শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমসের (বিবিএস) চলতি বছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর ২১) ব্যবসায় আয় কমেছে। যাতে করে আগের বছরের ন্যায় এবারও কোম্পানিটির মূল ব্যবসায় বা পরিচালন লোকসান হয়েছে। তবে সহযোগি কোম্পানিতে বিনিয়োগের বিপরীতে প্রাপ্ত বোনাস শেয়ার বিক্রি করে কোম্পানিটির নিট মুনাফায় বড় উত্থান হয়েছে। যে খবরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে আগ্রহ তৈরী হয়েছে। তবে এ জাতীয় মুনাফা অর্জন খুবই ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগকারীদেরকে সাবধান হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধের অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ঝুকিপূর্ণ হলেও এই মুনাফার খবর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের ২দিন আগে থেকেই বিবিএসের শেয়ার দর টানা বাড়ছে। গত ২৬ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমার্ধের ব্যবসায়িক অবস্থা প্রকাশের দিন শেয়ারটির দর ছিল ২০ টাকা। যে দর ৩ ফেব্রুয়ারি বেড়ে দাড়িঁয়েছে ৩০.২০ টাকায়। অর্থাৎ শেয়ারটির দর বেড়েছে ১০.২০ টাকা ৫১ শতাংশ।
ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ইদানিং বেশ কিছু কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকদের মধ্যে শেয়ার দর বৃদ্ধির জন্য মূল ব্যবসার বাহিরে গিয়ে বিকল্প এবং ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে আয় করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে শেয়ার ব্যবসা অন্যতম। যা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা। এই ব্যবসা দিয়ে সাময়িক মুনাফা করা গেলেও সবসময় সম্ভব নাও হতে পারে। তাই এ জাতীয় ব্যবসা থেকে যেসব কোম্পানির আকর্ষনীয় মুনাফা হয়, সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগকারীদেরকে চিন্তা-ভাবনা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বিবিএসের বিক্রি বা আয় হয়েছে ৫০ কোটি ৪০ লাখ টাকার। যার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এ হিসেবে আয় কমেছে ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকার বা ৮ শতাংশ।
এরমধ্যে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২১) আয়ের পরিমাণ ২৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। যার পরিমাণ ২০২০ সালের একইসময়ে ছিল ২৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রান্তিকে আয় কমেছে ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকার বা ৬ শতাংশ।
আরও পড়ুন……
শেয়ার ব্যবসায় ঝুকেঁছে উৎপাদনকারী আনোয়ার গ্যালভানাইজিং
প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের নিট মুনাফার ৬৪ শতাংশ এসেছে শেয়ার ব্যবসা থেকে
প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের মূল ব্যবসায় লোকসান হলেও শেয়ারবাজার দিয়ে বড় মুনাফা
১৮ কোটি টাকার সোনালি পেপারের ঋণ নিয়ে ৫৬ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ
এই কোম্পানিটির আয়ে ধারাবাহিক পতনে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধেও পরিচালন মুনাফার পরিবর্তে লোকসান হয়েছে। কোম্পানিটির আগের বছরের প্রথমার্ধের ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার লোকসান বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
তারপরেও চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ১৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.৯৬ টাকা। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের একইসময়ে হয়েছিল ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.২১ টাকা। এ হিসাবে কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুনাফায় উন্নতি হয়েছে ১২ কোটি ১৬ লাখ টাকা বা ৩৫২ শতাংশ।
এই উত্থানের পেছনে প্রধান কারন হিসেবে রয়েছে একই গ্রুপের বিবিএস কেবলস থেকে প্রাপ্ত বোনাস শেয়ার বিক্রি থেকে অর্জিত মুনাফা। কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বিবিএস কেবলসের বোনাস শেয়ার বিক্রি থেকে ১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছে। যার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ে ছিল শূন্য।
এদিকে কোম্পানিটির মুনাফার আরেকটি প্রধান কারন হিসেবে রয়েছে সহযোগি বিবিএস কেবলসের মুনাফা। যেহেতু কোম্পানিটিতে বিবিএস থেকে বিনিয়োগ করা হয়েছে, সে হিসাবে ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগের হারে (ইক্যুইটি মেথড) মুনাফার অংশও পেয়ে থাকে। এ বছরের প্রথমার্ধে এ জাতীয় মুনাফা হয়েছে ৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। যার পরিমাণ আগের বছরের প্রথমার্ধে ছিল ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
বিবিএস কেবলসে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিনিয়োগ দাড়িঁয়েছে ২ কোটি ৮৪ লাখ ৪ হাজার ৫০০টি শেয়ার বা ১৪.৭৯ শতাংশ। যার পরিমাণ আগের বছরের ৩১ ডিসেম্বর ছিল ১৬.০৯ শতাংশ।
উল্লেখ্য ১৬২ কোটি ৯৩ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের বিবিএসে ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকার নিট সম্পদ রয়েছে। যাতে কোম্পানিটির ৩১ ডিসেম্বর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাড়িঁয়েছে ১৫.০১ টাকায়।
বিজনেস আওয়ার/০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২/আরএ
3 thoughts on “মূল ব্যবসায় লোকসান: সহযোগির বোনাস শেয়ার বেচেঁ নিট মুনাফা”