ঢাকা , শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘স্বপ্ন নিয়ে’র উদ্যোগে আবারও দুই পায়ে হাঁটবেন ৩০ জন

  • পোস্ট হয়েছে : ১২:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০২৩
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন নিয়ে’র উদ্যোগে সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) প্রান্তিক পর্যায়ের ৩০ জনকে বিনামূল্যে কৃত্রিম পা সংযোজনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সোমবার (১২ জুন) দুপুরে তাদের কৃত্রিম পা সংযোজনের কার্যক্রম শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৩০ জন পা হারানো ব্যক্তি সাভারের সিআরপিতে এসে তাদের পায়ের পরিমাপ দেন।

বগুড়া থেকে আসা পা হারানো ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আমি আজ থেকে ১৫ বছর আগে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানোর সময় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হই। এসময় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার পর অবশেষে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে আমার পা কেটে ফেলতে হয়। প্রথম দিকে পরিবারের সাপোর্ট পেলেও পরবর্তীতে আমাকে বোঝা মনে করতে থাকে পরিবার। এসময় অনেক কষ্ট পেয়ে আবার এক পা নিয়েই ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালানো শুরু করি।

তিনি আরও বলেন, আমি ১৫ বছরে অসংখ্যবার স্বপ্ন দেখেছি যে, আমি দুই পায়ে হাঁটছি। কিন্তু সকাল হলেই দুই চোখ অশ্রুজলে ভেসে যায়। মনে হয়েছিল আমার মনে হয় আর দুই পায়ে হাঁটা হবে না। কিন্তু সে স্বপ্নও পূরণ করতে যাচ্ছে ‘স্বপ্ন নিয়ে’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। আমার পাশের গ্রামের এক ছোট ভাই আমার নাম ঠিকানা নিয়েছিলেন। যখন সিআরপি থেকে আমার কাছে পা সংযোজনের জন্য ফোন আসে তখন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাই। কখন সিআরপিতে যাব এমন মনে হয়। পরে আজ ভোরে এসে আমি সিআরপিতে নামি। আজ আমার পায়ের মাপ নেওয়া হবে। পরবর্তীতে আমাকে পা সংযোজন করে দেওয়া হবে। আমি এই সংগঠনের সমৃদ্ধি কামনা করি।

ময়মনসিংহ থেকে আসা মাহবুবুর রহমান বাবু বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে আমি সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারাই। পা নেই বলে আমি বিয়ে পর্যন্ত করতে পারিনি। আমি সমাজ ও পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে গেছি। পা নেই বলে কোন মেয়ে আমাকে বিয়ে করেনি। ‘স্বপ্ন নিয়ে’ সংগঠন যদি আমাকে পা সংযোজন করে দেয় তাহলে আমি এবার বিয়ে করতে চাই।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন নিয়ে’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, অনেক পক্ষাঘাতগ্রস্ত শিক্ষার্থীকে যখন এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যেতে দেখতাম বিষয়টি আমাকে খুব পীড়া দিত। তখন থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নেই যে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াব। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা এ পর্যন্ত ৭২ জন পক্ষাঘাতগ্রস্তকে কৃত্রিম পা সংযোজন করে দিয়েছি। আজও ৩০ জনের পা সংযোজন করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা ফান্ড সংগ্রহ করে এসব কাজ করে থাকি। আগামী ১ মাসের মধ্যেই এই ৩০ জনের কৃত্রিম পা সংযোজন করা হবে।

সিআরপি’র আর্থপেডিক বিভাগের প্রধান সোহানুর নিয়াজ ইমরান বলেন, ‘স্বপ্ন নিয়ে’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রায়ই কৃত্রিম পা সংযোজনের রোগী নিয়ে আসেন। আমরা এখানে অত্যন্ত যত্নসহকারে কৃত্রিম পা সংযোজন করে থাকি। আমাদের এখানে সবাই বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে কাজ করছেন। আমরা কৃত্রিম পা সংযোজনের পরে তাদের হাঁটাচলার জন্য ট্রেইনিং দিয়ে থাকি। এখানে কৃত্রিম পা সংযোজন করা অনেকেই এখন দুই পায়ে হাঁটছেন।

প্রসঙ্গত, এর আগেও আরও ৭২ জন পক্ষাঘাতগ্রস্তকে বিনামূল্যে কৃত্রিম পা সংযোজন করে দিয়েছেন ‘স্বপ্ন নিয়ে’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

বিজনেস আওয়ার/১৩ জুন, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

‘স্বপ্ন নিয়ে’র উদ্যোগে আবারও দুই পায়ে হাঁটবেন ৩০ জন

পোস্ট হয়েছে : ১২:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন নিয়ে’র উদ্যোগে সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) প্রান্তিক পর্যায়ের ৩০ জনকে বিনামূল্যে কৃত্রিম পা সংযোজনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সোমবার (১২ জুন) দুপুরে তাদের কৃত্রিম পা সংযোজনের কার্যক্রম শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৩০ জন পা হারানো ব্যক্তি সাভারের সিআরপিতে এসে তাদের পায়ের পরিমাপ দেন।

বগুড়া থেকে আসা পা হারানো ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আমি আজ থেকে ১৫ বছর আগে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানোর সময় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হই। এসময় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার পর অবশেষে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে আমার পা কেটে ফেলতে হয়। প্রথম দিকে পরিবারের সাপোর্ট পেলেও পরবর্তীতে আমাকে বোঝা মনে করতে থাকে পরিবার। এসময় অনেক কষ্ট পেয়ে আবার এক পা নিয়েই ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালানো শুরু করি।

তিনি আরও বলেন, আমি ১৫ বছরে অসংখ্যবার স্বপ্ন দেখেছি যে, আমি দুই পায়ে হাঁটছি। কিন্তু সকাল হলেই দুই চোখ অশ্রুজলে ভেসে যায়। মনে হয়েছিল আমার মনে হয় আর দুই পায়ে হাঁটা হবে না। কিন্তু সে স্বপ্নও পূরণ করতে যাচ্ছে ‘স্বপ্ন নিয়ে’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। আমার পাশের গ্রামের এক ছোট ভাই আমার নাম ঠিকানা নিয়েছিলেন। যখন সিআরপি থেকে আমার কাছে পা সংযোজনের জন্য ফোন আসে তখন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাই। কখন সিআরপিতে যাব এমন মনে হয়। পরে আজ ভোরে এসে আমি সিআরপিতে নামি। আজ আমার পায়ের মাপ নেওয়া হবে। পরবর্তীতে আমাকে পা সংযোজন করে দেওয়া হবে। আমি এই সংগঠনের সমৃদ্ধি কামনা করি।

ময়মনসিংহ থেকে আসা মাহবুবুর রহমান বাবু বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে আমি সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারাই। পা নেই বলে আমি বিয়ে পর্যন্ত করতে পারিনি। আমি সমাজ ও পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে গেছি। পা নেই বলে কোন মেয়ে আমাকে বিয়ে করেনি। ‘স্বপ্ন নিয়ে’ সংগঠন যদি আমাকে পা সংযোজন করে দেয় তাহলে আমি এবার বিয়ে করতে চাই।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন নিয়ে’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, অনেক পক্ষাঘাতগ্রস্ত শিক্ষার্থীকে যখন এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যেতে দেখতাম বিষয়টি আমাকে খুব পীড়া দিত। তখন থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নেই যে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াব। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা এ পর্যন্ত ৭২ জন পক্ষাঘাতগ্রস্তকে কৃত্রিম পা সংযোজন করে দিয়েছি। আজও ৩০ জনের পা সংযোজন করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা ফান্ড সংগ্রহ করে এসব কাজ করে থাকি। আগামী ১ মাসের মধ্যেই এই ৩০ জনের কৃত্রিম পা সংযোজন করা হবে।

সিআরপি’র আর্থপেডিক বিভাগের প্রধান সোহানুর নিয়াজ ইমরান বলেন, ‘স্বপ্ন নিয়ে’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রায়ই কৃত্রিম পা সংযোজনের রোগী নিয়ে আসেন। আমরা এখানে অত্যন্ত যত্নসহকারে কৃত্রিম পা সংযোজন করে থাকি। আমাদের এখানে সবাই বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে কাজ করছেন। আমরা কৃত্রিম পা সংযোজনের পরে তাদের হাঁটাচলার জন্য ট্রেইনিং দিয়ে থাকি। এখানে কৃত্রিম পা সংযোজন করা অনেকেই এখন দুই পায়ে হাঁটছেন।

প্রসঙ্গত, এর আগেও আরও ৭২ জন পক্ষাঘাতগ্রস্তকে বিনামূল্যে কৃত্রিম পা সংযোজন করে দিয়েছেন ‘স্বপ্ন নিয়ে’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

বিজনেস আওয়ার/১৩ জুন, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: