ঢাকা , রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাতাল হাওয়ায় উড়ছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার

  • পোস্ট হয়েছে : ০৩:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুলাই ২০২৩
  • 2

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘বি’ক্যাটাগরির ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর ঈদের পর (পবিত্র ঈদুল আযহা) থেকেই পাগলা হাওয়ায় উড়ছে। কোম্পানিটির শেয়ার দর বৃদ্ধির এই হাওয়ায় কোথায় যাবে, নেই তার কোনো ধারণা। শেয়ারটির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি ইতোমধ্যে সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। তবে শেয়ারটির দর কেন বাড়ছে ব্যাখা নেই, কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের কাছে।

“গত ৭ কার্যদিবসে ফু-ওয়াং ফুডের মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজার মূল্যে বেড়েছে ১২৯ কোটি টাকা। অপরদিকে এই সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক, বিদেশি এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের মাধ্যমে বাজার মূল্যে বেড়েছে ১১৯ কোটি টাকা।”

শেয়ারটির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির ব্যাপারে কোম্পানির কর্তারা জড়িত রয়েছে অভিযোগ করে মতিঝিলের একাধিক সিকিউরিটিজ হাউজের প্রায় ১০ বিনিয়োগকারী বলেন, ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর সামনে আরো বাড়বে। কেন বাড়বে, সেটা বলতে পারছেন না কেউ। তাদের ওইসব কথা শুনে অনেকেই অতি উচ্চদরে শেয়ারটি কিনছে। আরও বলেন, হাউজগুলোতে শুনা যাচ্ছে, কোম্পানিটি বিনিয়োগ আরো বাড়াবে। সমাপ্ত বছরে মুনাফা ব্যাপক বাড়বে। যদিও কোম্পানির হালনাগাদে নেই, তার কোন তথ্য।

ফাঁদ দিয়ে শেয়ারবাজার থেকে দুষ্টচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে নিরীহ বিনিয়োগকারীদের অর্থ জানিয়ে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, অর্থ হাতিয়ে নেবার দুষ্টচক্রের হাত খুব লম্বা। রেগুলেটর থেকে বিনিয়োগকারী পর্যন্ত তাদের লোকজন সাজানো। যেকোনো শেয়ার নিয়ে তারা খেলতে পারেন। খুব সহজেই নিরীহদের বোকা বানিয়ে চক্রটি কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকে। চক্রটি এতো ধূর্ত যে, কোনো আইনে তাদের ধরা সম্ভব হয় না। কোনো কারণে ধরা পড়লেও সামান্য সাজায় মাফ পেয়ে যায়। এসব কারণে শেয়ারবাজারে পতন লেগেই থাকে।

ঈদের পর ৭ কার্যদিবস ধরেই ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর বাড়ছে। কারণবিহীন লাফিয়ে লাফিয়ে শেয়ারটির দর ৭ কার্যদিবসে বেড়েছে ৫০ শতাংশ। এসময় শেয়ারটির বাজার মূলধন বেড়েছে ১২৯ কোটি ৬৮ টাকা। শেয়ার দরের এ ধরনের বৃদ্ধি নিয়ে কোম্পানির শেয়ার ধারন করা বিনিয়োগকারীদের মাঝে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। যা এই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে সুখবর নয়। অপরদিক এ কোম্পানির শেয়ার দর কেন এতো বাড়ছে, তার প্রকৃত কারণ জানে না ধারন করা বিনিয়োগকারীরা।

শেয়ার দর বৃদ্ধির প্রসঙ্গে ফু-ওয়াং ফুডের চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন বলেন, শেয়ার দর বাড়ার মতো কোনো মূল্য সংবেদনশীন তথ্য নেই। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকেও (ডিএসই) একই জবাব দিয়েছি। শেয়ার দর বৃদ্ধিতে আমরা ও আমাদের কোন কর্মকর্তা জড়িত নেই দাবি করে তিনি বলেন, গত ৭ কার্যদিবস প্রায় ৫০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে। কেন বেড়েছে সেটা আমার জানা নেই। যারা এতো দরে শেয়ারটি কিনছে, সেটা কেবল তারাই (বিনিয়োগকারী) বলতে পারবে।

শেয়ারবাজারে আমাদের (ফু-ওয়াং ফুড) কেউ (পরিচালক) শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে না জানিয়ে মো. আফজাল হোসেন বলেন, শেয়ার দর বাড়া কমা নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।

এদিক শেয়ার দর অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণে ফু-ওয়াং ফুডকে গত বৃহস্পতিবার ডিএসই নোটিস পাঠিয়েছি। এর জবাবে গতকাল রবিবার কোম্পানি জানিয়েছে, কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে। ওই জবাবের পরও ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর নিয়ে কাজ করছি। দর বাড়ার কারন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অতি দরের ব্যপারে প্রয়োজনে ফু-ওয়াং ফুডকে ফের নোটিশ পাঠাবো। প্রয়োজনে জরুরি ব্যবস্থা নিবো।

শেয়ার দর বৃদ্ধির একই বিযয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, শেয়ারবাজারের কোনো কোম্পানির শেয়ার দর বাড়লো বা কমলো, সেটা আমাদের বিবেচ্য নয়। আমরা দেখি শেয়ার দর বাড়া বা কমার ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা। সেই হিসেবে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর বাড়ার বিযয়টি আমাদের নজরে রয়েছে।

কোম্পানিটি শেয়ার দর বৃদ্ধির বিযয়টি খতিয়ে দেখছি জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর বাড়ার পেছনে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা। শেয়ারটির দর বাড়ানো ক্ষেত্রে অনিয়ম পাওয়া গেলে, কেবল সেই ক্ষেত্রে কোম্পানির বা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ঈদের পর থেকেই ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর শুধুই বাড়ছে। শেয়ার দর বেড়ে ৩৫ টাকার ওপরে চলে এসেছে। কোনো কারণ বা কোনো পরিকল্পনায় শেয়ার দর এভাবে বেড়েছে তার কারণ জানা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। নিয়ম অনুসারে কোম্পানির কর্মকর্তারা শেয়ার দর বাড়া-কমার পেছনে কাজ করে না জানিয়ে তারা বলছেন, এটা আমরা জানি। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোম্পানির শেয়ার দর বাড়া-কমার তাদের (কর্মকর্তা) অদৃশ্য ছোঁয়া থাকে। তাদের ছোঁয়া ছাড়া কোনো কোম্পানির শেয়ার দর লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে যায় না। কারণ তারাই জানেন কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য। যেসব তথ্য শেয়ার বাড়া-কমার ক্ষেত্রে জাদুকরি ভূমিকা রাখে। তাই শেয়ার দর বাড়ার জাদুকরি প্রতিষ্ঠান ফু-ওয়াং ফুডের প্রতি বিশেষ নজর দিতে পুঁজিবাজার রেগুরেটরকে অনুরোধ রাখেন তারা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গতকাল রবিবার ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর দাঁড়ায় ৩৫ টাকা ২০ পয়সা। এর আগে ২ জুলাই কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২৩ টাকা ৫০ পয়সা। ৭ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৪৯ দশমিক ৭৯ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ১১ কোটি ৮ লাখ ৩৯ হাজার ২৮৪টি। সেই হিসাবে গতকাল কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজার মূল্যে হয়েছে ৩৯০ কোটি ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৭৯৬ টাকা। গত ২ জুলাই শেয়ারের বাজার মূল্যে ছিল ২৬০ কোটি ৪৭ লাখ ২৩ হাজার ১৭৪ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজার মূল্যে বেড়েছে ১২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৯ হাজার ৬২২ টাকা।

ফু-ওয়াং ফুডের মোট শেয়ারের মধ্যে ৮০ দশমিক ২২ শতাংশ ধারন করেছে সাধারন বিনিয়োগকারী। এছাড়া বিদেশি ১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ ধারন করেছে। সেই হিসেবে বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের বাজার মূল্যে বেড়েছে ১১৯ কোটি ৫০ লাখ ১৯ হাজার ২৮২ টাকা। এ ধরনের বৃদ্ধি কোনো মতে মানতে রাজি নন বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা। তাই শেয়ার দর কমার কারণ জানার জন্য সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।

ফু-ওয়াং ফুডের তৃতীয় কোয়াটারে (জানুয়রি-মার্চ ২০২৩ সাল) শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ পয়সা। তৃতীয় কোয়টারে শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৩ টাকা ৯৬ পয়সা। নগদ প্রবাহ ১২ পয়সা। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১১০ কোটি ৮৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং রিজার্ভ নেগেটিভ ৭৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। শেয়ার সংখ্যা ১১ কোটি ৮ লাখ ৩৯ হাজার ২৮৪টি। কোম্পানিটি মোট শেয়ারের ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক ধারন করেছে।

শেয়ারবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানান বিএসইসি। সেই হিসাবে গতকাল রবিবার ফু-ওয়াং ফুডের (আন-অডিটেড আর্থিক রিপোর্ট) পিই রেশিও দাড়ায় ১৫৫ পয়েন্ট। মানে পিই রেশিও হিসাবে, বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে নেই।

বিজনেস আওয়ার/১০ জুলাই, ২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

মাতাল হাওয়ায় উড়ছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার

পোস্ট হয়েছে : ০৩:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুলাই ২০২৩

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘বি’ক্যাটাগরির ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর ঈদের পর (পবিত্র ঈদুল আযহা) থেকেই পাগলা হাওয়ায় উড়ছে। কোম্পানিটির শেয়ার দর বৃদ্ধির এই হাওয়ায় কোথায় যাবে, নেই তার কোনো ধারণা। শেয়ারটির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি ইতোমধ্যে সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। তবে শেয়ারটির দর কেন বাড়ছে ব্যাখা নেই, কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের কাছে।

“গত ৭ কার্যদিবসে ফু-ওয়াং ফুডের মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজার মূল্যে বেড়েছে ১২৯ কোটি টাকা। অপরদিকে এই সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক, বিদেশি এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের মাধ্যমে বাজার মূল্যে বেড়েছে ১১৯ কোটি টাকা।”

শেয়ারটির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির ব্যাপারে কোম্পানির কর্তারা জড়িত রয়েছে অভিযোগ করে মতিঝিলের একাধিক সিকিউরিটিজ হাউজের প্রায় ১০ বিনিয়োগকারী বলেন, ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর সামনে আরো বাড়বে। কেন বাড়বে, সেটা বলতে পারছেন না কেউ। তাদের ওইসব কথা শুনে অনেকেই অতি উচ্চদরে শেয়ারটি কিনছে। আরও বলেন, হাউজগুলোতে শুনা যাচ্ছে, কোম্পানিটি বিনিয়োগ আরো বাড়াবে। সমাপ্ত বছরে মুনাফা ব্যাপক বাড়বে। যদিও কোম্পানির হালনাগাদে নেই, তার কোন তথ্য।

ফাঁদ দিয়ে শেয়ারবাজার থেকে দুষ্টচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে নিরীহ বিনিয়োগকারীদের অর্থ জানিয়ে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, অর্থ হাতিয়ে নেবার দুষ্টচক্রের হাত খুব লম্বা। রেগুলেটর থেকে বিনিয়োগকারী পর্যন্ত তাদের লোকজন সাজানো। যেকোনো শেয়ার নিয়ে তারা খেলতে পারেন। খুব সহজেই নিরীহদের বোকা বানিয়ে চক্রটি কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকে। চক্রটি এতো ধূর্ত যে, কোনো আইনে তাদের ধরা সম্ভব হয় না। কোনো কারণে ধরা পড়লেও সামান্য সাজায় মাফ পেয়ে যায়। এসব কারণে শেয়ারবাজারে পতন লেগেই থাকে।

ঈদের পর ৭ কার্যদিবস ধরেই ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর বাড়ছে। কারণবিহীন লাফিয়ে লাফিয়ে শেয়ারটির দর ৭ কার্যদিবসে বেড়েছে ৫০ শতাংশ। এসময় শেয়ারটির বাজার মূলধন বেড়েছে ১২৯ কোটি ৬৮ টাকা। শেয়ার দরের এ ধরনের বৃদ্ধি নিয়ে কোম্পানির শেয়ার ধারন করা বিনিয়োগকারীদের মাঝে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। যা এই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে সুখবর নয়। অপরদিক এ কোম্পানির শেয়ার দর কেন এতো বাড়ছে, তার প্রকৃত কারণ জানে না ধারন করা বিনিয়োগকারীরা।

শেয়ার দর বৃদ্ধির প্রসঙ্গে ফু-ওয়াং ফুডের চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন বলেন, শেয়ার দর বাড়ার মতো কোনো মূল্য সংবেদনশীন তথ্য নেই। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকেও (ডিএসই) একই জবাব দিয়েছি। শেয়ার দর বৃদ্ধিতে আমরা ও আমাদের কোন কর্মকর্তা জড়িত নেই দাবি করে তিনি বলেন, গত ৭ কার্যদিবস প্রায় ৫০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে। কেন বেড়েছে সেটা আমার জানা নেই। যারা এতো দরে শেয়ারটি কিনছে, সেটা কেবল তারাই (বিনিয়োগকারী) বলতে পারবে।

শেয়ারবাজারে আমাদের (ফু-ওয়াং ফুড) কেউ (পরিচালক) শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে না জানিয়ে মো. আফজাল হোসেন বলেন, শেয়ার দর বাড়া কমা নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।

এদিক শেয়ার দর অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণে ফু-ওয়াং ফুডকে গত বৃহস্পতিবার ডিএসই নোটিস পাঠিয়েছি। এর জবাবে গতকাল রবিবার কোম্পানি জানিয়েছে, কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে। ওই জবাবের পরও ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর নিয়ে কাজ করছি। দর বাড়ার কারন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অতি দরের ব্যপারে প্রয়োজনে ফু-ওয়াং ফুডকে ফের নোটিশ পাঠাবো। প্রয়োজনে জরুরি ব্যবস্থা নিবো।

শেয়ার দর বৃদ্ধির একই বিযয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, শেয়ারবাজারের কোনো কোম্পানির শেয়ার দর বাড়লো বা কমলো, সেটা আমাদের বিবেচ্য নয়। আমরা দেখি শেয়ার দর বাড়া বা কমার ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা। সেই হিসেবে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর বাড়ার বিযয়টি আমাদের নজরে রয়েছে।

কোম্পানিটি শেয়ার দর বৃদ্ধির বিযয়টি খতিয়ে দেখছি জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর বাড়ার পেছনে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা। শেয়ারটির দর বাড়ানো ক্ষেত্রে অনিয়ম পাওয়া গেলে, কেবল সেই ক্ষেত্রে কোম্পানির বা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ঈদের পর থেকেই ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর শুধুই বাড়ছে। শেয়ার দর বেড়ে ৩৫ টাকার ওপরে চলে এসেছে। কোনো কারণ বা কোনো পরিকল্পনায় শেয়ার দর এভাবে বেড়েছে তার কারণ জানা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। নিয়ম অনুসারে কোম্পানির কর্মকর্তারা শেয়ার দর বাড়া-কমার পেছনে কাজ করে না জানিয়ে তারা বলছেন, এটা আমরা জানি। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোম্পানির শেয়ার দর বাড়া-কমার তাদের (কর্মকর্তা) অদৃশ্য ছোঁয়া থাকে। তাদের ছোঁয়া ছাড়া কোনো কোম্পানির শেয়ার দর লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে যায় না। কারণ তারাই জানেন কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য। যেসব তথ্য শেয়ার বাড়া-কমার ক্ষেত্রে জাদুকরি ভূমিকা রাখে। তাই শেয়ার দর বাড়ার জাদুকরি প্রতিষ্ঠান ফু-ওয়াং ফুডের প্রতি বিশেষ নজর দিতে পুঁজিবাজার রেগুরেটরকে অনুরোধ রাখেন তারা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গতকাল রবিবার ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর দাঁড়ায় ৩৫ টাকা ২০ পয়সা। এর আগে ২ জুলাই কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২৩ টাকা ৫০ পয়সা। ৭ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৪৯ দশমিক ৭৯ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ১১ কোটি ৮ লাখ ৩৯ হাজার ২৮৪টি। সেই হিসাবে গতকাল কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজার মূল্যে হয়েছে ৩৯০ কোটি ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৭৯৬ টাকা। গত ২ জুলাই শেয়ারের বাজার মূল্যে ছিল ২৬০ কোটি ৪৭ লাখ ২৩ হাজার ১৭৪ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজার মূল্যে বেড়েছে ১২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৯ হাজার ৬২২ টাকা।

ফু-ওয়াং ফুডের মোট শেয়ারের মধ্যে ৮০ দশমিক ২২ শতাংশ ধারন করেছে সাধারন বিনিয়োগকারী। এছাড়া বিদেশি ১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ ধারন করেছে। সেই হিসেবে বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের বাজার মূল্যে বেড়েছে ১১৯ কোটি ৫০ লাখ ১৯ হাজার ২৮২ টাকা। এ ধরনের বৃদ্ধি কোনো মতে মানতে রাজি নন বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা। তাই শেয়ার দর কমার কারণ জানার জন্য সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।

ফু-ওয়াং ফুডের তৃতীয় কোয়াটারে (জানুয়রি-মার্চ ২০২৩ সাল) শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ পয়সা। তৃতীয় কোয়টারে শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৩ টাকা ৯৬ পয়সা। নগদ প্রবাহ ১২ পয়সা। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১১০ কোটি ৮৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং রিজার্ভ নেগেটিভ ৭৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। শেয়ার সংখ্যা ১১ কোটি ৮ লাখ ৩৯ হাজার ২৮৪টি। কোম্পানিটি মোট শেয়ারের ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক ধারন করেছে।

শেয়ারবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানান বিএসইসি। সেই হিসাবে গতকাল রবিবার ফু-ওয়াং ফুডের (আন-অডিটেড আর্থিক রিপোর্ট) পিই রেশিও দাড়ায় ১৫৫ পয়েন্ট। মানে পিই রেশিও হিসাবে, বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে নেই।

বিজনেস আওয়ার/১০ জুলাই, ২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: