বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : চলতি মাসে উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলে পুরোদমে চলছে নতুন মেশিনারীজ ইনস্টল এবং ব্যবহারযোগ্য পুরাতনগুলো মেরামতের কাজ। এছাড়া কারখানার বিভিন্ন অবকাঠামো সংস্কারের কাজ চলছে। এরইমধ্যে কোম্পানিটিকে উৎপাদন শুরু করার অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে। এখন শেষ মুহূর্তের কাজগুলো করা হচ্ছে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের উৎপাদন প্রায় ৬ বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে। যাতে করে এই দীর্ঘসময়ে কোম্পানিটির অবকাঠামো দাঁড়িয়ে থাকলেও ডাইং ইউনিটের প্রায় সব মেশিনারীজ অকেঁজো হয়ে গেছে। এছাড়া গার্মেন্টস সেকশনের মেশিন চালু করতে মেরামতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আর জেনারেটরসহ অন্যান্য ইলেকট্রিক জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়। যে কোম্পানিটির সুদসহ ব্যাংকের দেনা হয়ে গেছে ২৫০ কোটি টাকা।
এই অবস্থায় কোম্পানিটিকে পুণরুজ্জীবিত করতে এগিয়ে আসে আলিফ গ্রুপ। যারা এরইমধ্যে ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটের সজীব নিটওয়্যার ও দূর্বল ব্যবসার সিএমসি কামালকে (বর্তমানে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং) অধিগ্রহন করে দক্ষতা দেখিয়েছে। এতে করে রক্ষা পেয়েছে কোম্পানি দুটির হাজারো বিনিয়োগকারীসহ পুরো শেয়ারবাজারের স্বার্থ। এবার হারিয়ে যাওয়ার পথে থাকা সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলকে উৎপাদনে আনতে যাচ্ছে তারা।
চট্টগ্রামে কালুরঘাটে বিসিক এলাকায় অবস্থিত সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের কারখানা সরেজমিনে পরিদের্শনে দেখা যায়, কারখানায় একযোগে মেকানিক, ইলেকট্রিক ও সিভিলের কাজ চলছে। এতে প্রায় ২০০ জন শ্রমিক-ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করছেন। এরইমধ্যে কোম্পানিটির ৬ লাখ টাকার বকেয়া বিদ্যুত বিল পরিশোধ করে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ৩ কোটি টাকার বকেয়া বিল পরিশোধ করে গ্যাসের সংযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা উৎপাদন শুরুর আগে সংযোগ দেওয়া হবে।
সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের ডাইং ইউনিট উৎপাদন শুরুর জন্য বয়লার, নিজস্ব সাবমারসিবল ব্যবস্থায় পানির ব্যবস্থা, কম্প্রেসার, গ্যাস লাইনের জন্য ২টি জেনারেটর, বিদ্যুত লাইনের জন্য ১টি জেনারেটর ও ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়ে গেছে। এ বিষয়গুলো উৎপাদন শুরুর জন্য এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
এই মুহূর্তে কোম্পানিটির ডাইং ইউনিটে দৈনিক ২০ টন উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। যা চালুর মাধ্যমে ২০২২-২৩ অর্থবছরেই মুনাফায় ফিরতে চায় কোম্পানিটির দায়িত্ব নেওয়া আলিফ গ্রুপ। যা থেকে ওই অর্থবছরের ব্যবসাতেই বিনিয়োগকারীদের রিটার্নও দিতে চায়।
আরও পড়ুন…..
ভূয়া সম্পত্তি দেখিয়ে শেয়ারবাজারে আসছে আছিয়া সী ফুডস
এসব বিষয়ে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের বর্তমান ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিমুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ২০ জুন পরীক্ষামূলক ও চলতি মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এরইমধ্যে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের কারখানার ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। আগামি কয়েকদিনের মধ্যে বাকি কাজ করা হয়ে যাবে। তবে চাইলে আগামিকালও উৎপাদন শুরু করা যাবে। তবে সার্বিক সংস্কারের পরে উৎপাদন শুরু করতে চাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের কারখানার ভিতরে যাওয়ার মতো পরিবেশ ছিল না। এছাড়া ডাইং ইউনিটের সব মেশিনারীজ নষ্ট এবং অনেক মূল্যবান জিনিস ছিল না। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকার কারনে গার্মেন্টস সেকশনের জিনিসপত্রও নষ্ট হয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে ডাইং ইউনিটের শতভাগ মেশিনারীজ কিনতে হয়েছে বলে জানান এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, গার্মেন্টস সেকশনের মেশিনারীজগুলো মেরামত করা হচ্ছে। এছাড়া মূল্যবান জেনারেটরগুলো মেরামত করা লেগেছে।
নতুন মেশিনারীজ স্থাপন ও ব্যবহারযোগ্য পুরাতনগুলো মেরামতের মধ্যেই উৎপাদন শুরুর জন্য কর্মী নিয়োগ শুরু হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলকে ভঙ্গুর থেকে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে আসতে আলিফ গ্রুপের ৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যা কোম্পানির শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসাবে জমা হবে। এই অর্থ ব্যাংক ঋণ নিয়মিতকরণে ব্যবহার করা, ফ্যাক্টরি ও যন্ত্রপাতির বিএমআরই, পুনরায় গ্যাস লাইন চালু, বন্ড লাইসেন্স স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং কোম্পানির কার্যক্রম পুনরায় চালু করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ওই শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে পরবর্তিতে শেয়ার ইস্যু করা হবে। যা সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের বিগত ১ বছরের এভারেজ ওয়েটেড দরে শেয়ার ইস্যু করা হবে। এর মাধ্যমে প্রায় ২৩ শতাংশ শেয়ার ইস্যু করা হবে। আর বর্তমানে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের কাছে ৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। যাতে করে বিএসইসির শর্ত অনুযায়ি ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারন পূরন হবে। তবে যদি ২৩ শতাংশ শেয়ার ইস্যুর কম হয়ে যায়, তাহলে সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে কিনে বিএসইসির ৩০ শতাংশের শর্ত পূরণ করা হবে। যা মূলত সারাজীবনের জন্যই লক-ইন থাকবে।
উল্লেখ্য, আলিফ গ্রুপ ১৯৬৭ সালে ওয়েল ট্রেডিং কোম্পানির মধ্য দিয়ে দেশে ব্যবসা শুরু করে। সেখান থেকে তৈরি পোশাক, বস্ত্র, সুতা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আবাসন খাত, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, শিক্ষা- প্রযুক্তিসহ নানা খাতে আমাদের ব্যবসার পরিধি বেড়েছে। ৫৩ বছরে ধরে বাংলাদেশে সফলতার সাথে ব্যবসা করে আসছে আলিফ গ্রুপ। বর্তমানে বছরে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে এই গ্রুপটি থেকে। সেখান থেকে বছরে আয় হয় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।
বিজনেস আওয়ার/১৫, জুন, ২০২২/আরএ