ঢাকা , রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নরকের দরজায় নক,ধর্ষণ করছি না ধর্ষিত হচ্ছি?

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০২০
  • 134

বিষাদগ্রস্ত মন, বিপর্যস্ত সামাজিক ব্যবস্থা, মানুষের জীবন শৃংখলহীন, অগ্নি গোলকের পৃথিবী। স্বাভাবিক জীবন প্রবাহ আবদ্ধ, মানুষ তার অধিকার করেছে নিমজ্জিত। একবিংশ শতাব্দী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যখন পৃথিবী তার গবেষণায় ব্যস্ত আমরা তখন দাঁড়িয়ে আছি নরকের দরজায়! জঘন্য অমানবিক পরিবেশে আমাদের বসবাস। পত্রিকার পাতা উল্টালে, টেলিভিশনের দিকে তাকালে, কিবা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভেসে উঠছে কি সব ভয়ঙ্কর জঘন্য সামাজিক অবক্ষয়।

ধর্ষণের এই অবক্ষয়ের হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করার কোন কার্যকরী ফর্মুলা আমাদের সামনে কি নেই? শিক্ষিত সমাজ অসহায় হয়ে পড়েছে, দেখা যাচ্ছে শিক্ষিতরা,বড় বড় পদধারীরা ধর্ষকের ভূমিকায়, শিশু, কিশোরী তরুণী, বৃদ্ধা কেউই ধর্ষণে থাবা থেকে বিপদ মুক্ত নয়! ধর্ষণের নিরাপদ জোনে পরিণত হয়েছে আমাদের সভ্য সমাজ।

ভঙ্গুর এই সমাজ ব্যবস্থায় কি শিক্ষা নিয়ে আমরা সমাজের মানুষের সামনে দাঁড়াবো? কারণ শিক্ষক,নামধারী শিক্ষিতরা, মোড়ল-মাতব্বরেরা ধর্ষকের ভূমিকায়! দিন শুরু হয় ধর্ষণের খবর দিয়ে, কি ভয়াবহ চিত্র? শোনা যায় তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর পরিত্যক্ত ভবনে গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, সেখানে মানব সৃষ্ট বর্বরতার নতুন সংজ্ঞা কি হতে পারে?

আজকে আমরা কেন এত নিচে নেমে গিয়েছি? ধর্ষকরা অবলীলায় মাথা উঁচু করে সমাজের মধ্যেই বসবাস করছে, তারা কি মনে করছে না তারা নিজেরাও ধর্ষিত হয়েছে! জাতি হিসেবে এই বিবেক কি হারিয়ে গিয়েছে? নাকি আমরা আত্মকেন্দ্রিক উপলব্ধি করছি!

জাতি হিসেবে আজ আমরা নরকের দরজায় দাঁড়িয়ে নিজেরাই নিজেদেরকে নরকে আলিঙ্গন জানাচ্ছি। আমাদের মানবিক গুণাবলী গুলোকে বিসর্জন দিয়ে দিয়েছি। ধর্ষণ,যৌন নির্যাতন, ইভটিজিং সহ নারীর প্রতি অসম্মান কে আমরা একটি স্বাভাবিক ঘটনা বলে চালিয়ে দিচ্ছি। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য কলঙ্কিত করছে। একজন ধর্ষণকারী পুরুষ যখন কোন নারীকে ধর্ষণ করে তখন কি পুরুষ নিজেও ধর্ষিত হয় না?

যদি তাই হয় তাহলে কেন ধর্ষণের মতো নির্লজ্জতা! দেশের মানুষ কেন আমরা ধর্ষকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছি না? সামাজিক সংগঠনগুলো কি লেজ গুটিয়ে ঘরে বসে থাকবে অথবা টকশোতে ধর্ষক বিরোধী একটি,দুটি কথা বললেই দায়িত্ব শেষ। সামাজিক আন্দোলনকারীরাও মনে হচ্ছে রাজনীতিকরণের মানদণ্ডে চিহ্নিত হচ্ছে!

বাংলাদেশ ধর্ষণের ভয়াবহতার চিএ:

নবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩২ জন৷ অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ। আর চলতি বছরে প্রতিদিন অন্তত ৩ জন নারী ধর্ষিত হয়েছেন।

২০১৮ সালে প্রতিদিন গড়ে ১৩ শিশু নির্যাতন, দুই শিশু ধর্ষণ এবং এক শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। ২০১৭ সালের চেয়ে ২০১৮ সালে শিশু ধর্ষণ-গণধর্ষণ বেড়েছে অন্তত ৩৪ শতাংশ।

চাইল্ড পার্লামেন্টের জরিপে ২০১৮ সালে ৮৭ শতাংশ শিশুই কোনো না কোনো ভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার।

লেখক- সবুর মিয়া, বেসরকারি চাকরিজীবী।

বিজনেস আওয়ার/০৭ অক্টোবর, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

সর্বাধিক পঠিত

নরকের দরজায় নক,ধর্ষণ করছি না ধর্ষিত হচ্ছি?

পোস্ট হয়েছে : ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০২০

বিষাদগ্রস্ত মন, বিপর্যস্ত সামাজিক ব্যবস্থা, মানুষের জীবন শৃংখলহীন, অগ্নি গোলকের পৃথিবী। স্বাভাবিক জীবন প্রবাহ আবদ্ধ, মানুষ তার অধিকার করেছে নিমজ্জিত। একবিংশ শতাব্দী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যখন পৃথিবী তার গবেষণায় ব্যস্ত আমরা তখন দাঁড়িয়ে আছি নরকের দরজায়! জঘন্য অমানবিক পরিবেশে আমাদের বসবাস। পত্রিকার পাতা উল্টালে, টেলিভিশনের দিকে তাকালে, কিবা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভেসে উঠছে কি সব ভয়ঙ্কর জঘন্য সামাজিক অবক্ষয়।

ধর্ষণের এই অবক্ষয়ের হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করার কোন কার্যকরী ফর্মুলা আমাদের সামনে কি নেই? শিক্ষিত সমাজ অসহায় হয়ে পড়েছে, দেখা যাচ্ছে শিক্ষিতরা,বড় বড় পদধারীরা ধর্ষকের ভূমিকায়, শিশু, কিশোরী তরুণী, বৃদ্ধা কেউই ধর্ষণে থাবা থেকে বিপদ মুক্ত নয়! ধর্ষণের নিরাপদ জোনে পরিণত হয়েছে আমাদের সভ্য সমাজ।

ভঙ্গুর এই সমাজ ব্যবস্থায় কি শিক্ষা নিয়ে আমরা সমাজের মানুষের সামনে দাঁড়াবো? কারণ শিক্ষক,নামধারী শিক্ষিতরা, মোড়ল-মাতব্বরেরা ধর্ষকের ভূমিকায়! দিন শুরু হয় ধর্ষণের খবর দিয়ে, কি ভয়াবহ চিত্র? শোনা যায় তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর পরিত্যক্ত ভবনে গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, সেখানে মানব সৃষ্ট বর্বরতার নতুন সংজ্ঞা কি হতে পারে?

আজকে আমরা কেন এত নিচে নেমে গিয়েছি? ধর্ষকরা অবলীলায় মাথা উঁচু করে সমাজের মধ্যেই বসবাস করছে, তারা কি মনে করছে না তারা নিজেরাও ধর্ষিত হয়েছে! জাতি হিসেবে এই বিবেক কি হারিয়ে গিয়েছে? নাকি আমরা আত্মকেন্দ্রিক উপলব্ধি করছি!

জাতি হিসেবে আজ আমরা নরকের দরজায় দাঁড়িয়ে নিজেরাই নিজেদেরকে নরকে আলিঙ্গন জানাচ্ছি। আমাদের মানবিক গুণাবলী গুলোকে বিসর্জন দিয়ে দিয়েছি। ধর্ষণ,যৌন নির্যাতন, ইভটিজিং সহ নারীর প্রতি অসম্মান কে আমরা একটি স্বাভাবিক ঘটনা বলে চালিয়ে দিচ্ছি। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য কলঙ্কিত করছে। একজন ধর্ষণকারী পুরুষ যখন কোন নারীকে ধর্ষণ করে তখন কি পুরুষ নিজেও ধর্ষিত হয় না?

যদি তাই হয় তাহলে কেন ধর্ষণের মতো নির্লজ্জতা! দেশের মানুষ কেন আমরা ধর্ষকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছি না? সামাজিক সংগঠনগুলো কি লেজ গুটিয়ে ঘরে বসে থাকবে অথবা টকশোতে ধর্ষক বিরোধী একটি,দুটি কথা বললেই দায়িত্ব শেষ। সামাজিক আন্দোলনকারীরাও মনে হচ্ছে রাজনীতিকরণের মানদণ্ডে চিহ্নিত হচ্ছে!

বাংলাদেশ ধর্ষণের ভয়াবহতার চিএ:

নবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩২ জন৷ অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ। আর চলতি বছরে প্রতিদিন অন্তত ৩ জন নারী ধর্ষিত হয়েছেন।

২০১৮ সালে প্রতিদিন গড়ে ১৩ শিশু নির্যাতন, দুই শিশু ধর্ষণ এবং এক শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। ২০১৭ সালের চেয়ে ২০১৮ সালে শিশু ধর্ষণ-গণধর্ষণ বেড়েছে অন্তত ৩৪ শতাংশ।

চাইল্ড পার্লামেন্টের জরিপে ২০১৮ সালে ৮৭ শতাংশ শিশুই কোনো না কোনো ভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার।

লেখক- সবুর মিয়া, বেসরকারি চাকরিজীবী।

বিজনেস আওয়ার/০৭ অক্টোবর, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: