ঢাকা , সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বের সব দেশেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া উচিত – যুক্তরাষ্ট্র

  • পোস্ট হয়েছে : ১২:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩
  • 7

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে বাংলাদেশে আলাদা করে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান নেবে না বলেও জানিয়েছে দেশটি।

সোমবার (২৪ জুলাই) নিয়মিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারের কাছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) এক কর্মীর কানাডায় আশ্রয় না পাওয়া এবং অতীতে বিএনপির রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত হওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন তিনি।

ওই সাংবাদিক বলেন, কানাডার ফেডারেল আদালত বিএনপির সাথে যুক্ত একজন কর্মীর আশ্রয় আবেদন খারিজ করে দিয়েছে এবং দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশের পর্যবেক্ষকরা বলছেন-বিএনপি অতীতে রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত হয়েছে, বিশেষ করে ২০১৪ সালে। সে সময় জাতীয় নির্বাচনের সময়ে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করেছিল। এবারও বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসার সাথে সাথে বিএনপিকে সহিংসতা শুরু করার চেষ্টা করার অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীন দল। এ বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে-আমরা বাংলাদেশে বা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে অবস্থান নিই না। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া উচিত।

ব্রিফিংয়ে অন্য এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সারা বাংলাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটছে যেখানে হাজার হাজার মানুষ ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের মোবাইল ফোন তল্লাশি, গ্রেপ্তার ও হাজার হাজার মামলাসহ বিরোধীদের সমাবেশে ইন্টারনেট বন্ধের অভিযোগ আসছে। এমনকি মৃত বিরোধী নেতারাও বর্তমান সরকারের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। তাহলে, যারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করছে, যুক্তরাষ্ট্র কি তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে?

ম্যাথিউ মিলার বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত ২৪ মে ভিসা নীতি জারি করার সময় স্পষ্ট করে বলেছিলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে এই ভিসা বিধিনিষেধগুলো প্রযোজ্য হবে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন কর্মকাণ্ডের মধ্যে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার ব্যবহার করে জনগণকে তাদের সংগঠনের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার থেকে বিরত রাখার মতো কাজ রয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা মিডিয়াকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখার জন্য পরিকল্পিত যেকোনো ব্যবস্থার ব্যবহার হলে সেটিও এই নীতির মধ্যে রয়েছে।

এই পর্যায়ে ওই সাংবাদিক বাংলাদেশে মানবাধিকার কর্মীদের হুমকি, হয়রানি এবং বিচারের শিকার হওয়ার বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি প্রশ্ন করেন, সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৮৬ শতাংশ মানবাধিকার কর্মী বিভিন্ন বাধা ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। অর্থ নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে আরেকটি অস্ত্র, কারণ তাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে। তাই অনেক আন্তর্জাতিক সাহায্য গ্রহীতা সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা তাদের বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না বলে আমি শুনেছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি উদ্বেগজনক বলে মনে করেন?

জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, সাধারণ নিয়ম হিসাবে, গণতান্ত্রিক সমাজে স্বাধীনভাবে সবাইকে তাদের ভূমিকা ও দায়িত্ব পালন করার সক্ষমতাকে সমর্থন করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, আমরা মানবাধিকারের ওপর যেকোনো ধরনের বিধিনিষেধের বিরোধিতা করি এবং এই বিষয়ে এরচেয়ে বলার মতো আমার কাছে আর কোনো নির্দিষ্ট মন্তব্য নেই।

বিজনেস আওয়ার/২৫ জুলাই, ২০২৩/পিএস

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বিশ্বের সব দেশেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া উচিত – যুক্তরাষ্ট্র

পোস্ট হয়েছে : ১২:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে বাংলাদেশে আলাদা করে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান নেবে না বলেও জানিয়েছে দেশটি।

সোমবার (২৪ জুলাই) নিয়মিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারের কাছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) এক কর্মীর কানাডায় আশ্রয় না পাওয়া এবং অতীতে বিএনপির রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত হওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন তিনি।

ওই সাংবাদিক বলেন, কানাডার ফেডারেল আদালত বিএনপির সাথে যুক্ত একজন কর্মীর আশ্রয় আবেদন খারিজ করে দিয়েছে এবং দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশের পর্যবেক্ষকরা বলছেন-বিএনপি অতীতে রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত হয়েছে, বিশেষ করে ২০১৪ সালে। সে সময় জাতীয় নির্বাচনের সময়ে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করেছিল। এবারও বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসার সাথে সাথে বিএনপিকে সহিংসতা শুরু করার চেষ্টা করার অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীন দল। এ বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে-আমরা বাংলাদেশে বা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে অবস্থান নিই না। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া উচিত।

ব্রিফিংয়ে অন্য এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সারা বাংলাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটছে যেখানে হাজার হাজার মানুষ ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের মোবাইল ফোন তল্লাশি, গ্রেপ্তার ও হাজার হাজার মামলাসহ বিরোধীদের সমাবেশে ইন্টারনেট বন্ধের অভিযোগ আসছে। এমনকি মৃত বিরোধী নেতারাও বর্তমান সরকারের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। তাহলে, যারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করছে, যুক্তরাষ্ট্র কি তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে?

ম্যাথিউ মিলার বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত ২৪ মে ভিসা নীতি জারি করার সময় স্পষ্ট করে বলেছিলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে এই ভিসা বিধিনিষেধগুলো প্রযোজ্য হবে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন কর্মকাণ্ডের মধ্যে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার ব্যবহার করে জনগণকে তাদের সংগঠনের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার থেকে বিরত রাখার মতো কাজ রয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা মিডিয়াকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখার জন্য পরিকল্পিত যেকোনো ব্যবস্থার ব্যবহার হলে সেটিও এই নীতির মধ্যে রয়েছে।

এই পর্যায়ে ওই সাংবাদিক বাংলাদেশে মানবাধিকার কর্মীদের হুমকি, হয়রানি এবং বিচারের শিকার হওয়ার বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি প্রশ্ন করেন, সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৮৬ শতাংশ মানবাধিকার কর্মী বিভিন্ন বাধা ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। অর্থ নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে আরেকটি অস্ত্র, কারণ তাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে। তাই অনেক আন্তর্জাতিক সাহায্য গ্রহীতা সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা তাদের বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না বলে আমি শুনেছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি উদ্বেগজনক বলে মনে করেন?

জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, সাধারণ নিয়ম হিসাবে, গণতান্ত্রিক সমাজে স্বাধীনভাবে সবাইকে তাদের ভূমিকা ও দায়িত্ব পালন করার সক্ষমতাকে সমর্থন করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, আমরা মানবাধিকারের ওপর যেকোনো ধরনের বিধিনিষেধের বিরোধিতা করি এবং এই বিষয়ে এরচেয়ে বলার মতো আমার কাছে আর কোনো নির্দিষ্ট মন্তব্য নেই।

বিজনেস আওয়ার/২৫ জুলাই, ২০২৩/পিএস

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: