বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ উত্তোলনের অপেক্ষায় থাকা আছিয়া সী ফুডস কর্তৃপক্ষ প্রতারণা করছেন কোম্পানিটির কর্মীদের সঙ্গে। শ্রম আইন পরিপালন না করার মাধ্যমে এমনটি করছেন। যে কোম্পানিটিতে উর্ধ্বতনদেরসহ কর্মচারি-কর্মতাদের গড় বেতনাদি সাড়ে ৭ হাজার টাকা।
২০০৬ সালের শ্রম আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ি, ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) গঠন করা এবং তা কর্মীদের মধ্যে বিতরন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কোম্পানিটির বিগত ৫ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে এ ধরনের ফান্ড গঠনের কোন তথ্য নেই। এর মাধ্যমে আছিয়া সী ফুডস কর্তৃপক্ষ কর্মীদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন।
তবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একই খাতের জেমিনি সী ফুডস ও এপেক্স ফুডস কর্তৃপক্ষ ২০২০-২১ অর্থবছরে শ্রম আইন অুনযায়ি ফান্ড গঠন করে। আর লোকসানের কারনে বীচ হ্যাচারির এ ফান্ড গঠনের সুযোগ ছিল না।
এদিকে ২১৩% রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়া আছিয়া সী ফুডসে অফিসার, স্টাফ ও শ্রমিকদের পেছনে ব্যয় কমে এসেছে। অথচ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। যে কোম্পানিটিতে উর্ধ্বতনদেরসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গড় বেতন মাত্র সাড়ে ৭ হাজার টাকা। যা দিয়ে বর্তমান বাজারে একজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জীবীকা নির্বাহ করা প্রায় অসম্ভব।
২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৪ কোটি ২ লাখ টাকার মাছ রপ্তানি করার সময় আছিয়া সী ফুডসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেছনে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছিল। যা ২০২০-২১ অর্থবছরে কোম্পানিটির ২১৩% রপ্তানি বেড়ে ১৩৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ক্ষেত্রে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার নিচে নেমে এসেছে।
এই আছিয়া সী ফুডসের ২০২০-২১ অর্থবছরে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিল ১০১ জন। এদের মধ্যে কোম্পানির শীর্ষ ৫ কর্মকর্তা ২০২০-২১ অর্থবছরে পেয়েছেন ২৭ লাখ ৫৬ হাজার ২৫০ টাকা। বাকি ৯৬ জন পেয়েছেন ৮৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৩০ টাকা। যা বিবেচনায় ৯৬ জন গড়ে মাসে পেয়েছেন ৭ হাজার ৫৪৮ টাকা করে।
অথচ বিএসইসিতে ইস্যু ম্যানেজারদের সঙ্গে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ক্যাপিটাল রেইজিং বিভাগের দায়িত্বে থাকা বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছিলেন, প্রসপেক্টাসে যদি মোট বেতনাদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারি দিয়ে ভাগ করে মাসিক গড় ৮-১০ হাজারের নিচে চলে আসে, তাহলে বুঝতে হবে সমস্যা আছে। নিশ্চয় সেখানে কারসাজির আশ্রয় নেওয়া হয়। এসব কোম্পানিকে কমিশন অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দেবে না।
আরও পড়ুন……
ভূয়া সম্পত্তি দেখিয়ে শেয়ারবাজারে আসছে আছিয়া সী ফুডস
শেয়ারবাজারে আসার আগে আছিয়া ফুডসের অস্বাভাবিক আয় বৃদ্ধি
এদিকে প্রসপেক্টাসের ১৯২ ও ১৯৩ পৃষ্টায়, ট্রেড ক্রেডিটরস বা পাওনাদার সিডিউলে ২০২০ সালের ৩০ জুন কোন বকেয়া ছিল না বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া ১৯৪ পৃষ্টায় লায়াবিলিটিজ ফর এক্সপেন্সেও ২০২০ সালের ৩০ জুন দায় নেই দেখানো হয়েছে। কিন্তু নোট ১৪ অনুযায়ি ২০২০ সালের ৩০ জুন ট্রেড ক্রেডিটরস ছিল ৪৯ লাখ ৫৬ হাজার ২৪২ টাকা এবং নোট ১৪.০২ অনুযায়ি লায়াবিলিটিজ ফর এক্সপেন্স ছিল ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ২৮১ টাকা।
কোম্পানি আইনের ১৩৫ ধারা অনুযায়ি ২১১ পৃষ্টায় বিগত ৫ বছরের লভ্যাংশের তথ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রদত্ত ২ কোটি ৩ লাখ ২৩ হাজার ৯৪০ টাকার বোনাস শেয়ার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু ৭ পৃষ্টা অনুযায়ি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮০ লাখ ৬৮ হাজার ৪০০ টাকার বোনাস শেয়ার দিলেও সেই তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তার (সিএফও) সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ইস্যু ম্যানেজার এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের সচিব মো. ওলিউর রহমান ভালো বলতে পারবেন। পরে ওলিউর রহমানকে ফোন দিলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে মিডিয়ায় কথা বলার জন্য আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত না।
বিজনেস আওয়ার/১৯ জুন, ২০২২/আরএ