ঢাকা , রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এই দুটি এতিম মেয়ের জায়গা হয়েছে, ঘরের ব্যবস্থা হবে ইনশাআল্লাহ

  • পোস্ট হয়েছে : ০৪:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২১
  • 206

আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। সারা দেশে কঠোর লক ডাউন। মনে হয় সব কিছুই যেন থেমে আছে। জরুরি ডিউটিতে বের হব। এমন সময় হঠাৎ দুইজন মেয়ে বিমর্ষ ও উৎকন্ঠা হয়ে থানায় আগমন। স্যার আমাদের দাদা-দাদী, চাচা-চাচী, ফুফু সহ সবাই মারধর করে আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা আমাদের বাবার বাড়িতে ঢুকতে পারছি না। আমাদের মাথা গুজার ব্যবস্থা করে দেন। আমরা এখন পথে পথে ঘুরছি। বাবা নেই আর মা থেকেও নেই, তাই বাবার বাড়িতে থাকতে পারছি না।

শুনে খুব খারাপ লাগলো। ওসি স্যারের রুমে নিয়ে গেলাম। ওসি স্যার তাদের সমস্যা মন দিয়ে শুনে আন্তরিকতার সহিত একটা অভিযোগ গ্রহণ করে আমাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। বিস্তারিত জানার জন্য প্রশ্ন করলে তারা বলতে থাকে তাদের অতীত ইতিহাস।

একজনের বয়স ২০ অন্যজনের ১৮ হবে। একজনের বয়স যখন ৩ ও অন্যজনের ১ বছর, তখন তারা তাদের বাবাকে হারায়। মা দুটি শিশু নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। অসহায় মা দুই শিশুকে নিয়ে অনেক কষ্টে লালন-পালন করে আসছিলো। মৌলিক অধিকার বঞ্চিত হলেও মা আর সন্তানদের বেঁচে থাকার প্রবল বাসনা ছিলো, স্বপ্ন ছিলো। তাদের এই স্বপ্ন, এই বাসনা সহ্য হয়নি চারপাশের মানুষের। শুরু হয় ষড়যন্ত্র, সাথে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পায়তারা।

এক পর্যায়ে তার মা আর্থিক কষ্ট ও নানা অভাব-অনটনে পড়ে যায়। তখন তাদের পাশে আর কেউ ছিল না। শালিস দরবারের মাধ্যমে আজ থেকে ১৭/১৮ বছর আগে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় মা এবং মেয়েদের। তখন তার মা তাদের কে নিয়ে নানার বাড়ি চলে যায় এবং সেখানে তিনি পুনরায় বিয়ে করেন। তাদেরকে তার নানী লালন পালন করলেও দূর্ভাগ্যক্রমে তিনিও মারা যান। মেয়েগুলো আরো বেশি অসহায় হয়ে পড়ে। তাই তাদের বাবার বাড়িতে আসে।

সেখানে দাদা-দাদী, চাচা-চাচী, ফুফু সহ সবাই মিলে তাদের ঢুকতে না দিয়ে মারধর করে বের করে দেয়। ওসি স্যরের নির্দেশে নিজের টাকায় সিএনজি ভাড়া করে ৩/৪ বার গিয়ে সেনবাগ থানার বিজবাগ ইউপির স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার সহ রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের আন্তরিক সহায়তায় তার দাদার কাছ থেকে তিন ডিসিম জায়গার ব্যাবস্থা করা হয়। সেখানে তারা ঘর তৈরি করবে। ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয় মেম্বার সহ রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের সহায়তা খাবারের জন্য চাল-ডাল ব্যবস্থা করেন ও ঘর তুলে দিবেন বলে আশ্বাস দেন। তাদের ঘর খুব শীঘ্রই তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ।

সম্পত্তি কেবল ইহকালের প্রয়োজনে। একবার ভাবুন, আপনি মারা গেলে আপনার বাড়ি-গাড়ি, সম্পত্তি কোথায় থাকবে, আর আপনি কোথায় থাকবেন। ভাবুনতো একবার। আপনি মারা গেলে আপনার ছেলে-মেয়ে আপনাকে স্মরন করবে বড়জোর। তার পরের প্রজন্ম? তার পরের প্রজন্ম আপনার নাম পর্যন্ত জানবেনা।

অতএব অসহায়দের পাশে থাকুন। সহায়তা করুন। মানবতার কল্যানে কাজ করুন। উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করার পায়তারা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

লেখক- এসআই/মোঃ তারেকুর রহমান, সেনবাগ থানা, নোয়াখালী।

বিজনেস আওয়ার/১৫ আগস্ট, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

সর্বাধিক পঠিত

এই দুটি এতিম মেয়ের জায়গা হয়েছে, ঘরের ব্যবস্থা হবে ইনশাআল্লাহ

পোস্ট হয়েছে : ০৪:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২১

আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। সারা দেশে কঠোর লক ডাউন। মনে হয় সব কিছুই যেন থেমে আছে। জরুরি ডিউটিতে বের হব। এমন সময় হঠাৎ দুইজন মেয়ে বিমর্ষ ও উৎকন্ঠা হয়ে থানায় আগমন। স্যার আমাদের দাদা-দাদী, চাচা-চাচী, ফুফু সহ সবাই মারধর করে আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা আমাদের বাবার বাড়িতে ঢুকতে পারছি না। আমাদের মাথা গুজার ব্যবস্থা করে দেন। আমরা এখন পথে পথে ঘুরছি। বাবা নেই আর মা থেকেও নেই, তাই বাবার বাড়িতে থাকতে পারছি না।

শুনে খুব খারাপ লাগলো। ওসি স্যারের রুমে নিয়ে গেলাম। ওসি স্যার তাদের সমস্যা মন দিয়ে শুনে আন্তরিকতার সহিত একটা অভিযোগ গ্রহণ করে আমাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। বিস্তারিত জানার জন্য প্রশ্ন করলে তারা বলতে থাকে তাদের অতীত ইতিহাস।

একজনের বয়স ২০ অন্যজনের ১৮ হবে। একজনের বয়স যখন ৩ ও অন্যজনের ১ বছর, তখন তারা তাদের বাবাকে হারায়। মা দুটি শিশু নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। অসহায় মা দুই শিশুকে নিয়ে অনেক কষ্টে লালন-পালন করে আসছিলো। মৌলিক অধিকার বঞ্চিত হলেও মা আর সন্তানদের বেঁচে থাকার প্রবল বাসনা ছিলো, স্বপ্ন ছিলো। তাদের এই স্বপ্ন, এই বাসনা সহ্য হয়নি চারপাশের মানুষের। শুরু হয় ষড়যন্ত্র, সাথে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পায়তারা।

এক পর্যায়ে তার মা আর্থিক কষ্ট ও নানা অভাব-অনটনে পড়ে যায়। তখন তাদের পাশে আর কেউ ছিল না। শালিস দরবারের মাধ্যমে আজ থেকে ১৭/১৮ বছর আগে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় মা এবং মেয়েদের। তখন তার মা তাদের কে নিয়ে নানার বাড়ি চলে যায় এবং সেখানে তিনি পুনরায় বিয়ে করেন। তাদেরকে তার নানী লালন পালন করলেও দূর্ভাগ্যক্রমে তিনিও মারা যান। মেয়েগুলো আরো বেশি অসহায় হয়ে পড়ে। তাই তাদের বাবার বাড়িতে আসে।

সেখানে দাদা-দাদী, চাচা-চাচী, ফুফু সহ সবাই মিলে তাদের ঢুকতে না দিয়ে মারধর করে বের করে দেয়। ওসি স্যরের নির্দেশে নিজের টাকায় সিএনজি ভাড়া করে ৩/৪ বার গিয়ে সেনবাগ থানার বিজবাগ ইউপির স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার সহ রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের আন্তরিক সহায়তায় তার দাদার কাছ থেকে তিন ডিসিম জায়গার ব্যাবস্থা করা হয়। সেখানে তারা ঘর তৈরি করবে। ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয় মেম্বার সহ রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের সহায়তা খাবারের জন্য চাল-ডাল ব্যবস্থা করেন ও ঘর তুলে দিবেন বলে আশ্বাস দেন। তাদের ঘর খুব শীঘ্রই তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ।

সম্পত্তি কেবল ইহকালের প্রয়োজনে। একবার ভাবুন, আপনি মারা গেলে আপনার বাড়ি-গাড়ি, সম্পত্তি কোথায় থাকবে, আর আপনি কোথায় থাকবেন। ভাবুনতো একবার। আপনি মারা গেলে আপনার ছেলে-মেয়ে আপনাকে স্মরন করবে বড়জোর। তার পরের প্রজন্ম? তার পরের প্রজন্ম আপনার নাম পর্যন্ত জানবেনা।

অতএব অসহায়দের পাশে থাকুন। সহায়তা করুন। মানবতার কল্যানে কাজ করুন। উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করার পায়তারা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

লেখক- এসআই/মোঃ তারেকুর রহমান, সেনবাগ থানা, নোয়াখালী।

বিজনেস আওয়ার/১৫ আগস্ট, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: