নেই। তবে কোন দু:সংবাদও নেই। অনেকটা চলতি অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) কপি বললে, ভূল হবে না।

আসন্ন বাজেটকে (২০২৩-২৪ অর্থবছর) কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছিল। তারা বলে আসছিল এবারের বাজেটে শেয়ারবাজার উন্নয়নে বেশকিছু সুবিধা থাকবে। ফলে শেয়ারবাজর প্রাণবন্ত ও বিনিয়োগবান্ধব হবে। একই সঙ্গে এসব সুবিধায় পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াবে শেয়ারবাজার। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সেই ধরনের তেমন কিছু নেই বললেই চলে।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট

এদিকে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন আশায় ডিএসই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীতে প্রাক-বাজেটে বেশিকিছু দাবিদাবা পেশ করেছিল। সেই দাবিগুলো হলো- বন্ড থেকে সুদের আয়ের উপর কর অব্যাহতি, লভ্যাংশ আয়ের উপর উৎসে কর সম্পূর্ণ এবং চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হিসাবে বিবেচনাকরণ, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর্পোরেট করের হার হ্রাস, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর্পোরেট করের হার হ্রাস, স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেকহোল্ডারদের উৎসে কর হ্রাস, স্টক ডিলারগণের শেয়ার লেনদেন থেকে কর অব্যাহতি।

ডিএসইর কর্তৃপক্ষ প্রাক-বাজেটে এনবিআরকে জানায়, বর্তমানে কর্পোরেট বন্ডের বাজারের আকার খুবই ছোট, এটি শেয়ারবাজারের পাশাপাশি অর্থ বাজারেরও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। একটি কার্যকরী বন্ডের বাজার, অর্থনীতিকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে পারে। যদি সব ধরনের বন্ডের সুদ অব্যাহতির আওতায় আনা হয়, তবে তা একটি শক্তিশালী বন্ড বাজার সৃষ্টিতে উৎসাহিত করবে। তাই জিরো কুপন বন্ডের অনুরূপ স্টক এক্সচেঞ্জের যেকোন বোর্ডে তালিকাভুক্ত কোন কর্পোরেট বন্ড থেকে উদ্ভুত সুদ থেকে আয়ের উপর সকল শ্রেণীর ইস্যুকারী এবং বিনিয়োগকারীদের ৬ষ্ঠ তফসিল, পার্ট-এ এর অধীনে কর অব্যাহতি চেয়েছিল ডিএসই।

কোম্পানিগুলো কর-পরবর্তী মুনাফা থেকে লভ্যাংশ দিচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে, লভ্যাংশের উপর কর এক ধরণের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের করারোপণ। লভ্যাংশের উপর উৎস কর চূড়ান্ত কর হিসাবে বিবেচিত হলে, এটি বিনিয়োগকারীদের অসুবিধা কমাবে। তাই লভ্যাংশ আয়ের উপর উৎস কর ধারা ৮২(সি) এর অধীনে চূড়ান্ত কর দায় হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। এছাড়া কর্পোরেট শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশের উপর করের হার ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার দাবি ছিল।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক তথ্য এবং কর্পোরেট গভর্ন্যান্স সংক্রান্ত বিশদ বিবরণ প্রকাশ করতে হয়। তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়ানো গেলে মোট রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে। হ্রাসকৃত করের হার বহুজাতিক এবং ভালমানের কোম্পানিগুলোকে এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করবে। তাই তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর হারের পার্থক্য ১২ দশমিক ৫ শতাংশ করার দাবি রেখেছিল।

ডিএসইর ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির প্রধান আয় (অর্থাত টার্নওভার) হচ্ছে কমিশন। যদি বেশি হারে কর নেয়া হয়, তবে ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির পক্ষে টিকে থাকা এবং শেয়ারবাজারে অবদান রাখা কঠিন হবে। ফলে যৌক্তিক কারণে লেনদেন মূল্যের উপর উৎসে কর হ্রাস করে দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশ হারে আরোপ করা যেতে পারে, যা প্রাথমিকভাবে অনুশীলন করা হয়েছিল।

ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হবার জন্য ইস্যুয়ার কোম্পানিগুলোকে পর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করতে হয়। এক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ হলো; অধিক তথ্য প্রকাশের প্রয়োজনীয়তার কারণে এ ধরনের কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হয় না। তদুপরি, এ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কর আদায় হয় না। যদি এই জাতীয় কোম্পানিগুলোকে হ্রাসকৃত হারে কর ছাড়ের অনুমতি দেওয়া হয়, তবে তারা তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে সরকারের কর আদায় বৃদ্ধি পাবে। এলক্ষে এক্সচেঞ্জের এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত হওয়ার তারিখ থেকে ৫ বছরের জন্য হ্রাসকৃত ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা দাবি রাখে ।

এছাড়া স্টক ডিলারগণ শেয়ারবাজারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের সক্রীয় অংশগ্রহণ বাজারে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসে। সেকেন্ডারি মার্কেটে ডিলারদের যথাযথ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য তাদেরকে এসআরও নং ১৯৬/আয়কর/২০১৫ থেকে বাদ দেয়া অনুরোধ করেন। মানে স্টক ডিলারগণের শেয়ার লেনদেন থেকে কর অব্যাহতি দাবি রেখেছিল।

বিজনেস আওয়ার/১ জুন, ২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

সর্বাধিক পঠিত

বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য নেই দুঃসংবাদ

পোস্ট হয়েছে : ০৪:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য কোন সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ নেই। শেয়ারবাজারের চলমান সুবিধা বহাল রেখেই আসন্ন বাজেট ঘোষনা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী। সেই প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজার বান্ধব হবে, এমনটাই মনে করেছিলেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের সেই প্রত্যাশা মরিচিকায় রুপান্তর নিলো। মানে চলমান সুযোগ সুবিধা বহাল রেখেই অর্থমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট। ফলে আসন্ন বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য কোন সুসংবাদ নেই। তবে কোন দু:সংবাদও নেই। অনেকটা চলতি অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) কপি বললে, ভূল হবে না।

আসন্ন বাজেটকে (২০২৩-২৪ অর্থবছর) কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছিল। তারা বলে আসছিল এবারের বাজেটে শেয়ারবাজার উন্নয়নে বেশকিছু সুবিধা থাকবে। ফলে শেয়ারবাজর প্রাণবন্ত ও বিনিয়োগবান্ধব হবে। একই সঙ্গে এসব সুবিধায় পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াবে শেয়ারবাজার। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সেই ধরনের তেমন কিছু নেই বললেই চলে।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট

এদিকে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন আশায় ডিএসই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীতে প্রাক-বাজেটে বেশিকিছু দাবিদাবা পেশ করেছিল। সেই দাবিগুলো হলো- বন্ড থেকে সুদের আয়ের উপর কর অব্যাহতি, লভ্যাংশ আয়ের উপর উৎসে কর সম্পূর্ণ এবং চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হিসাবে বিবেচনাকরণ, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর্পোরেট করের হার হ্রাস, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর্পোরেট করের হার হ্রাস, স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেকহোল্ডারদের উৎসে কর হ্রাস, স্টক ডিলারগণের শেয়ার লেনদেন থেকে কর অব্যাহতি।

ডিএসইর কর্তৃপক্ষ প্রাক-বাজেটে এনবিআরকে জানায়, বর্তমানে কর্পোরেট বন্ডের বাজারের আকার খুবই ছোট, এটি শেয়ারবাজারের পাশাপাশি অর্থ বাজারেরও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। একটি কার্যকরী বন্ডের বাজার, অর্থনীতিকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে পারে। যদি সব ধরনের বন্ডের সুদ অব্যাহতির আওতায় আনা হয়, তবে তা একটি শক্তিশালী বন্ড বাজার সৃষ্টিতে উৎসাহিত করবে। তাই জিরো কুপন বন্ডের অনুরূপ স্টক এক্সচেঞ্জের যেকোন বোর্ডে তালিকাভুক্ত কোন কর্পোরেট বন্ড থেকে উদ্ভুত সুদ থেকে আয়ের উপর সকল শ্রেণীর ইস্যুকারী এবং বিনিয়োগকারীদের ৬ষ্ঠ তফসিল, পার্ট-এ এর অধীনে কর অব্যাহতি চেয়েছিল ডিএসই।

কোম্পানিগুলো কর-পরবর্তী মুনাফা থেকে লভ্যাংশ দিচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে, লভ্যাংশের উপর কর এক ধরণের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের করারোপণ। লভ্যাংশের উপর উৎস কর চূড়ান্ত কর হিসাবে বিবেচিত হলে, এটি বিনিয়োগকারীদের অসুবিধা কমাবে। তাই লভ্যাংশ আয়ের উপর উৎস কর ধারা ৮২(সি) এর অধীনে চূড়ান্ত কর দায় হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। এছাড়া কর্পোরেট শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশের উপর করের হার ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার দাবি ছিল।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক তথ্য এবং কর্পোরেট গভর্ন্যান্স সংক্রান্ত বিশদ বিবরণ প্রকাশ করতে হয়। তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়ানো গেলে মোট রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে। হ্রাসকৃত করের হার বহুজাতিক এবং ভালমানের কোম্পানিগুলোকে এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করবে। তাই তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর হারের পার্থক্য ১২ দশমিক ৫ শতাংশ করার দাবি রেখেছিল।

ডিএসইর ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির প্রধান আয় (অর্থাত টার্নওভার) হচ্ছে কমিশন। যদি বেশি হারে কর নেয়া হয়, তবে ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির পক্ষে টিকে থাকা এবং শেয়ারবাজারে অবদান রাখা কঠিন হবে। ফলে যৌক্তিক কারণে লেনদেন মূল্যের উপর উৎসে কর হ্রাস করে দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশ হারে আরোপ করা যেতে পারে, যা প্রাথমিকভাবে অনুশীলন করা হয়েছিল।

ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হবার জন্য ইস্যুয়ার কোম্পানিগুলোকে পর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করতে হয়। এক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ হলো; অধিক তথ্য প্রকাশের প্রয়োজনীয়তার কারণে এ ধরনের কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হয় না। তদুপরি, এ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কর আদায় হয় না। যদি এই জাতীয় কোম্পানিগুলোকে হ্রাসকৃত হারে কর ছাড়ের অনুমতি দেওয়া হয়, তবে তারা তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে সরকারের কর আদায় বৃদ্ধি পাবে। এলক্ষে এক্সচেঞ্জের এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত হওয়ার তারিখ থেকে ৫ বছরের জন্য হ্রাসকৃত ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা দাবি রাখে ।

এছাড়া স্টক ডিলারগণ শেয়ারবাজারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের সক্রীয় অংশগ্রহণ বাজারে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসে। সেকেন্ডারি মার্কেটে ডিলারদের যথাযথ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য তাদেরকে এসআরও নং ১৯৬/আয়কর/২০১৫ থেকে বাদ দেয়া অনুরোধ করেন। মানে স্টক ডিলারগণের শেয়ার লেনদেন থেকে কর অব্যাহতি দাবি রেখেছিল।

বিজনেস আওয়ার/১ জুন, ২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: